Cvoice24.com


অর্থনৈতিক অঞ্চল : জাহাইজ্যার চর হবে ‘স্বর্ণচর’

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৬ নভেম্বর ২০২০
অর্থনৈতিক অঞ্চল : জাহাইজ্যার চর হবে ‘স্বর্ণচর’

সন্দ্বীপের উত্তর-পশ্চিমাংশে জেগে উঠা চরে এক সময় একটি জাহাজ আটকে যায়। এরপর থেকে সন্দ্বীপের স্থানীয়রা চরটির নাম রাখে জাহাইজ্যার চর (জাহাজের চর)। সময়ের সাথে এ চর মিলে যায় সন্দ্বীপের সঙ্গে। ৪৫ হাজার একরের এ বাড়তি অংশ সন্দ্বীপের সঙ্গে মিশলেও তা ভাগ হয়েছে তিনটি উপজেলায়। এ চরের ১৪ হাজার একর খাস জমির মালিকানায় আছে যেমন সন্দ্বীপ, তেমনি বাকি ৩১ হাজার একর জমির মালিকানা রয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলার। ‍সুখবর হচ্ছে, জাহাইজ্যার চর নামের এ বর্ধিত অংশকে অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে যাচ্ছে সরকার। যদিও মিরসরাইয়ের শিল্প অঞ্চলের বর্ধিতাংশ হিসেবেই সন্দ্বীপের এ ১৪ হাজার একর জমিকে গড়ে তোলা হবে অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল। জাহাইজ্যার চরকে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার খবর পেয়ে স্থানীয়দের অনেকে চরটির নতুন নাম দিয়েছে ‌‌‌‌‌‌‌‌‘স্বর্ণচর’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সন্দ্বীপে এ শিল্পনগরী গড়ে উঠলে ওখানকার জনগণ বেকারত্ব থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবে। স্থানীয়রা চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবে উন্নত হবে। আর্থিকভাবে মানুষ উন্নত হলে সন্দ্বীপের চেহারাও পাল্টে যাবে। তখন সন্দ্বীপে আর কোনো কিছুর অভাব থাকবে না। বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী দেশে আসবেন, ব্যবসা করবেন, থাকবেন। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে। মালদ্বীপ দেশটির আদলে সন্দ্বীপও তখন উন্নত ও রুচিশীল দ্বীপ হয়ে যাবে। 

প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) উপ-নিয়ন্ত্রক সেজুঁতি বড়ুয়া বলেন, ‘প্রকল্পটির চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীর বর্ধিত অংশ হিসেবে এ প্রকল্পের সকল কাজ হবে। তবে প্ল্যানিং (পরিকল্পনা) ও বাজেটিং (বরাদ্দ) সংক্রান্ত বিষয়ে এখনো চুড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’

এ প্রকল্প প্রসঙ্গে সন্দ্বীপের (চট্টগ্রাম-৩) আসনের সাংসদ মাহফুজুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘এটি খুবই সৌভাগ্যের সংবাদ। এটি নিয়ে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। জাহাইজ্যার চরে ইকোনমিক জোন করার জন্য আবেদন ও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শেষ। এমনকি এ প্রকল্পের চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে এখনো কাজ শুরুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমরা জেনেছি, এটিকে মিরসরাই শিল্পাঞ্চলের বর্ধিত অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তাই এ প্রকল্প পরিকল্পনা ও বরাদ্দ নিয়ে কোনো প্রকার জটিলতা থাকবে না।’

বর্ধিত অংশ হিসেবে সন্দ্বীপের কাজ মিরসরাই শিল্প নগরীর কাজের শেষ করে শুরু করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, প্রকল্প দু’টোই একসাথে চলবে। এটির শুধু শুরু হওয়ার অপেক্ষা।’

