Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


শরীয়া আইন বাস্তবায়নে বাবুনগরীর নেতৃত্বে কমিটি

প্রকাশিত: ১৩:৫৬, ১১ নভেম্বর ২০২০
শরীয়া আইন বাস্তবায়নে বাবুনগরীর নেতৃত্বে কমিটি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেখানে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আবার নতুন করে ইসলামি শরীয়া আইন চালু করতে চান হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা। আনুষ্ঠানিকভাবে এই চাওয়াটি হেফাজত ইসলামের না হলেও এর নেপথ্যের কারিগররা কিন্তু হেফাজতের নেতারাই। এর নেতৃত্বেও দেখা মিলছে হেফাজতের বর্তমান শীর্ষ নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীকেও। তবে এই কমিটির নাম দিয়েছে, ‘ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি’।     

২০১৩ সালে হেফাজত যখন ১৩ দফা নিয়ে আলোচনায় আসে দেশজুড়ে তখনও তারা এই শরীয়া আইন চালুর দাবি জানিয়ে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছিল। তবে মাঝের বেশ কয়েক বছর এ বিষয়ে চুপ থাকলেও হেফাজত ইসলামের আমৃত্যু আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর নতুন করে শরীয়াহ আইনের বিষয়টিকে সামনে আনছে। 

চলতি মাসের গত ৯ নভেম্বর ফটিকছড়ির নানুপুর মাদ্রাসায় দুপুরের নামাজের পর হেফাজত নেতারা এক বৈঠকে শরীয়াহ আইন বাস্তবায়নে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে পুরানো কমিটি ভেঙে নতুন করে একটি অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়। যারা আগামী সম্মেলনের আগ পর্যন্ত শরীয়া আইন বাস্তবায়নে কাজ করবেন। আর এই কমিটিকে ‘ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি’ নাম দিয়ে এর নেতৃত্বে আছেন হেফাজত ইসলামের বর্তমান শীর্ষ নেতা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।  

বুধবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির উপদেষ্টা ও নাজিরহাট মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা হাবীবুর রহমান কাসেমী এর সত্যতা নিশ্চিত করে সিভয়েসকে বলেন, ‘ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

শরীয়া আইন বাস্তবায়নের জন্যই কি এই কমিটিকে পুর্নগঠন করা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখান। তিনি বলেন, ‘আসলে আমি এখন একটা অনুষ্টানে আছি, আমার সাথে মেহমান আছে। সেকারণে আপনাকে সব কিছু বলতে পারছিনা। পরে সব খোলামেলাভাবে বলব।’

গত ৯ নভেম্বর ফটিকছড়ির নানুপুর মাদ্রাসায় দুপুরের নামাজের পর হেফাজত নেতারা এ সংক্রা্ন্ত একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে ইসলামি আইন বাস্তবায়ন কমিটির সকল উপদেষ্টাগণ ও তাদের প্রেরিত প্রতিনিধিদের সম্মতিতে পৃষ্টপোষক ও আমিরের নির্দেশে বৃহত্তর ফটিকছড়ির অর্ধশত কওমি মাদ্রাসার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আগের কার্যকরি কমিটিসহ সকল উপ কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়া আগামী কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য একটি অস্থায়ী কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। 

ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির হিসেবে রাখা হয়েছে হাটহাজারি মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস ও হেফাজত ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। সেক্রেটারি হিসেবে রাখা হয়েছে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম ও জুনায়েদ বাবুনগরীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত মাওলানা ইয়াহিয়া। 

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে হেফাজত ইসলামের সিনিয়র আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে। যিনি হেফাজত ইসলামের শীর্ষ নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর আপন মামা। এছাড়া উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে, তালীমুদ্দীন মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা হাফেজ কাসেম, হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটির অন্যতম সদস্য আল্লামা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, নাজিরহাট মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা হাবীবুর রহমান কাসেমী, আল মাহাদুল ইসলামী বালক বালিকা মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা মুফতী মাহমুদ হাসান ভুজপুরী, ইমদাদুল ইসলাম বড় মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা আবুবকর সাহেব, কাজিরহাট মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা জালাল, নিচিন্তাপুর মহিলা মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা মাহমুদুল হক, বড় বিল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালেহ জহুরকে। 

কমিটিতে নায়েবে আমির হলেন, মাওলানা আইয়ুব, মাওলানা হাবিবুল্লাহ, মুফতী খালেদ, মাওলানা জুনায়েদ বিন জালাল, মাওলানা জুনায়েদ বিন জালাল, মাওলানা আবু সাঈদ, মাওলানা আব্দুল মতীন, মাওলানা জাফর, মাওলানা ইলিয়াস, মাওলানা আমির উদ্দীন, মাওলানা ওসমান শাহনগরী।       

জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে রাখা হয়েছে, মাওলানা সেলিম দৌলতপুরী, মাওলানা গোলাম রব্বানী ইসলামাবাদী ও মাওলানা ওসমানকে। সহ সেক্রেটারি হিসেবে রাখা হয়েছে, মাওলানা আবু তালেব সাহেব ভুজপুরী, মাওলানা নোমান, মাওলানা আজিজুর রহমানকে।  

সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন, মাওলানা হাবিবুল্লাহ ধর্মপুরী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ শাহ, মুফতী মঈন উদ্দীন বাবুনগরী। দপ্তর সম্পাদক মুফতী আবু মাকনূন মুহাম্মদ বাবুনগরী, সহ দপ্তর সম্পাদক মুফতী শওকত বিন হানিফ, মাওলানা জহুরুল ইসলাম চৌধুরী। অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইসমাঈল, সহ অর্থ সম্পাদক মাওলানা আনাস সোলতানি, প্রচার সম্পাদক মাওলানা নাছির, মাওলানা আফাজ উদ্দীন, মাওলানা আইয়ুব আনসারী। 

২০১৩ সালে যখন হেফাজত ইসলাম আলোচনায় আসে তখনও এই শরীয়াহ আইন নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল হেফাজত। ওই সময়ে হেফাজত ইসলামের যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী ডয়েচ ভেলেকে বলেছিলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম নিজে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তবে হেফাজতে ইসলাম চায় দেশে ইসলামি শাসন কায়েম হোক ৷ বাংলাদেশে একটি মুসলিম রাষ্ট্র, কিন্তু ইসলামি রাষ্ট্র নয়৷ ইসলামি শাসন কায়েমের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আর সেজন্য ইসালামি রাজনৈতিক দলকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে হবে।’
 
ওই সময়ে ১৩ দফা দাবি নিয়ে কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ ইসলামি রাষ্ট্র নয় বলে তারা নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচি দেননি। কিন্তু ইসলামি রাষ্ট্রে নারী নেতৃত্ব থাকতে পারে না। তিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেত্রী যেই হোন না কেন। তাই পুরোপুরি ইসলামের আইন-কানুন চালু করতে হলে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দরকার। হেফাজতে ইসলাম চায় বাংলাদেশ একটি ইসলামি রাষ্ট্র হোক।’

শরীয়া আইন বলতে যা বুঝায়

উইকিপিডিয়া বলছে, শরীয়া বা ইসলামিক আইন বা শরীয়া আইন হচ্ছে ধর্মীয় আইন যা ইসলামিক ঐতিহ্যের একটি অনুষঙ্গ। এটি ইসলাম ধর্মের নিয়ম-কানুন হতে উৎসরিত, প্রধানত কুরান ও হাদিস হতে । আরবিতে, স্রষ্টার অমোঘ স্বর্গীয় আইন বুঝাতে শরীয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয় । শরীয়া শাস্ত্র ও ফিকহ শাস্ত্র পরষ্পর বিপরীত। ফিকহ শাস্ত্র দিয়ে যেখানে সীমিত মানব জ্ঞানে ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখা বিশ্লেষণ করা হয় (যা বিভিন্ন ফিকহ শাস্ত্রবিদদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কিছুটা ভিন্নতা পেতে পারে), সেখানে শরীয়া শাস্ত্র বা আইন হচ্ছে অপরিবর্তনশীল ও অবশ্য পালনীয়। তবে আধুনিক যুগে এর প্রায়োগিক পদ্ধতির কারণে এটি মুসলিম মৌলবাদী তথা গোঁড়াপন্থীদের সাথে আধুনিকতাবাদীদের মতবিরোধের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামিক আইনশাস্ত্রে  চারটি উৎসকে শরীয়ার স্বীকৃত উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো হচ্ছে ধর্মীয় গ্রন্থ কুরান, সুন্নাহ (বিশুদ্ধ হাদিস), কিয়াস (যৌক্তিক সাদৃশ্য) এবং ইজমা (আইনজ্ঞদের ঐক্যমত)। বিভিন্ন মাযহাব (ব্যবহারশাস্ত্র মতবাদ)  যাদের মধ্যে হানাফি, মালিকী, শাফিঈ, হাম্বলী এবং জাফরি মাযহাব প্রসিদ্ধ, শাস্ত্রীয় উৎস সমূহ হতে শরীয়ার আইন নির্ণয়ের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে, তা ইজতিহাদ নামে পরিচিত। প্রথাগত ব্যবহারশাস্ত্র বা ফিকহশাস্ত্রে শরীয়া আইনসমূহকে দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করে থাকে। এ দুটি বিভাগ হচ্ছে ইবাদত (প্রার্থনা) সম্পর্কিত শরীয়া এবং মুয়ামালাত ( সামাজিক সম্পর্ক ও মিথষ্ক্রিয়া) সম্পর্কিত শরীয়া । শরীয়া আইনে কোন কর্ম সংঘটনকে বিচারিক বিশ্লেষণ করতে আইনগত অবস্থার পাশাপাশি  নৈতিক মানদন্ডেও বিবেচনা করা হয় এবং এ কারণে শরীয়তের সিদ্ধান্তসমূহ আবশ্যিক, প্রণোদনামূলক,নিরপেক্ষ,ঘৃণ্য ও নিষিদ্ধ –এই পাঁচ শ্রেণির যে কোন একটির অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এ কারণে, শরীয়া সিদ্ধান্তসমূহের কিছু কিছু ক্ষেত্র পাশ্চাত্যের আইনশাস্ত্রের সিদ্ধান্তসমূহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং অন্যান্য সিদ্ধান্তসমূহ, বিশেষত প্রাত্যহিক জীবনাচার সম্পর্কিত বিষয়গুলো স্রষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

-সিভয়েস/এডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