Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রেলের কেপিআই স্থাপনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১০ নভেম্বর ২০২০
নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রেলের কেপিআই স্থাপনা

সুনশান নীরবতা চারদিক। এ নীরবতাকে পুঁজি করেই রাতে ছিঁচকে অপরাধীদের আড্ডা জমে ওঠে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকাজুড়ে। অবশ্য প্রভাবশালীরা তৎপর থাকে দিনের বেলাতও। রেলওয়ের স্থাপনার আশপাশ গিলে খেয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। 

অন্যদিকে ওই এলাকাজুড়েই রয়েছে রেলওয়ে পাহাড়তলী কারখানা, ডিজেল শপ, জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল রিপেয়ার (জিইআর) শপের মত রেলওয়ের কেপিআই স্থাপনা। সেখানে এসব স্থাপনা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে।  

সম্প্রতি সেখানে বারবার চুরির ঘটনা ঘটলেও টনক নড়েনি দায়িত্বশীলদের। বরঞ্চ দায়ত্বিশীলরা বলছেন, ‘নিরাপত্তা যতটুকু আছে সব ঠিক আছে।’ অথচ অপরাধপ্রবণ এ এলাকার সেসব স্থাপনার সীমানা প্রাচীরের কোথাও কোথাও উধাও কাঁটা তারের বেড়া, প্রাচীর ঘিরেই বেড়ে উঠেছে গাছপালা, স্থাপনার ভেতরে প্রহরা চৌকি (ওয়াচ টাওয়ার) নেই, মনিটরিংয়ের বিশেষ পথও নেই, কোন কোন স্থাপনার পাশ ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। 

এতে সীমানা প্রাচীর টপকিয়ে সহজেই অপরাধীরা একের পর এক করে যাচ্ছে রেলের মাল চুরি। আবার অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের দায়িত্বশীলদের যোগসাজেশেই ঘটে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা। রেলের বগি, ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ট্রেনের পাওয়ার কারের মত শত কোটি টাকার মালামাল সুরক্ষার নামে রাখা হয়েছে সেখানে।

এদিকে ২৫ অক্টোবর থেকে ২৯ ‌অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দিনে ৩ দফা মালামাল চুরির ঘটনা ঘটেছে পাহাড়তলী বাজার সংলগ্ন জিইআর শপে। জিইআর শপ কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা দু’টি পাওয়ার কার থেকে এসময় খোয়া যায় ৬টি ফিডার লাইন কন্ট্রোল প্যানেলের তামার বাসবার, ৪৮টি কানেক্টর-১৫০ আরএম এবং ৩টি আর্থফল্ট রিলেসহ লাখ লাখ টাকার মালামাল। অবশ্য এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাসপেন্ড করা হয়েছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দু’জন সদস্যকে। এরপর সপ্তাহ পার হলেও অবকাঠামোগত কোন ধরনের পরিবর্তন আসেনি সেখানে।

এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হলে সরাসরি কথা বলতে রাজি হয়নি কেউ। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়তলী জিইআর শপের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের সীমানা প্রাচীর। এ দু’দিকের সীমানা প্রাচীরের কাঁটা তারের বেড়া উধাও হয়ে গেছে। তাছাড়া উত্তর ও পশ্চিমপাশে সীমানাপ্রাচীরে কাঁটা তারের বেড়া থাকলেও সেগুলো মেরামত জরুরি। 

অন্যদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, জিইআর শপের প্রধান প্রবেশ মুখের বাম পাশে সীমানা প্রাচীরের সাথেই গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ৫টি দোকান। অথচ কেপিআই নীতিমালা-২০১৩ তে বলা হয়েছে, ‘বিশেষ শ্রেণির কেপিআই স্থাপনা চতুর্দিকে সীমানা দেয়ালের ভিতরে ও বাইরে ১.৭ মিটারের (৫ ফুটের) মধ্যে অবস্থিত গাছপালা কেটে পরিষ্কারসহ বৈদ্যুতিক লাইট, পোস্ট ও টেলিফোন পোস্ট (যদি থাকে) সরিয়ে নিতে হবে।’ 

