Cvoice24.com


রাঙ্গুনিয়ায় খেজুর গাছ কাটার ধুম

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২১ নভেম্বর ২০২০
রাঙ্গুনিয়ায় খেজুর গাছ কাটার ধুম

খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত রাঙ্গুনিয়ার গাছিরা

শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস আহরণে রাঙ্গুনিয়ার গ্রামে গ্রামে গাছিরা গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। এই হেমন্তে উপজেলার সর্বত্র চলছে খেজুর গাছ কাটার ধুম।

এ গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন। মাত্র আর কয়েক দিন পরই গাছিরা খেজুরের রস বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ করবেন। তৈরি হবে গুড়, পাটালি, পিঠা ও পায়েস। গ্রামীণ জনপদে পড়বে খাওয়ার ধুম। গ্রামীণ জনপদে দানা গুড়, ঝোঁলা গুড় ও নলেন গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ।

অতীতে এখানকার খেজুর রসের বেশ যশ ছিল, বর্তমানে নানা প্রতিক‚ লতায় তা হারাতে বসেছে। গ্রাম বাংলার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক এ খাতে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বর্তমান আর আগের মতো রস, গুড় উৎপাদন হয় না।

শীতের সকাল মানেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস ও নলেন গুড়ের মৌ মৌ গন্ধ। সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে বোঝানো যায় না। আর খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েসতো খুবই মজাদার। এ কারণে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রসের ক্ষীর, পায়েস ও পিঠে খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। যদিও এ দৃশ্য আগরে মতো দেখা যায় দেখা যায় না।

গ্রাম বাংলার প্রায় ঘরে নলেন গুড় পাওয়া যায়। তা আবার চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম। তাই যে রস, গুড় ও পাটালি তৈরি হয় তা নিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমতো শুরু হয়ে যায় কাড়াকাড়ি। ইতোমধ্যে নগরীর লোকজন গ্রামের গাছিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেই দিয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা এলাকা মীরেরখীল গ্রামের মো. মহিউদ্দিন। সেই ছোটবেলা থেকেই খেজুর গাছ কাটার কাজ করেন তিনি। তার বাবা মো. রফিকও এ পেশার সাথে জড়িত। মূলত পৈত্রিক সূত্রে রস সংগ্রহের কাজ করেন মহিউদ্দিন। প্রথমে তার বাবার সাথে কাজ শুরু করেন। বাবার কাছ থেকেই তিনি কাজটি শিখেছেন। বাবার সাথে সাথে কাজ করায় এলাকার গাছি হিসাবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। চলতি বছরে তিন মাসের জন্য মহিউদ্দিনের প্রায় ২০০টি খেজুর গাছ আছে। গাছের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ও লতাপাতা ঝেড়ে ফেলার পরে গাছের বুক চিড়ে সাদা ছাল বের করার কাজ ইতোমধ্যেই শেষ করেছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। 

উপজেলার মীরেরখীল গ্রামের সফল গাছি মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘এ বছর গাছিরা একটু আগে ভাগেই খেজুর গাছ কাটতে শুরু করেছে। সপ্তাখানের মধ্যেই রস সংগ্রহের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। এ বছর প্রায় দু’শর চেয়ে বেশি খেজুর গাছ পেয়েছি। প্রায় গাছ রস সংগ্রহে প্রস্তুত করেছি, আর কিছু বাকি রয়ে তা এই কয়েক দিনে প্রস্তুত করে ফেলবো।’

এই শীতে বাঙালিদের মাধ্যে নলেন গুড়ের ছড়াছড়ি দেখা যায়। খেজুরের রস থেকে তৈরি হয় গুড়। কিভাবে এ গুড় তৈরি হয়- বর্তমান ইয়ং জেনারেশনের অনেকে হয়ত জানেন না। ‘নলেন গুড়’ নামের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এ শব্দের সাথে দ্রাবিড় সভ্যতার যোগ আছে। মনে করা হয়, প্রাচীন দক্ষিণ ভারতে এর ব্যবহার ছিল, কারণ বাংলা-দ্রাবিড় অভিধানে ‘ণরকু’ শব্দের অর্থ হল ছেদন করা বা কাটা। বঙ্গীয় শব্দকোষ অভিধান মতে, নরুন বা নরশনি মানেও ছেদন করা বা কাটা, এক্ষেত্রে নরুন হল গ্রামের নাপিতের ক্ষৌর অস্ত্র। 

শৈশব যেহেতু গ্রামেই কাটিয়েছি সেহেতু কিভাবে গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ করে, তা দেখার সুযোগ হয়েছে। খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে গুড় প্রস্তুতকারীরা প্রথমে দা দিয়ে চেঁছে দেয় তারপর নরুনে ফুটো করে ও তার থেকে রস চুঁইয়ে চুঁইয়ে হাঁড়িতে পড়ে। নরুনে ফুটো করে সেখান থেকে একটা বাঁশের ছিলা লাগিয়ে দেওয়া হয় হাঁড়ি পর্যন্ত। এই পদ্ধতিতেও নল দিয়ে রস চুঁইয়ে পড়া থেকে ‘নলেন গুড়’ নামের উদ্ভব হতে পারে বলে ধরে নেওয়া হয়।

-সিভয়েস/এএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়