Cvoice24.com


বই বিক্রেতার মাথায় হাত, বিকল্প ব্যবসার সন্ধান

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১০ নভেম্বর ২০২০
বই বিক্রেতার মাথায় হাত, বিকল্প ব্যবসার সন্ধান

ছবি: সিভয়েস

করোনা সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী সময় পার করার পর সীমিত আকারে খুলতে খুলতে আবার আগের ব্যস্ততায় ফিরেছে সবকিছু। কিন্তু শিশু-কিশোরদের করোনা থেকে বাঁচাতে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম তথা সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা হয়েছে বই বিমুখ। এর প্রমাণ মিলে বই ও স্টেশনারি সামগ্রীর বিক্রি ব্যবসায় ধস দেখে। ক্ষতি সামলাতে লাইব্রেরি ও স্টেশনারির দোকানিরা তাদের দোকানে রাখছে সুরক্ষাসামগ্রী।

রবিবার (৮ নভেম্বর) নগরীর আন্দরকিল্লা, গোলাম রসুল মার্কেটসহ কর্নেলহাট, সিডিএ মার্কেট, দেওয়ানহাট ও বহদ্দারহাট এলাকার পাড়া-মহল্লার লাইব্রেরি ও স্টেশনারি দোকানে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক ও চাকরির নিয়োগ বইসহ নানা শিক্ষাসামগ্রী নিয়ে গুমোট মুখে বসে আছে বিক্রেতারা। নেই চোখে পড়ার মতো ক্রেতাদের আনাগোনা। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বই ছাড়া লাইব্রেরিগুলোতে নেই বইপ্রেমিদের ভিড়। এমনকি গল্প-কবিতার বইয়ের ক্রেতাও নেই। তবে দোকানির সামনে সাজানো আছে মাস্ক, জীবাণুনাশক তরল, প্রোটেক্টিভ গগলস, গ্লাভস। এসব পণ্যের ক্রেতাও হাতেগোনা।

আন্দরকিল্লার পাঠক বন্ধু লাইব্রেরির পরিদর্শনে দেখা যায়, তিনজন বিক্রয়কর্মী চুপচাপ বসে অলস সময় পার করছে। তাদের চুপচাপ বসে থাকার দৃশ্য দেখে মনে হয়, তাদের কথা বলার শব্দ যেন ফুরিয়ে গেছে‌। লাইব্রেরির শত-শত বই আজ পাঠকহীন। বইয়ের পাশাপাশি খাতা-কলমও রেখেছে লাইব্রেরিটি, যা আগে তারা কখনোই রাখতো না।

লাইব্রেরিটির বিক্রয়কর্মী আশীষ ঘোষ সিভয়েসকে বলেন, ‌‘বেচা-বিক্রি একদমই নেই। করোনার শুরুতে লকডাউনকালীন সময়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো আমাদের প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ছিল। আড়াই মাস পর জুনের ৬/৭ তারিখ দোকান খুলেছি। কিন্তু স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় আমাদের বই বিক্রি একদম বন্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউন তুলে দেয়ার পর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো আমরাও জুনের ৬ তারিখ দোকান খুলি। কিন্তু পুনরায় দোকান চালু করলেও বিক্রিতে আর আগের ধারায় ফিরতে পারিনি। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সংক্রান্ত বই ছাড়া অন্য বই বা শিক্ষা সামগ্রীর বিক্রি নেই বললেই চলে। দোকানে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার খরচ আছে। এই বিক্রিতে সেই টাকাটাও উঠে না।’

আন্দরকিল্লার মডার্ন লাইব্রেরির বিক্রয়কর্মী ছোটন চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘আগের তুলনায় ১ শতাংশও বিক্রি নেই। তবে এবারের নতুন অটোপাশের সিস্টেমের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির বইয়ের বিক্রি বেড়েছে। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল প্রতিষ্ঠান খোলা। বাচ্চাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলেও বিনোদন কেন্দ্রগুলো তো খোলা, ওখানে বাচ্চাদেরকে নিয়ে পরিবার ঘুরতে যাচ্ছে। তখন তো আর সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। আমরা সরকারি মার্কেটে দোকান করছি। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকলেও ভাড়া ঠিকই দিতে হয়েছে। খোলার পর থেকে এখনো পর্যন্ত বেচা-বিক্রি নেই, তবুও তো আমাদেরকে দোকান ভাড়া, ট্যাক্স সব পেমেন্ট করতে হচ্ছে।’

আজগরিয়া লাইব্রেরির এক বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘আমরা তো শুধু বই বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বইয়ের বেচা-কেনা বন্ধ। তাই সংসার খরচ চালাতে মাস্ক, স্যানিটাইজার, সেভলন বিক্রি করছি। প্রথম দিকে এ ব্যবসায় লাভ হলেও এখন আর অতো লাভ নেই। তবুও বসে আছি কিন্তু কেউ কেউ লাইব্রেরি ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। এমনকি ক্ষতি পোষাতে না পেরে কয়েকজন ব্যবসায়িকে এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।

একই দৃশ্য দেখা গেছে নগরীর তিনপুলের মাথায় অবস্থিত গোলাম রসুল মার্কেটের স্টেশনারির দোকানগুলোতেও। তবে এখানের অনেক দোকানে দেখা মেলে কিছুটা ভিন্নতা। এসব স্টেশনারির দোকানে শিক্ষাসামগ্রী ছাড়াও বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে অন্যান্য উপকরণ। এসব উপকরণের মধ্যে রয়েছে করোনা সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার, প্রসাধনী, মধু ইত্যাদি। তবে স্টেশনারি উপকরণের এসব দোকানে অধিকাংশ ক্রেতাই আসছেন শিক্ষাসামগ্রী ছাড়া অন্যান্য উপকরণ কিনতে।

গোলাম রসুল মার্কেটের ন্যাশনাল স্টেশনারির বিক্রয়কর্মী টিসু পালিত সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই আমাদের করুণ অবস্থা। অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোটামুটি চললেও স্টেশনারির ব্যবসায় একদমই ইনকাম নেই। বেচা-বিক্রি একেবারেই বন্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাসামগ্রীও বিক্রি হচ্ছে না। তাই আপাতত কিছু করোনা সুরক্ষাসামগ্রী হলেও দোকানে বিক্রির জন্য রেখেছি। সারাদিনে যা ক্রেতা আসে প্রায় সবই ওসবের। শিক্ষা উপকরণের ক্রেতা আসেই না। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিলে হয়তো শিক্ষাসামগ্রী বিক্রির হার বাড়তে শুরু করবে। আপতত আমরা সেদিকেই তাকিয়ে আছি।’

-সিভয়েস/এসবি/জেআই

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়