Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


ধান কাটা শুরু, গুমাই বিলে নবান্নের হাওয়া

প্রকাশিত: ১০:০৫, ৯ নভেম্বর ২০২০
ধান কাটা শুরু, গুমাই বিলে নবান্নের হাওয়া

রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক। ছবি : আজীম অনন

‌‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলো শুয়েছে মাঠের পরে।’- এভাবেই হেমন্তের প্রকৃতির নৈসর্গিক বর্ণনা করেছেন পল্লীকবি জসীম উদ্দীন তাঁর ‘ধান ক্ষেত’ কবিতায়। কবির সেই পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে রাঙ্গুনিয়া গুমাই বিলে। 

চট্টগ্রামের শস্যভান্ডারখ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে চলছে ধান কাটা। মাঠের পাকা ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিলের ফসলের খেতে ধান কাটার ধুম পড়েছে। নবান্নের আগমনিতে কৃষকেরা যেন সুখের সম্রাট।

বাতাসে দোল খাওয়া পাকা ধানের গন্ধে বিমোহিত কৃষক। সোনালী আমনে ভরেছে মাঠ, হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে আজ। চোখে, মুখে নেই ক্লান্তির ছাপ। ধানে ধান লেগে শিন শিন শব্দ মনকে করছে প্রাণবন্ত। পাকা ধানের শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে ধান কেটে চলেছে কৃষক।- এমন দৃশ্য দেখা গেছে রাঙ্গুনিয়া গুমাইবিলে।

গত বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) ২০ কার্তিক থেকে ধান কাটতে শুরু করেছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলের চাষিরা। প্রতি বছর এ উপজেলায় অন্যান্য অঞ্চলের আগে ধান কাটা শুরু হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কুয়াশাময় পাখি ডাকা ভোর কৃষকের দলে দলে মাঠে ছুটে চলাতে হয়ে উঠেছে প্রাণোচ্ছল। রক্তরাঙা সূর্য পূর্ব আকাশে উঁকি দেওয়ার পূর্বে শুরু হয় ফসল কাটার কাজ। চলছে ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি। কেউ কাটছে ধান কেউবা বাঁধছে বোঝা। সেই ধানের বোঝা কৃষক মাথায় নিয়ে আইল বেয়ে উঠে আসছে ফসলি জমি ছেড়ে। ভাজে ভাজে করছে কাটা ধানের স্তুপ। ধান মারাই থেকে শুরু করে ধান ভাঙ্গা ও ঘরে তোলা পর্যন্ত চলে তাদের এ ব্যস্ততা। এ নতুন ধান ঘরে তোলার পর শুরু হয় বাঙালির নবান্ন উৎসব। 

প্রাচীনকাল থেকে নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে কৃষক বাঙালি। কালের বিবর্তনে কিছুটা পরিবর্তন আসলেও ভুলে যায়নি নবান্ন উৎসব পালনের ধরন। কৃষকের ঘরে ভুরিভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয় আত্মীয় স্বজনদের। তৈরি হয়  পিটা পুলি, ভাপা পিটা, দুধ পুলি, পায়েসসহ নানা রসদের খাবার। এ যেন এক আনন্দের ফুলঝুরি। উঠানে পিটা হাতে খেলতে থাকে ছোট কোমলমতিরা। গ্রাম বাংলার এসব ঐতিহ্য, সংস্কৃতির বিবর্তন ঘটলেও অনেকাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, ধানের বাজারমূল্য বেশি থাকায় চাষিদের মনে জেগেছে নতুন আশা। বৃষ্টির কারণে আংশিক ফসল নষ্ট হলেও আশানুরূপ ফলনে চাষিরা আনন্দিত। সোনালি ফসল ঘরে তুলে জমিতে হবে রবিশস্য চাষ।

এদিকে ২০১৮-১৯ সালের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৯০৮ হেক্টর জমি চাষের থাকলেও তা ভেদ করে ১৫ হাজার ৩১০ হেক্টর জমি চাষে উদ্বুদ্ধ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলে ধান কাটতে আসা আরমান হোসেন বলেন, ‘আমি গত ৪ বছর ধরে গুমাইবিলে ধান কাটতে আসি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ভাল ফলন হয়েছে। আমরা যারা ধান কাটার কাজ করতে এসেছি, আশা করি ভাল কিছু অংশ পাব। এ বছর কাজের প্রেসার একটু বেশি।’

জমির মালিক ও চাষী আবু তাহের উৎফুল্ল কণ্ঠে বলেন, ‘৬ কানি ধান চাষ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় ভাল ফলন হয়েছে। ২ কানি সাদা পাঞ্জা ও ৪ কানি ব্রি-৪৯ ধান চাষ করেছি। এবার ধানের বাজারমূল্য বেশি আছে। আশা করি ৫’শ আড়ি ধান পাব, আমার পরিশ্রমেরও ভাল মূল্য পাব।’ 

ধানের বাজার মূল্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘নতুন সাদা পাঞ্জা ধানের দাম আড়ি (১০ কেজি) প্রতি ২৫০ টাকা। পুরান সাদা পাঞ্জা আড়ি প্রতি ৩২০ টাকা করে চলছে। নতুন ব্রি-৪৯ ধান আড়ি প্রতি ২৩০ টাকা ও পুরান ২৯০ টাকা। ব্রি-৫১ ধান নতুন ২৩০ টাকা আড়ি ও পুরান ২৯০ টাকা।

ধান চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ভেদ করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। প্রতিদিন আমাদের টিম মাঠ পরিদর্শনে যাচ্ছি। শুধুমাত্র ধান নয় বিভিন্ন বিদেশি ফল চাষেও আমাদের উপজেলার চাষিরা লাভবান হচ্ছে।’ 

ধানের জাত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় এবার ব্রি ধান ২২, ২৩, ৪৯, ৫১, ৫২, ৭১ ও ৭২ চাষ হয়েছে। নতুন জাত ছিল বিনা ধান ১৬, ১৭ ও ২০ জাতের ধান। তবে ব্রি ধান ৫১, ৫২ বৃষ্টির পানিতে ১৪ দিন পর্যন্ত নষ্ট না হওয়ায় এ ধান চাষে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে স্থানীয়ভাবে কালজিরা, বিন্নি, গেতু ধানও চাষ হয়েছে ২’শ ৬৫ হেক্টর জমিতে।’

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কথা উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, ‘২০১৮-১৯ সালের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৯’শ ৮ হেক্টর জমি চাষের থাকলেও তা ভেদ করে ১৫ হাজার ৩’শ ১০ হেক্টর জমি চাষ হয়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। ফলন বাড়াতে ও কৃষকের কষ্ট লাগব করতে, নতুনভাবে বীজ উৎপানের কাজও শুরু করতে যাচ্ছি।’

রিমন সাখাওয়াত, রাঙ্গুনিয়া থেকে

সর্বশেষ