Cvoice24.com


ফ্রান্সের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক ছিন্ন চায় হেফাজত

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ৩০ অক্টোবর ২০২০
ফ্রান্সের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক ছিন্ন চায় হেফাজত

ফ্রান্স সরকারের অর্থায়নে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের পরেও সেদেশের সরকার কার্যকর কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বাংলাদেশকে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তুলেছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ।

শুক্রবার (৩০ সেপ্টম্বর) জুমার পর হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব এক সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান হেফাজত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। একই সাথে তিনি পুরো মুসলিম বিশ্বকে ফ্রান্সের সাথে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নেরও আহ্বান জানান। এছাড়া সরকার যদি ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন না করে দাবি আদায়ে নতুন করে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ারও হুুঁশিয়ারি দেন হেফাজতের শীর্ষ এ নেতা।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ‘ফ্রান্স সরকার কর্তৃক মহানবীর অবমাননা সহ্য করার মতো নয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ হযরত রাসূলূল্লাহ (স.) এর ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন প্রকাশ করে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে চরম আঘাত হেনেছে। এ জন্য ফ্রান্সকে বিশ্ব মুসলিমের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।’

তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সরকারিভাবে ফ্রান্সের সব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করুন। কুটনৈতিক সম্পর্ক বর্জন করুন। জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব এনে এর প্রতিবাদ জানান।’

ওআইসি, আরব লীগসহ মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান হেফাজতের শীর্ষ এ নেতা।

বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মাওলানা তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, দারুল উলুম হাটহাজারীর শিক্ষা পরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাকিম, মহানগর সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা তৈয়ব, হেফাজতের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মুফতি হারুন ইজহার, হেফাজত উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা শওকত, মাওলানা আসাদুল্লাহ।

এদিকে হেফাজতের এ বিক্ষোভ মিছিলকে ঘিরে পুরো থমথমে চট্টগ্রাম নগরীর প্রসিদ্ধ আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের চারপাশ। মসজিদের প্রধান দুই প্রবেশ মুখেই পুলিশসহ  বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাকাপোক্ত অবস্থান। ঘিরে রাখা হয় জামালখান থেকে টেরীবাজার হয়ে নন্দনকানন এলাকা পর্যন্ত।  আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের গেইটে তালা লাগিয়ে দিয়ে দিয়েছেন এক অজানা শঙ্কায়। এই কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিক্ষোভ  চলাকালীন সময়ে অবস্থান নেয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অবশ্য জুমার নামাজের পর শুরু হওয়া হেফাজতের এই বিক্ষোভ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে শেষ হয় অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে।

কিন্তু জুমার নামাজ শেষেই 'আল্লাহ আকবর' বলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শুরু করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের শত শত নেতাকর্মী। এরপর চোখের পলক ফেরাতেই সংগঠনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে আন্দরকিল্লা পুরানো নগর ভবনের সেদিক থেকে প্রায় ২’শ জনের একটি মিছিল সেই বিক্ষোভকে সমর্থন দিয়ে এগিয়ে আসে। এসময় স্লোগানে স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠে চারপাশ। এরপর মসজিদের সামনেই বাংলাদেশের পতাকা এবং নিজেদের সংগঠনের পতাকার সাথে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবাদি স্লোগান দিতে থাকে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। নীল হলুদসহ বিভিন্ন রঙের প্লে কার্ডে লিখা থাকে বিভিন্ন প্রতিবাদী ও ইসলামিক কথন।

এরপর শাহী জুমা মসজিদের সামনে এ বিক্ষোভ চলাকালে টেরীবাজারের দিক থেকে 'আল্লাহু আকবর' স্লোগানে বিক্ষোভের সাথে যুক্ত হয় আরও ১টি মিছিল। প্রায় ২টায় নামাজ শেষ হওয়ার পরপর ১০ মিনিটের মধ্যেই বিক্ষোভে যোগ দেয় হেফাজতে ইসলাম নেতাকর্মীদের ৫টি মিছিল। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ, র‍্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এসময় বিক্ষোভ স্থানের চারপাশে সতর্ক অবস্থান নেয়।

আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জুমার নামাজ পড়তে আসা সাধারণ মুসল্লীদের মধ্যে। এসময় সাধারণ মুসল্লীরা নামাজ শেষ করে দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করেন। অন্যদিকে আন্দরকিল্লার চারপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেক পোস্ট বসিয়ে চলাচল সীমিত করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ সময় চলাচল সাময়িক সীমিত থাকে রহমতগঞ্জ থেকে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদে প্রবেশের একপাশ। একইভাবে চলাচল সীমিত করা হয় পুরাতন সিটি কর্পোরেশনের পাশ ঘেঁষে জামে মসজিদে প্রবেশের একপাশের সড়ক। সীমিত হয় চেরাগী মোড়ের একপাশ সড়কও।

শাহী জামে মসজিদের দিক থেকেই দুপুর ২টা ৪৬ মিনিটে এত সব বাধা ডিঙিয়ে মিছিল শুরু করে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে প্রায় ৩টার দিকে অবস্থান নেয় জামালখান প্রেস ক্লাবের সামনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ওই সময়ে। প্রেস ক্লাবের সামনে শোনা যায় এক একটি 'বিকট' আওয়াজ। এসময় দুপুর ৩টার দিকেই প্রেস ক্লাবের সামনেই পুড়ানো হয় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কুশপুত্তলিকা। পরে ৩টা ১০ মিনিটে মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এই বিক্ষোভ সমাবেশ।

-সিভয়েস/এপি/আরএস

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়