Cvoice24.com


ধুলায় ধূসর মাঝিরঘাট, ‘ঘুমিয়ে’ চসিক-পরিবেশ

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ২৪ নভেম্বর ২০২০
ধুলায় ধূসর মাঝিরঘাট, ‘ঘুমিয়ে’ চসিক-পরিবেশ

ছবি: আজীম অনন

যতদূর চোখ যায় যেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক শহর। সবদিকেই ধুলা আর ধুলা। ধুলার কারণে এক হাত দূরেও স্পষ্ট দেখা যায় না। বাসা থেকে বের হতেই ধুলায় ধূসর হয়ে যায় এলাকার বাসিন্দারা। ধুলা উড়িয়ে সড়কজুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় বন্দরকেন্দ্রিক বড় বড় পণ্যবাহী গাড়িগুলো। আর চার পাশজুড়ে উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রকল্প। ধুলার কারণে  ব্যবসা বাণিজ্য গুটিয়ে অনেকে ছেড়েছেন এলাকা। মুদিদোকানসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসায়ীরাই এলাকা ছাড়া হয়েছেন বেশি। শীতের শুষ্ক মৌসুমে পুরোদস্তুর ধুলার রাজ্য। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকা খ্যাত আগ্রাবাদের চিত্র এমনই। সম্প্রতি শীতের আনাগোনা শুরু হতেই ধুলাবালির কারণে ওই এলাকার স্থানীয়রা পড়েছেন মহাবিপাকে। 

এই ধুলা বালির আগ্রাবাদের আশপাশের এলাকা স্ট্র্যান্ড রোড, মাঝিরঘাট এলাকা, পোর্ট কানেকটিং রোড, সল্টগোলা ক্রসিং, বাদামতলী মোড়সহ প্রতিটি এলাকার চিত্র একই। অথচ এসব এলাকার মাঝিরঘাট, ইয়াকুব ঘাট, ইউসুফ ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাট হয়ে কোটি টাকার পণ্য দৈনিক শত শত ট্রাকে পরিবহন হচ্ছে সারাদেশে। সেই সাথে বন্দরের পণ্য পরিবহনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আগ্রাবাদের আশপাশের সড়কগুলো। বন্দর ও বিভিন্ন ঘাট থেকে আমদানির পণ্যবোঝাই লরি ও কাভার্ডভ্যানগুলো চলাচল করে ওই এলাকার যে কোন সড়ক দিয়ে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এসব এলাকায় চলমান জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি, সড়কজুড়ে নিয়ন্ত্রণহীন ভারী গাড়ি চলাচলসহ বেশকিছু কারণ একসাথে যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে এমন বেহাল দশা। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সারাদেশে মালামাল পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি।

চলতি সপ্তাহের দুই দফা সরেজমিনে দেখা যায়, মাঝিরঘাট স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে মাদারবাড়ী পর্যন্ত এলাকা, বাদামতলী মোড়সহ আগ্রাবাদের বেশকিছু অংশে চলছে পানি নিষ্কাশনের জন্য নতুন নালা নির্মাণের কাজ। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় যা বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। 

স্থানীয়দের আক্ষেপ, ওইসব এলাকায় একেতো চলমান প্রকল্পের কাজগুলোর কোন তদারকি নেই। গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকার বিভিন্ন সড়কে সরাসরি রাখা হয়েছে ইট-বালি। তাছাড়া মাঝিরঘাট থেকে মাদারবাড়ী এলাকার বেশকিছু অংশে নালা নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সড়ক থেকে যথাযথভাবে সরানো হয়নি খুঁড়ে রাখা মাটি। সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে পূর্ব মাদারবাড়ী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মাঝিরঘাট রোডের একটি অংশে। 

এদিকে শীত ঢুকতেই তা শুকিয়ে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র ধুলাবালি। সেই সাথে সড়কের দুরবস্থার কারণে কর্মস্থলে যেতে কিংবা কর্মস্থল থেকে ফিরতে স্থানীয়দের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। ভাঙ্গা সড়কে গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। পাশাপাশি বেশ ক্ষুব্ধ যানবাহন চালকরাও।

তদারকি নেই, উল্টো ধুলা ছড়ায় চসিক

সোমবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে ধুলার দাপট থেকে বাঁচতে মাঝিরঘাট সড়কের সামনে একটি অংশে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন দোকানি তারেক। তিনি জানান, এভাবে প্রতিদিন অন্তত ৪ বার পানি ছিটান। তার দোকানটি খাবারের দোকান হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে পানি ছিটাতে হয়। কিন্তু তার আশপাশের দোকানিরা কেউ নিজ নিজ দোকানের সামনে পানি ছিটান না। যদিও নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে পানি ছিটানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। কিন্তু তা মানছেন না অনেকেই। সাথে চসিকের তদারকি নেই– জানালেন বাসিন্দারা।

অথচ ওইদিন ঠিক দুপুর ২টা ৪৯ মিনিটে পুরাতন কাস্টমস রোড এলাকায় দেখা যায়, কোন রকম পানি ছিটানো ছাড়াই সড়কে ঝাঁড়ু দিচ্ছেন চসিকের একদল পরিচ্ছন্নকর্মী। এতে পরিছন্ন হওয়া তো দূরেই থাক উল্টো ধুলার উড়াউড়ি বেড়ে সে পথে হাঁটা চলা হয়ে উঠছে কষ্টসাধ্য। ধুলা বেড়ে ধূসর হয়ে ওঠে চারপাশ। ধুলাবালি নিরসনে সম্প্রতি চসিকের চালু হওয়া ‘সুইপিং কার’ ও ‘পানি ছিটানোর গাড়ি’  এ পর্যন্ত একবারও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ আছে স্থানীয়দের।

যা বলছে চসিক-পরিবেশ
 
চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজগুলোতে একেতো তদারকি নেই। নগরে চালু হওয়া পানি ছিটানোর গাড়িগুলোরও দেখা নেই। সেই সাথে ধুলাবালিতে নিমজ্জিত এলাকাগুলোতে ঝাঁড়ু দেওয়ার সময় পানি ছিটানোর কোন নির্দেশনা আদৌ দেওয়া হয়েছে কিনা এমনটা জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে ফোন কল রিসিভ করেননি চসিক প্রধান নির্বাহী কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। চসিক সূত্রে জানা গেছে সম্প্রতি চালু হওয়া সুইপিং কার ৩টির দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে চসিকের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগকে।

এদিকে সেনাবাহিনী-৩৪ ইসিবি’র প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘আমরা ওখানে কাজটা দ্রুত শেষ করে দিচ্ছি। বেশ কয়েকবার আমরা গিয়ে এটা দেখেছি। যত তাড়াতাড়ি করা যায়, ওইভাবে আমরা দ্রুত শেষ করে দিচ্ছি।’ 

চলতি সপ্তাহের শেষে নবনির্মিত নালার উপর স্ল্যাব ঢালাই শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন-‘স্ল্যাব ঢালাই শেষ হলে সেখানে আর তেমন কোন কাজ থাকবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘মাঝিরঘাটের উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। এ বিষয়ে কেউ অনুমতিও নেননি। যে যার ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছে। তবে আপনি যেহেতু বিষয়টি নজরে এনেছেন, আমরা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

-সিভয়েস/এপি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়