Cvoice24.com


বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসে বায়েজিদ লিংক রোডে!

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২৩ অক্টোবর ২০২০
বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসে বায়েজিদ লিংক রোডে!

কয়েকদিন ধরে অব্যাহত বৃষ্টিতে বায়েজিদ লিংক রোডের দুপাশের পাহাড় ধসে পড়ছে। বৃষ্টি হলেই এ এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে জীববৈচিত্র্য যেমন হুমকির মুখে পড়ছে তেমন-ই আতংক অনুভব করছেন লিংক রোড হয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ।

পাহাড় উজাড়ের কারণেই এ লিংক রোডের দুপাশের পাহাড় ধস বলছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, বায়েজিদ ফৌজদারহাট লিংক রোড নির্মাণ করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নিজেরাই ছোট-বড় ১৮ টি পাহাড় কেটেছেন। ২৬ ডিগ্রি করে এসব পাড়াড় কাটার অনুমতি থাকলেও কাটা হয়েছে ৯০ ডিগ্রি কোণে। যেটা পুরোপুরিভাবে কাটিং ম্যানেজমেন্ট প্লানেরই লঙ্ঘন করেছে সিডিএ। যেই সময়ে ওই পাহাড় কেটে এ লিংক রোড তৈরি করেছিল সিডিএ তখন চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন আবদুচ ছালাম। মূলত তার আগ্রহেই এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। 

সিডিএ ছাড়াও বায়েজিদ- ফৌজদারহাট লিংক রোডের দুপাশের পাহাড় কেটেছে ভূমিদস্যুরা। এদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে পুলিশের লোকজনও রয়েছে। যারা এখনো পর্যন্ত বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের দুপাশের কোনো না কোনো পাহাড় কাটছে। এমন চিত্র সেখানে প্রায়ই দেখা যায়।

এদিকে সিডিএর বানানো এ সড়কটি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে মিলিত হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের অন্যান্য সড়কের চাপ কমাতেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই এ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের গাইডলাইন পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করেনি সিডিএ। গাইডলাইন অনুসরণ না করে সিডিএ সড়ক নির্মাণের কথাটি বলছেন খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছয় কিলোমিটার রাস্তার দুপাশেই পাহাড় কাটার চিহ্ন। কোনো রকম পরিকল্পনা ছাড়াই পাহাড়গুলো কাটা হয়েছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা। ইতিমধ্যে এমন দুর্ঘটনা অনেক ঘটেছে এ ছয় কিলোমিটার রাস্তার দুপাশের এলাকাতে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড় কাটার ফলেই সম্প্রতি পাহাড় ধস ঘটনা বাড়ছেই। পাহাড় ধসে ছিন্নমূল মানুষের মৃত্যুও হতে পারে ওই এলাকায়। বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশরও।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ছয় কিলোমিটার এ বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের এক পাশে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং বহিঃসীমা দিয়ে লুপরোড নির্মাণসহ ট্রাংক রোড হতে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষকে (সিডিএ) গত জানুয়ারিতে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রকল্পটি শুরুর আগে সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে এ সড়ক নির্মাণে আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড়, টিলা ও মাটি কাটার প্রয়োজন হতে পারে বলে নির্ধারণ করা হয়। আর এ নির্দেশনা মানার শর্তে সিডিএকে জাতীয় স্বার্থে সড়কটি নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে জরিমানার আগে সড়কটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০ লাখ ২৮ হাজার ৭০০ ঘনফুট মাটিসহ ১৮টি পাহাড় কাটা হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। অর্থাৎ অনুমোদন-বহির্ভূতভাবে প্রায় আট লাখ ঘনফুট অতিরিক্ত পাহাড় কাটা হয়েছে। সেজন্য সিডিএকে উক্ত ১০ কোটি ৩৮ লাখ  ৬৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এসব বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সিভয়েসকে বলেন, সরকার এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই এ বাইপাস সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সব রকম নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এর সাথে পাহাড় ধসের কোনো সম্পর্ক নেই। পাহাড় দীর্ঘদিন স্থির থাকে না। এটি পাকৃতিক ভাবে সময় সময় ধসে পড়ে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হোসেন সিভয়েসকে বলেন, পাহাড় কাটার ফলে পাহাড় ধসের যে কথাটি আসছে তা সত্য। এ পাহাড় কাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন কাজ করছেন। যাতে করে নতুন করে কেউ পাহাড় না কাটতে পারেন। এছাড়া পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি হলেই মাইকিং করা হয় এবং তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।

সিভয়েস /এসএইচ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়