তবে এ শিল্প নগরী নিয়ে সন্দ্বীপ স্থানীয়দের একাংশ মনে করছেন, এ প্রকল্পটি জাহাইজ্যার চরে না হয়ে সন্দ্বীপের মাঝে হলে ভালো হতো। কেননা জাহাইজ্যার চরে ও তার আশেপাশে কোনো বসতি নেই। এছাড়াও এ চরে যেতে সন্দ্বীপের স্থানীয়দেরও একটি চ্যানেল পারি দিতে হয়। যা নৌকায় পার হতে ৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগে।

একই প্রসঙ্গে স্থানীয়দের সমর্থন দিয়ে সন্দ্বীপ পৌরসভার মেয়র মো. জাফর উল্লাহ সিভয়েসকে বলেন, ‘আসলে জাহাইজ্যার চর এটি সন্দ্বীপের জনবিচ্ছিন্ন একটি এলাকা। ৪৫ হাজার একরের এ চর সন্দ্বীপে হলেও তা তিন ভাগ হয়ে তিন উপজেলায় বন্টন করা হয়েছে। বর্তমানে এ এলাকায় সেনাবাহিনী একটি অস্থায়ী ক্যাম্প আছে। তাই ওখানে স্থানীয়রা যায় না। এজন্য শিল্প নগরীটি যদি সন্দ্বীপের ভিতরে হতো তাহলে খুব ভালো হতো। এখন যেখানে হবে, সে জায়গাটি অনেক দূরে।’ তাছাড়া ওখানে যেতেও বঙ্গোপসাগরের মেঘনা চ্যানেল পার হতে হয়।’

তবে সন্দ্বীপের এ নতুন শিল্প নগরীর অগ্রগতি ও মাঠ পর্যালোচনা প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমার সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রকল্পটির অনুমোদনের বিষয়ে আমরা অফিসিয়ালি কোনো তথ্য এখনো পাইনি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি, অনুমোদন চূড়ান্ত হয়েছে। সন্দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ এ শিল্পাঞ্চল হওয়ার বিষয়ে ভীষণ আশাবাদী। কারণ জাহাজের (জাহাইজ্যার) চর এলাকাটি সম্পূর্ণ খাস জমি। এখানে শিল্পনগরী হলে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা হবে না। তাছাড়া এখানকার স্থানীয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

জাহাজের (জাহাইজ্যার) চর এলাকাটি পর্যটন শিল্পে কোনো অবদান রাখতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি আসলে সম্পূর্ণভাবে বিনিয়োগকারীদের উপর নির্ভর করবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসলে তারাও তাদের কিছু শর্ত দিবে। সে শর্ত অনুযায়ী সরকার তখন সিদ্ধান্ত নিবে। তবে এ বিষয়ে আমার উর্দ্ধতন কমর্কর্তারা ভালো জানবেন।’

কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ব্যবসায়িক উন্নয়নের মাধ্যমে সন্দ্বীপ উপজেলাও লাভবান হবে উল্লেখ করে সন্দ্বীপ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মো. সেলিম সিভয়েসকে বলেন, ‘সন্দ্বীপে শিল্পনগরী গড়ে উঠলে এখানখার জনগণ বেকারত্ব থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবে। স্থানীয়রা চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবে উন্নত হবে। আর্থিকভাবে মানুষ উন্নত হলে সন্দ্বীপের চেহারাও পাল্টে যাবে। তখন সন্দ্বীপে আর কোনো কিছুর অভাব থাকবে না।’

ব্যবসায়িক উন্নয়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চিটাগং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্টিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘সন্দ্বীপে এ ইকোনমিক গড়ে উঠলে দেশ অনেক বেশি লাভবান হবে। বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী দেশে আসবেন, এখানে ব্যবসা করবেন, এখানে থাকবেন। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে। মালদ্বীপ দেশটির আদলে সন্দ্বীপও তখন উন্নত ও রুচিশীল দ্বীপ হয়ে যাবে।’

সিভয়েস/এসবি/এডি

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়