Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


সড়ক-ফুটপাতে হাটার পথ ‘চুরি’, দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ২৫ নভেম্বর ২০২০
সড়ক-ফুটপাতে হাটার পথ ‘চুরি’, দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী

মাত্র ৯ দিনের ব্যবধান। ফুটপাত ও সড়কে মালামাল রেখে দুর্ভোগ সৃষ্টির দায়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) অভিযান চালিয়ে ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ৮১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে জরিমানা গুণেও স্বভাব বদলায়নি ফুটপাত দখলকারীদের। ফের ফুটপাতে রাখা হয়েছে মালামাল, রিকশা-সাইকেলের টিউব ও টায়ার, শতাধিক সাইকেলসহ এসবের যাবতীয় যন্ত্রাংশ। মেরামতের কাজও চলছে সেখানে। 

বুধবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট থেকে অমর চাঁদ রোড, কালী বাড়ী মোড় পর্যন্ত সড়কে এমন চিত্রের দেখা মিলে।

অবৈধ ফুটপাত দখলকারীদের উৎপাত শুধু মাত্র চট্টগ্রাম নগরীর ওই সড়কে নয়। চাকবাজার, আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড, বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার এলাকাসহ প্রায় প্রতিটি এলাকায় চিত্র একই রকম। স্থানীয়দের মধ্যে কথিত আছে কোথাও কোথাও উচ্ছেদের আগে ভাগে ভ্রাম্যমাণ দখলদারদের সর্তক করে দেয় স্থানীয় ফাঁড়ি অথবা থানা পুলিশ। ফলে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালানোর আগ মুহূর্তে ফুটপাত দখল করে রাখা মালামালগুলো সরিয়ে রাখেন দখলদাররা। 

চকবাজার এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর বলেন, ‘কর্পোরেশন (চসিক) গতকাল (২৪ নভেম্বর) চকবাজারের কাঁচাবাজার গলিতে অভিযান চালিয়েছে। অথচ এর একটু আগে একজন পুলিশ এসে বলে গেছে কাউকে না বসতে। মেজিস্ট্রেটরা চলে যাওয়ার পর ওরা  আবার মালসামানা (মালামাল) নিয়ে হাজির।’

এদিকে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রাম নগরীর বেশির ভাগ এলাকায় দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে চসিক। ওই সময়ে চসিকের ভ্রম্যমাণ আদালত যেখানেই গিয়েছে নেওয়া হয়েছে জরিমানা-উচ্ছেদ সহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কোথাও কোথাও গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাকাপোক্ত স্থাপনা। তবুও যেন দমানো সম্ভব হচ্ছে না অবৈধ দখলদারদের। ভ্রাম্যমাণ আদালত এলাকা ছেড়ে আসতেই ফুটপাত ও সড়ক আবারও পুনরায় সরুপে ফিরে আসছে।

এত অভিযান, উচ্ছেদ-জরিমানার পরও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে এবার অনেকটা আক্ষেপের সুর শোনা গেল চসিক প্র্রশাসক সুজনের কন্ঠে। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘বুঝলাম (তারা ফিরে আসছে)। তো আমি কি করতে পারি? আমারে বলেন। এখানে যারা নাগরিক সাধারণ আছে তাদের দায়িত্ব আছে।’ চসিকের নানা সীমাবদ্ধতার বিষয়টি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে পুলিশ-মিলিটারি নাই। আমার কাছে কিছু পরিচ্ছন্নকর্মী আছে। আমি করে (উচ্ছেদ) দিয়ে আসছি। পরবর্তী দায়িত্ব সেখানে যারা থাকে তাদের।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিউমার্কেট সংলগ্ন জুবলী রোড (তিন পুলের মাথা) এলাকার পুরাতন স্টেশন রোড, নিউ মার্কেট থেকে অমর চাঁদ রোড, কালী বাড়ী মোড় পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাতে ফের রাখা হয়েছে মালামাল। অমর চাঁদ থেকে শুরু করে কালী বাড়ী মোড় পর্যফন্ত সড়কের দু’পাশে ছোট ছোট টুলবাক্স নিয়ে বসেছে রিকশা-সাইকেল মেরামতের মিস্ত্রী। ফুটপাত ঘেঁষে সড়কে বসেছে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতারাও। অথচ এ সড়কের আশপাশেই রয়েছে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে শুরু করে রেয়াজউদ্দিন বাজারের মতো পাইকারি মার্কেট। তাই ব্যস্ততম এই মোড়টি ঘিরে হাজারো যানবাহনের যাওয়া আসা। 

উচ্ছেদের মাত্র ৯ দিনের মাথায় এসব ফুটপাত ও সড়ক ফের দখলে চলে যাওয়ায় চরম ভোগান্তি কাটেনি সেখানকার পথচারী-বাসিন্দারা। অমর চাঁদ রোড থেকে কালীবাড়ী মোড় পর্যন্ত ফুটপাত ও সড়কের একপাশ দিয়ে মূলতো চলাচলের উপযুক্ততা নেই। বাধ্য হয়ে সড়কের প্রায় মাঝ অংশকে ফুটপাতের মতো করে ব্যবহার করেন পথচারীরা। তাই সেখানে চলাচলরত যানবাহনে নেমে আসে স্লথগতি। সেই গতির কারণে সৃষ্ট যানজটের প্রভাব এসে পড়ে নিউ মার্কেট মোড় থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত। অন্যদিকে কালীবাড়ী মন্দিরের পর সদরঘাট নিভা হোমিও ক্লিনিক সংলগ্ন মোড়ের আশপাশ জুড়ে সড়ক ও ফুটপাতগুলোতেও দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে মালামাল রাখার ফলে।

অন্যদিকে চকবাজার এলাকা থেকে ফুলতলা এলাকা পর্যটন্ত সড়ক দখল করে বসেছে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতারা। যদিও ভ্যান গাড়িতে করে পসরা সাজিয়ে বসা এসব বিক্রেতারা ছটকে পড়েন ভ্রাম্যমাণ আদালত আসার আগেই। অন্যদিকে কোতোয়ালী থানার এনায়েত বাজার, জুবলী রোড ও চকবাজার থানার চকবাজারের কাঁচাবাজার ফুলতলাসহ এসব এলাকায় গত দু’মাসে অন্তত ৪টি পৃথক অভিযান পরিচালনা করেছে চসিক। সেখানে গিয়েছে চসিক প্রশাসক সুজনের ক্যারাভানও। 

এ বিষয়ে চসিক প্রশাসক সুজন সিভয়েসকে বলেন, ‘নগরীর ফুটপাত ও সড়কগুলো সম্পূর্ণরূপে উদ্ধারে স্থানীয়দের সংঘবদ্ধ হতে হবে। যারা পথে চলাচল করে তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। আমি শুরু থেকে একটি সুন্দর নগর গড়ার চেষ্টা করছি। সুন্দর নগর গড়তে পাশে থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

-সিভয়েস/এপি/এমএম

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়