Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


নাগরিক ভোগান্তি কমাতে এক টেবিলে সব সেবা সংস্থা

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ২৫ নভেম্বর ২০২০
নাগরিক ভোগান্তি কমাতে এক টেবিলে সব সেবা সংস্থা

ধুলাবালি, দখল, দূষণ, জলাবদ্ধতা, যানজট, পাহাড় কাটা, ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানিসহ সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে যেন সমস্যার শেষ নেই। এসব নাগরিক ভোগান্তির লাগাম টানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, পরিবেশ অধিদপ্তর, কেজিডিসিএল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ট্রাফিক বিভাগসহ সকল বিভাগ এক সাথে আলোচনায় বসেছে।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র টাইগার পাস বাটালী হীলের অস্থায়ী অফিসের কনফারেন্স রুমে নগরীর সকল সমন্বয় সভায় মিলিত হয়েছেন সেবা সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সভাপত্বিতে এসময় কর্মকর্তারা নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে অনেকে ক্ষোভও ঝেঁড়েছেন অনেকে।

বৈঠকে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী বলেন, ‘যে কোন উন্নয়ন কাজ করতে পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় তা বিবেচনায় নিতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চলমান কাজের প্রকল্প এলাকায় ধুলাবালি রোধ ও জননিরাপত্তার জন্য ঘেরা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ১ ঘন্টা পর পর পানি ছিটাতে হবে। সচেতন না হলে শুধুমাত্র জরিমানা করে পরিস্থিতি উন্নয়ন ঘটানো যাবে না। ইন্ডাস্ট্রিতে ইটিপি স্থাপন ও কমপ্লায়েন্ট নিশ্চিত করতে হবে অবশ্যই।’ 

তবে এ সভায় অনেকটা ‘হট ইস্যু’ হিসেবেই আলোচনায় এসেছে চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং দ্বিতীয় ঢেউ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বৈঠকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ এর ফলে এখন সংক্রমণ বেড়েছে। গত মাসে দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৫০ এখন তা দৈনিক ১’শ জনে উন্নীত হয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৩’শ, জেনারেল হাসপাতালে ২’শ, ও হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১শ শয্যা প্রস্তুত রাখা আছে। সমস্যা শুধু হাইফ্লো অক্সিজেন সাপ্লায়ের ব্যবস্থা না থাকা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাড়া এই ব্যবস্থা কোথাও নেই। এখন কোভিডে মৃত্যুর হার কমলেও সংক্রমণ বাড়ছে।’

তিনি জনসাধারণের উদাসীনতাকে দায়ী করে জ্বর বা কোন লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে করোনা কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় স্বাস্থ্যের পরিচালক ওয়েস্ট ডিসপোজেবল সতর্ক হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুপারবেগের কারণে শতবাগ মৃত্যুর সম্ভবনা রয়েছে। এতে কোন এন্টিবায়োটিকেও কাজ করবেন না।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, প্রশাসকের বক্তব্যে সমস্যা, সম্ভাবনা সমাধান সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। নগরীবাসী আমাদের ভুল বুঝে সড়ক কাটার কারণে। পানি সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য আমরা সড়ক কাটছি।

এদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র (সিডিএ) চেয়ারম্যান এম. জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আমরা অতীতের সব দূরত্ব ঘুচিয়ে সব শ্রেণী পেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি আউটার রিং রোড এর কাজ সম্পন্ন করা হলো। কবি নজরুল ইসলাম রোড থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ক ৬০ ফুট প্রশস্থ করা হয়েছে। কোথাও ৬০ ফুট না থাকলে প্ল্যানও দেয়া হচ্ছে না।

চসিক প্রশাসক সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম এখন ধুলার নগরী। ওয়াসা ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সড়ক কাটায় ধুলা যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। নগরে যানবাহন থামার নির্দিষ্ট কোন স্টপেজ নাই। অথচ নগরে ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। যে কারণে গুরুত্ব বাড়ছে নগরের।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে তিনমাসের মধ্যে রীতিমত যুদ্ধ করে পোর্ট কানেক্টিং রোডের কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতির চেষ্টা করেছি। এছাড়াও প্রশাসক বায়েজিদ এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধ ও পরিবেশ দূষণ রোধে স্টিল রি-রোলিং মিল গুলোর চিমনির কালো ধোয়া বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের সাথে কোন সেবা সংস্থার দূরত্ব থাকুক তা চাই না। নগরীর উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।’ 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের সঞ্চালনায় সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফলুল্লাহ, স্থানীয় সরকার কমিশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব মুহাম্মদ আবু শাহেদ চৌধুরী, চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম, কেজিডিসিএল’র মহা ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সরওয়ার হোসেন, চসিক প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া আকতার, সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ইমাম হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ’র (ট্রাফিক) উপ পরিচালক জয়নুল আবেদীন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, সড়ক ও জনপথের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর, গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওম প্রকাশ নন্দী, বিআরটিএ’র চট্টগ্রাম ডিভিশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভার আলোচনায় নগরীর যানজট, বিদ্যুৎ, পানি, জলাবদ্ধতা, স্যুয়ারেজ, অবৈধ পাহাড় কাটা, কর্ণফুলীর দুষণ, বিমান বন্দর সড়কে যত্রতত্র কন্টেইনার ইয়ার্ড গড়ে উঠা, নগরে বাস-ট্রাক টার্মিনাল না থাকার কথা উঠে আসে। অনেক আলোচক তাদের আলোচনায় এসব সমস্যা থেকে কিভাবে উত্তোরণ সম্ভব তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

-সিভয়েস/এপি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়