Cvoice24.com

চট্টগ্রাম বন্দর
বৈরী আবহাওয়ায় ৫ম দিনেও বন্ধ পণ্য খালাস

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৪ অক্টোবর ২০২০
বৈরী আবহাওয়ায় ৫ম দিনেও বন্ধ পণ্য খালাস

বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা দ্বিতীয় দিনের মত বন্ধ রয়েছে বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস। এর আগের তিন দিন নৌযান ধর্মঘটের কারণে পণ্য খলাস বন্ধ ছিল। ফলে টানা পাঁচদিন ধরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে বহির্নোঙরে। তবে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬ টার পর সতর্কতা সংকেত পরিবর্তন হলে পরের দিন থেকে পণ্য খালাস হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এদিকে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস বলছে, শনিবারও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে। পাশাপাশি সাগরও উত্তাল রয়েছে। বৃষ্টিপাতও কমতে পারে।  এদিকে বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় বাড়তি জরিমানা গুনতে হচ্ছে পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে। তবে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ থাকলেও বন্দর জেটিতে জাহাজে কনটেইনার উঠানামা স্বাভাবিক ছিল।

লাইটার জাহাজ তদারককারী প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের যুগ্ম সচিব আতাউল করিম রঞ্জু (অপারেশন) জানান, ধর্মঘট কাটিয়ে শুক্রবার বহির্নোঙর থেকে পণ্য খালাসের জন্য ৪০টি লাইটার জাহাজ যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা ব্যাহত হয়। শনিবারও সতর্কতা সংকেত তিন থাকায় বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়ছে। 

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল (বড় আকারের সমুদ্রগামী জাহাজ) থেকে লাইটার জাহাজগুলো (অভ্যন্তরীণ রুটের ছোট আকারের) জাহাজ বহির্নোঙরে অবস্থানরত মাদার ভেসেল থেকে পণ্য বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয় এবং বন্দর জেটিতেও পণ্য আনা নেওয়ার কাজ করে থাকে। এসব জাহাজ সাগরে যেতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বহির্নোঙ্গরে পণ্যবাহী ৫৪ টি জাহাজ অবস্থান করছে। নৌ-যান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যায় ৪০ টি জাহাজে। এসব জাহাজে ৮,৯৫,৩৪০ মেট্রিক টন পণ্য রয়েছে। 

এর মধ্যে ক্লিংকারবাহী ১০ টি জাহাজে ১,৪৮,২১১ মেট্রিক টন, স্ল্যাগবাহী ১ টি জাহাজে ২৯ হাজার মেট্রিক টন, লাইম স্টোনবাহী ৩ টি জাহাজে ১,০০,৪৬৫ মেট্রিক টন, জিপসামবাহী ১ টি জাহাজে ৪৫,৯০০ মেট্রিক টন, বল ক্লে বাহী ৩ টি জাহাজে ৭,৬৬০ মেট্রিক টন, চিনিবাহী ১ টি জাহাজে ৪৩,১৯০ মেট্রিক টন, স্টোন বাহী ১ টি জাহাজে ১৭০০ মেট্রিক টন কয়েলবাহী ২ টি জাহাজে ৩০,৫৮০ মেট্রিক টন, গমবাহী ৮ টি জাহাজে ২৫৫৮৭৪ টন এবং ১০ টি জাহাজে  বিভিন্ন ২,৩২,৭৬০ টন বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। 

এছাড়া ৩ টি জাহাজ বার্থিংয়ের ১১ টি জাহাজ পণ্য খালাসে নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে বহির্নোঙ্গরে।

অন্যদিকে বন্দরে অলস বসে থাকার কারণে ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার হিসেবে প্রতিদিন ৫৪ টি জাহাজের জন্য প্রায় ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ ডলার জরিমানা গুনতে হচ্ছে শিপিং এজেন্টদের। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নদীপথে নৌ-যান শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে চলা ধর্মঘট তিন দিনের মাথায় প্রত্যাহার করেছিল বৃহস্পতিবার। মালিক-শ্রমিকপক্ষ ও সরকারের সাথে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার পর নৌ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন শ্রমিকরা। 

বৃহস্পিতবার তিন দিনের ক্ষতি বাড়িয়ে নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা দুদিন জরিমানা গুনতেই হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে বইছে ঝড়ো হাওয়া। সাগর উত্তাল রয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অফিস। 

সাধারণত তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি হলে লাইটার জাহাজগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। বহির্নোঙর থেকে পণ্য আনতে যায় না। ড্রাফট বেশি থাকায় বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা মাদার ভেসেলগুলো বন্দর জেটিতে প্রবেশ করতে পারে না। এগুলো বহির্নোঙরে (সাগরে) অবস্থান নিয়ে লাইটারের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার সময় বহির্নোঙরে খোলা পণ্যবাহী জাহাজগুলো থেকে খাদ্যশস্য, সার ও সিমেন্ট, ক্লিংকারসহ বিভিন্ন ধরনের খোলা পণ্য খালাস করা হয় না। এ সময় খালাস করলে বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার ঝুঁকি থাকায় বৈরী আবহাওয়ায় লাইটার জাহাজও চলাচল করে না। তাই এমন পরিস্থিতিতে বহির্নোঙরে সবসময়ই পণ্য খালাসে বিঘ্ন ঘটে। বহির্নোঙরে বিঘ্ন ঘটলেও জেটিতে কনটেইনার উঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে।

-সিভয়েস/এডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়