Cvoice24.com


মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগ নেতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৯ নভেম্বর ২০২০
মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগ নেতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা

ছবিঃ সিভয়েস

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াসউদ্দিনের ওপর সশস্ত্র হামলার পাশাপাশি তার গাড়িও ভাঙচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। হামলার জন্য নিজ দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গ্রুপকে দায়ী করেছেন গিয়াসের অনুসারীরা। এ ঘটনার পর মীরসরাইয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। 

আহত অবস্থায় গিয়াসকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তার পিঠে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। 

বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ৮টায় মিরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গিয়াসউদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, ‌‘গতরাতে আমার এক কর্মীর ঘরে একটি গ্রুপ সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে সকাল-সকাল আমার লালখান বাজারের বাসা থেকে মিরসরাই রওনা দিই। আমি নিজামপুর কলেজের এলাকায় পৌঁছানোর পরপরই ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ অস্ত্রসহ এসে আমার ওপর অতর্কিত হামলা করে। এতে আমি গুরুতরভাবে আহত হই। এ ঘটনা আমি মিরসরাই থানার ওসিকে জানাই। উনি বললেন- আগে চিকিৎসা নিতে, পরে উনি মামলা নিবেন।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আগের রাতে হামলার শিকার হওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মৎস খামারি আব্দুল আউয়াল তুহিন সিভয়েসকে বলেন, ‘গতকাল (বুধবার দিবাগত রাত) রাত ৩টার দিকে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে একদল সন্ত্রাসী ডোমখালী এলাকায় অবস্থিত আমার মৎস্য প্রকল্পে এসে হত্যার উদ্দেশে আমাকে খোঁজ করতে থাকে, না পেয়ে প্রকল্পে দায়িত্বরত কর্মচারীদের বেঁধে মারধর করে এবং আমাকে সেখানে যাওয়ার জন্য ফোন দিতে বাধ্য করে। আমি ফোন পেয়েও না যাওয়ায় আধঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসী দল আমার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে। এসময় আমার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমি কোনমতে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছি। এরপর বিষয়টি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস ভাইকে জানানোর পর সকাল ৮টায় তিনি আমার বাড়িতে এলে ওঁৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা ওনার গাড়িতেও হামলা করে।’

চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত মীরসরাই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন মোশাররফের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সে সময়কার যুগ্ম সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের সম্পর্কের অবনতি হলে গিয়াস উদ্দিন আর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পাননি। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকেও ছিটকে পড়েন। এরপর থেকে মীরসরাইয়ে আওয়ামী লীগে মোশাররফ এবং গিয়াসের নেতৃত্বে দু’টি পৃথক ধারা সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গিয়াস উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছিলেন। ২১ ভোটে তিনি হারেন মোশাররফের অনুসারী হিসেবে পরিচিত শেখ আতাউর রহমানের কাছে। আগের কমিটির মতো প্রস্তাবিত কমিটিতেও গিয়াস উদ্দিনকে সদস্য পদে রাখা হয়েছে।

গিয়াস উদ্দিনের অনুসারী আব্দুল আউয়াল তুহিন জানান, মীরসরাইয়ের পার্শ্ববর্তী সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী একটা পোস্ট দেন। সেটা আমি একটি কমেন্টস দিয়ে ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাইদুল ইসলাম ও আরশেদুর রহমান লিটুর নেতৃেত্ব বুধবার গভীর রাতে মীরসরাই উপজেলার নিজামপুর এলাকায় তার বাসায় হামলা চালায়। তার মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে গিয়াস উদ্দিন যান তুহিনের বাড়িতে। সকাল ৮টার দিকে সেখান থেকে ফেরার পথে নিজামপুর কলেজের সামনে তার পথরোধ করে ১৫-২০ জন যুবক। তারা অতর্কিতভাবে গিয়াসের পাজেরো গাড়ি ভাঙচুর করে এবং তার ওপর হামলা চালায়। তারা হঠাৎ করে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। একজন দা দিয়ে গিয়াসউদ্দীনেক কোপ দিতে চাইলে তুহিন হাতে ধরে ফেলেন। কয়েকজন এসে তাদের দু’জনকে লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। ১০-১৫ মিনিট পর তারা আবার নিজেরাই চলে যায়। হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগও আছে, যুবলীগও আছে, তারা গিয়াসউদ্দিেনর প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মী বলে জানান তুহিন। 

এই বিষয়ে মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান বলেন, ‘নিজামপুরে একজনের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের খবর শুনেছি। তবে এই বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়