Cvoice24.com


বোলার বাত ডিল ন মারিস—বললেন হেফাজতের আমির

প্রকাশিত: ১৪:৫১, ২৭ নভেম্বর ২০২০
বোলার বাত ডিল ন মারিস—বললেন হেফাজতের আমির

ছবিঃ সিভয়েস

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধীতা করে বক্তব্য দেওয়া হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের কুশপুত্তলিকা দাহ করায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে চট্টগ্রামের ভাষায় হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ‘বোলার বাত ডিল ন মারিস।ওস্তাদেরকে বেইজ্জতি করলে মাদ্রাসার ছাত্ররা বসে থাকতে পারে না।’ 

হাটহাজারীতে মামুনুল হক আসলেও প্রশাসনের অনুরোধে মাহফিলে না এসে ঢাকায় ফিরে গেছেন তিনি। এরপরও দিনভর চট্টগ্রাম মহানগর ও হাটহাজারীতে বিক্ষোভ করে তার ছবিতে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি প্রস্রাব করারও অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই অভিযোগ এনে ক্ষোভ জানিয়ে হেফাজতের আমরি আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ‌‘‌যেখানে অশান্তি সেখানে আমরা নেই। না আসার পরও তার ছবিতে আগুন দেয়ার কারণ কী। একজন আলেমকে এভাবে অপমান করলে আল্লাহর আরশ কাঁপবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে আসবে না। তারপরও এরকম জুলুম নির্যাতন কেন করা হল। প্রশাসনকে বলবো, যারা এসব করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। বোলার বাত ডিল ন মারিস। ওস্তাদেরকে বেইজ্জতি করলে মাদ্রাসার ছাত্ররা বসে থাকতে পারে না।’

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী পৌরসভা সদরের পার্বতী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘তাফসীরুল কুরআন মাহফিল-২০২০’ এ কথা বলেন।

মামুনুল হকের ছবিতে যারা আগুন দিয়েছে তারা নবীর শত্রু  দাবি করে বাবুনগরী বলেন, ‘আপনারা তো ফ্রান্সের ম্যাক্রোর ছবি পোড়াননি। ফেসবুকে একটি ছবি দেখা গেছে, মামুনুলের ছবিতে প্রস্রাব করতেছে কুচক্রী মহল। যারা প্রস্রাব করেছে, তাদের মুখে সিগারেট। হে আল্লাহ তাদের উপর গজব নাজিল করো।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘‌‌আমরা শান্তি চাই। আমরা কোনও সংঘাত চাই না। আমাদের আন্দোলন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে। আজকের মাহফিলে মামুনুল হক সাহেব প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। উনি আসলেও প্রশাসনের অনুরোধে আমরা তাকে মাহফিলে না এনে ঢাকায় ফেরত পাঠিয়েছি। যখন একটি কথা উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে, তাকে যাতে মাহফিলে না রাখা হয়। আমরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলাম, তাকে মাহফিলে আনব না। তবে একথা আমরা বলার আগেই উনার (মামুনুল হক) কাছে এ খবর চলে গেছে। তাই তিনি নিজেও মাহফিলে বক্তব্য রাখতে আগ্রহী নয়। আমরাও যেমন আগ্রহী নয়, এরকম পরিস্থিতিতে মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার জন্য উনিও আগ্রহী নয়। উনি একজন সম্মানী মানুষ, তার সম্মান নিয়ে কেউ কিছু করুক তা আমরা চাই না।’

হেফাজেত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক হাটহাজারী আসলেও ‌প্রশানের অনুরোধে মাহফিলে বক্তব্য না দিয়েই ঢাকায় ফিরে গেছেন। দিনভর টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে সকালে সড়কপথে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আসলেও দুপুর থেকে চট্টগ্রামের পথে পথে ছাত্রলীগ যুবলীগের শত শত নেতাকর্মীর অবস্থানে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ফলে বিকেলের দিকে যে পথে এসেছিলেন সেই পথেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন মামুনুল হক। 

হেফাজতের ঘনিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চট্টগ্রামের যুবলীগ ছাত্রলীগের আন্দোলন, প্রশাসনের চাপে জুমার নামাজের পর বিকেল ৪টার দিকে হাটহাজারী মাদ্রসা থেকে জুনায়েদ বাবুনগরীর নিজ গাড়ীতে করে ফটিকছড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয় মামুনুল হককে। সেখান থেকে তিনি মিরসরাই হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যান।  

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে মামুনল হক বক্তব্য দেওয়ার পর কঠোর সমালোচনা করছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা। সমাবেশ থেকে মামুনুল হক কে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়। পাশাপাশি হাটহাজারীতে উত্তর জেলা ছাত্রলীগও তাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে ছিলেন। 

এদিকে মাহফিলকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। শুক্রবার সকাল থেকে হাটহাজারী পৌরসভা ও এর আশপাশের এলাকায় পুলিশের ২৫টি টিম সহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। চট্টগ্রাম বিমান বন্দরসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে ছিল সিএমপি।

হাটহাজারী পৌরসভা সদরের পার্বতী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গত ২৫ নভেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী ‘তাফসীরুল কুরআন মাহফিল-২০২০’ আয়োজন করেছে ‘আল আমিন সংস্থা’ নামের একটি সংগঠন। প্রতি বছর শীতে সংস্থাটি এই মাহফিলের আয়োজন করে। সংস্থার ব্যানারে হলেও আয়োজকরা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মী ও স্থানীয় আলেমরা এই সংগঠনে রয়েছে। মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা এবং হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের। 

মাওলানা মামুনুল হক সদ্য ঘোষিত হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিবের পদ পেয়েছেন। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানী ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে ধোলাইরপাড়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে তা অবিলম্বে বন্ধের দাবি তোলেন মামুনুল হক। তার ওই বক্তব্যের পর এখন পযন্ত সরকার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ লক্ষ করা যায়নি। তবে জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করছেন।

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়