কিন্তু জিইআর শপের আশপাশে গাছপালা তো আছেই সাথে রয়েছে অবৈধ স্থাপনাও। কেপিআই নীতিমালা অনুসারে সেখানে সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন ২০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন প্রহরা চৌকি করার কথা থাকলেও করা হয়নি একটিও। 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, পাহাড়তলী কারখানা, ডিজেল শপ এবং জিইআর শপ এই ৩টি কেপিআই স্থাপনার মধ্যে শুধুমাত্র ২টি প্রহরা চৌকি রয়েছে পাহাড়তলী কারখানায়। বাকিগুলোতে প্রহরা চৌকি নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সেসব স্থাপনার ভেতরে রাতের বেলায় ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে। অনেকদিন ধরে লাইট থাকলেও ঝোপঝাড়-গাছপালা কাটা হয়নি।’ 

এদিকে গত ২৫ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দফা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রেলওয়েতে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। এ বিষয়ে সরাসরি কেউ বক্তব্য দিতে না চাইলেও একে অন্যর ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র সিভয়েসকে জানায়, জিইআর শপের তল্লাশি চৌকিতে সিসিটিভির মনিটর ছিলোনা গত ৩ মাস ধরে। ২৫ অক্টোবর থেকে টানা ৪ দিন চুরির ঘটনার পর ২৯ অক্টোবর বসানো হয় মনিটর। সূত্রটি আরো জানায়, ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় পাওয়ারকারটি সিল করা হয়নি। 

চুরির পর ২২ থেকে ২৫ অক্টোবরের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা হলে সেখানেও শনাক্ত হয়নি কেউ। এতে করে প্রশ্ন উঠেছে খোদ ওই কারখানায় দায়িত্বশীলদের কেউ এ ঘটনার সাথে জড়িত কিনা।

ওই একই স্থানে দ্ধিতীয় দফা চুরি হয় ২৬ অক্টোবর ভোরে। সিসিটিভির ফুটেজের তথ্যানুসারে, সেদিন ভোর ৪টা ৪ মিনিটে বহিরাগতরা পাওয়ারকারে প্রবেশ করে ৫টা ৬ মিনিটে মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরের দফায় চুরি হয় ২৮ তারিখ সন্ধ্যায়। দফায় দফায় রেলওয়ের মালামাল চুরি হওয়ার ঘটনার পর জিইআর শপের তল্লাশি চৌকিতে বসানো হয় সিসিটিভি মনিটর।

যা বলছে রেলওয়ের দায়িত্বশীলরা :
দফায় দফায় চুরির পর সৃষ্ট ধুম্রজাল ও রেলওয়ে কারখানাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে চাইলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, ‘মিডিয়ায় কথা বলার ব্যাপারে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে।’ 

এক প্রশ্নের উত্তরে (জিইআর) শপ সহকারী প্রকৌশলী শেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘তল্লাশি চৌকিতে মনিটর ছিলো না এ কথা আপনাকে কে বলেছে? আর সেখানে মনিটর না থাকলেও বাকি আরও ৩টি জায়গায় মনিটর রয়েছে।’ 

ওই কারখানাটির অবকাঠামোগত সমস্যার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে সীমানা প্রাচীর আছে। আবার কিসের নিরাপত্তা।’ কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলে, ‘চুরির ঘটনাগুলো নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। তখন সব জানতে পারবেন আর মিডিয়ায় কথা বলার ব্যাপারে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

তবে টানা ৪ দিনে টানা তিন দফার চুরির ঘটনাটি ভাবিয়ে তুলেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তাদেরও। তারা বলেন, ‘রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় একের পর এক এমন চুরির ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। যা খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।’ 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, খোদ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সরদার শাহাদাত আলী নিজেই তদন্তের ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখছেন।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক তারেক মোহাম্মদ সামছ তুষার বলেন, ‘এ ঘটনাগুলো নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত প্রতিবেদন হাতে পাবো।’ 

কারখানার আশপাশজুড়ে অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে আমাদের লোক গিয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো বিষয়টি।’ এদিকে জিএম সরদার শাহাদাত আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘স্থাপনাগুলো পরিদর্শন শেষে অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নিব।’

-সিভয়েস/এপি

আসিফ পিনন

সর্বশেষ