Cvoice24.com


কুমির পুষেই ৪০০ কোটি টাকা আয় !

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৭ নভেম্বর ২০২০
কুমির পুষেই ৪০০ কোটি টাকা আয় !

বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম সীমান্তঘেঁষা ঘুমধুমে কুমির চাষে বিস্ময়কর সাফল্য এসেছে। বাণিজ্যিকভাবে ২০১০ সালে ৫০ টি কুমির নিয়ে এই চাষ শুরু হলেও বর্তমানে ৩ হাজার ৪০০ কুমিরের বাচ্চা রয়েছে। যা পরবর্তীতে বিক্রি করলে ৪০০ কোটি টাকা আয় করার সম্ভাবনা আছে।

আদিম যুগ থেকে বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন শুধু জুম চাষের উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে বান্দরবানবাসী তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  তার জন্য তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমির চাষ করার। বিশেষ করে অন্যান্য দেশগুলোতে কুমির চাষ বর্তমানে অনেক লাভজনক হওয়াতে বান্দরবানবাসী এই ব্যতিক্রমধর্মী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে নিজেদের জীবনের ভাগ্য পরিবর্তনে।

তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমির চাষ করার। কারণ কুমির চাষে দ্বিগুণ লাভবান করা যায় । এছাড়া সঠিক পরিচর্যা ও ঠিকমতো লালন-পালন করা হলে এই কুমির বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। যা নিজের ও এলাকার ভাগ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হিসেবে কাজ করবে।

কুমির চাষের এই খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়াতে বিভিন্ন জেলা উপজেলা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এই কুমির চাষ প্রদর্শনী দেখার জন্য ছুটে আসছে। যা পর্যটন বিকাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

জানা গেছে, পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এলাকায় ২০০৮ সালে ২৫ একর পাহাড়ি জমিতে আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তোলে ‘আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড’ নামে একটি কুমিরের খামার। তবে ২০১০ সালে বাণিজ্যিকভাবে তারা কুমিরের চাষ শুরু। প্রথম দফায় অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে ৫০টি অস্ট্রেলীয় প্রজাতির কুমির আমদানি করে খামারের উন্মুক্ত জলাশয়ে ছাড়া হয়। প্রতিটি কুমির কিনে আনা হয়েছিল তিন লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এর মধ্যে ৪টি কুমির মারা গেলেও সুস্থ রয়েছে ৪৬টি। তার মধ্যে ৩১টি মাদি কুমির, আর ১৫টি পুরুষ। 

একেকটি কুমির প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় লাগে প্রায় ৮-১০ বছর। প্রাপ্তবয়স্ক একেকটি মাদি কুমির ৪০-৮০টি করে ডিম দেয়। এরা ডিম দেয় সাধারণত বর্ষাকালে। ডিম ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে ৮০-৯০ দিনে ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফোটানো হয়। বর্তমানে খামারে বাচ্চাসহ ছোট-বড় কুমিরের সংখ্যা ৩ হাজার ৪০০টি। খামারে উন্মুক্ত জলাশয় ও খাঁচার ভেতরে-দুইভাবেই কুমির রাখা হয়েছে।

বালুখালী টেলিভিশন উপকেন্দ্র থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার ভিতরে ঘুমধুম নামক এলাকায় এই কুমির চাষ শুরু করা হয়। বাংলাদেশের আকিজ গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ধুমধুম এলাকায় এ চাষাবাদ শুরু করে।

পার্বত্য বান্দরবানে গড়ে উঠা কুমিরের ফার্মটি উখিয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বালুখালী টেলিভিশন উপকেন্দ্র থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার ভেতরে ঘুমধুম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মাহমুদ শাহ আলম বলেন, ‌‌আমি টিভিতে বান্দরবানের কুমির চাষ সম্পর্কে শুনেছি, যেহেতু বান্দরবানে বেড়াতে এসেছি তাই বান্দরবানের কুমির চাষ একেবারে পরিদর্শন করে যাচ্ছি। চারিদিকে ঘুরে দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। যদি এটি সম্প্রসারণে আর ভালোভাবে পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে এখান থেকে অনেকাংশে লাভবান হওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ কুমির খামার প্রকল্পের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান আজাদ জানান, বর্তমানে যে কুমিরগুলো রয়েছে তা বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি চলছে। এগুলো বিদেশে রপ্তানি করলে বিপুল পরিমাণ একটি অংশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, প্রথম দিকে দেশীয় আবহাওয়ায় এসব কুমিরদের বাঁচিয়ে রাখা, ডিম পাড়ানো, ডিম সংরক্ষণ এবং তা থেকে বাচ্চা ফুটানো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। কিন্তু বিদেশ থেকে আনা কুমিরগুলো অল্পদিনের মধ্যে আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে উঠে। ডিম দেয় এবং তা থেকে বাচ্চা ফুটানো হয়। কুমিরের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত  চড়া মূল্যে বিক্রি হয় আন্তর্জাতিক বাজারে। ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, স্পেন সহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর অনেক চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি কুমিরের চামড়া ৬/৭’শ ডলার মূল্যে রপ্তানি করা হয়। ২০২০ সাল নাগাদ প্রতি বছর কুমিরের ১ হাজার চামড়াসহ মাংস রপ্তানির টার্গেট নেয়া হয়েছে।
 

বান্দরবান প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়