Cvoice24.com


ট্রাকে না থাকলেও পাড়া-মহল্লার দোকানে টিসিবি'র পণ্য

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৬ অক্টোবর ২০২০
ট্রাকে না থাকলেও পাড়া-মহল্লার দোকানে টিসিবি'র পণ্য

নগরীর ১২টি এলাকায় ট্রাকে করে নিত্যপণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। কিন্তু নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য এ পণ্য হলেও তা যাচ্ছে ঘুরে-ফিরে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে। মুদি ব্যবসায়ীদের চালাকিতে প্রয়োজনীয় পণ্য পাচ্ছেন না বলে দাবি সাধারণ ভোক্তাদের। ফলে ক্রয়ক্ষমতা সমুন্নত রাখার সরকারের চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে।

আকবর শাহ, পাহাড়তলী, হালিশহর, বন্দর ও ইপিজেড থানা এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা গেছে, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার নির্দিষ্ট কিছু দোকানে টিসিবি'র সয়াবিন তেল, চিনি ও ডাল পাওয়া যায়। যেখানে সয়াবিন তেল ৪০০ টাকার পরিবর্তে ৪৪০-৪৬০ টাকায়, চিনি ৫০ টাকার পরিবর্তে ৫৫ টাকায় এবং ডাল ৫০ টাকার পরিবর্তে ৫৮-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

টিসিবি'র ট্রাকে গিয়ে সাধারণ জনগণ পণ্য পাচ্ছে না। দোকানিরা এ পণ্য কিভাবে আনছে জানতে চাইলে দোকানিরা জানান তারা লাইন ধরে পণ্যগুলো কিনে আনে।

পণ্য কেনার বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সিভয়েসের অনুসন্ধানী চোখ পড়ে টিসিবি'র ট্রাকে। গত বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) থেকে আজ রবিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে টিসিবি'র ট্রাক খুঁজে বের করে বিক্রি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি চিহ্নিত কিছু দোকানির সাথে সংযুক্ত হয়ে তাদের ক্রয় কার্যক্রম লক্ষ্য করা হয়। দেখা যায়, দোকানিরা চিরকুট বা সিগন্যালের মাধ্যমে টিসিবি'র ট্রাকে থাকা বিক্রয়কর্মীকে তাদের হিসেব বুঝিয়ে দেয়। লাইন ধরে থাকা ক্রেতাদের সামনে দোকানি ও টিসিবি'র বিক্রয়কর্মীর এ বোঝাপড়া হলেও তারা কিছুই বুঝতে পারেন না। ফলে লাইন ধরেও পণ্য না পাওয়ায় কেউ কেউ হতাশা, আবার কেউ কেউ ক্ষোভ নিয়ে গন্তব্যে ফিরেন। 

হালিশহরের বড়পুল এলাকায় টিসিবি'র ট্রাকের সামনের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য না পাওয়ায় সরোয়ার নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি গালাগাল করতে করতে বলেন, 'হুদাসুন আঁরারে থিয়া গড়াই রাইখ্যে। ইতারা বেচতু আইলে মাল-সামাল পুড়াই না আনিবু না? টশা দেখাইবাল্লাই ইউন গরি লাভ কী? মাইনষ্যরে আপসারাব কষ্ট দিবু আর তলে তলে মাল বেচিব্যু।' (শুধু শুধু আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তারা পণ্য বিক্রি করতে আসলে ওভাবেই তো পণ্য আনবে, তাই না? তামাশা করার জন্য এসব করে কী লাভ? তারা মানুষকে অযথা কষ্ট দিয়ে গোপনভাবে পণ্য বিক্রি করে।')

ট্রাকে পণ্য থাকার পরেও বিক্রি বন্ধ করার কারণ কি জানতে চাইলে টিসিবি'র এক বিক্রয়কর্মী বলেন, 'আমরাতো শুধু এক জায়গায় বিক্রি করি না। আমাদের আরো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতে যেতে হবে। সব এক জায়গাতে বিক্রি করলে অন্য দিকের ক্রেতারাতো পণ্য পাবে না।'

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম টিসিবি কার্যালয়ে কথা বলে জানা যায়, নগরীর ১২টি স্থানে টিসিবি'র ট্রাক পণ্য বিক্রি করে। তবে বিক্রির স্থান সুনির্দিষ্ট নয়। তারা একেক দিন একেক স্থানে ঘুরে ঘুরে পণ্য বিক্রি করে। তবে তারা একই দিন এক স্থানের বিক্রি শেষ করে অন্য স্থানে যান না।

টিসিবি'র পণ্য ক্রয়ের কৌশল সম্পর্কে বিশ্বকলোনী কাঁচাবাজার এলাকার এক দোকানি বলেন, 'আমরা ট্রাকে গিয়ে বা টিসিবি'র বিক্রেতাকে কল করে তেল, ডাল ও চিনির অর্ডার দিই। তাদের আমরা ১০-২০ টাকা বাড়িয়ে দিই। আমরাও খুব সামান্য লাভে ক্রেতাদের কাছে বাজার মূল্যের কমে বিক্রি করি‌।'

এ বিষয়ে কথা বলা হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলের টিসিবি অফিসের প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, 'আমরা যেভাবে ডিস্ট্রিবিউটর (বিতরণকারী) কাছে পণ্য দিই, আমাদের এখানে এরকমের কোনো চালাকি করার সুযোগ থাকে না। তবে দোকানিরা যদি স্পটে গিয়ে বিভিন্ন কৌশলে বিক্রির উদ্দেশ্যে টিসিবি'র পণ্য কিনে, এটা দুঃখজনক। তবে ডিস্ট্রিবিউটরদের আমি সাবধান করে দিবো। যেন তাদের বিক্রয়কর্মী এ ধরনের কোনো কাজে সম্পৃক্ত থাকলে আগামীতে যেন এ ধরনের কোনো কাজে সম্পৃক্ত না থাকে।'

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়