Cvoice24.com


যে শঙ্কায় ভোট স্থগিত, সেই প্রাণঝুঁকিতে ভোটাররা

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২০
যে শঙ্কায় ভোট স্থগিত, সেই প্রাণঝুঁকিতে ভোটাররা

ছবি: সিভয়েস

সারাবিশ্বের মতো চট্টগ্রামেও এসে পড়েছে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, সঙ্গে মৃত্যুও। তাই জনমনে বাড়ছে শঙ্কা আর উদ্বেগ। এসব বিবেচনায় না নিয়েই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। অথচ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্থগিত করা হয়েছিল এ নির্বাচন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জন্য ভাবা উচিত। অন্যথায় আবারও মরণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ বাড়বে হু হু করে। রয়েছে প্রাণশঙ্কাও। 

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সরকারের হাতে সব রকম সুযোগই আছে। তারা চাইলে নির্বাচন আবারও স্থগিত করতে পারে। তবে এখন বাস্তবতা একটু ভিন্ন। প্রথমে মানুষজন করোনা নিয়ে যে ধরনের আতঙ্কে ছিলে এখন সেটা তেমন নেই। সবাই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে, সব ধরনের কাজ করছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে এগুতে পারে। তবে সরকারের উচিত মানুষের জন্য ভাবা। কারণ রাষ্ট্রের মানুষের সুরক্ষার জন্যই রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন করা হয়। এর পরও নির্বাচন করতে চাইলে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।’

সুজনের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের উচিত হবে জনমানুষের কথা ভেবে ভোটের সময় নির্ধারণ করা। করোনার মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে গিয়ে চট্টগ্রামকে মৃত্যুপুরীতে রূপান্তর করা যাবে না। এ নিয়ে আমরা সুজনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।’

আরও পড়ুন : তর সইছে না রেজাউলের, পরিস্থিতি দেখছেন শাহাদাত

করোনার সংক্রমণ বিবেচনায় নিয়ে ২৯ মার্চের ভোট স্থগিত করা হয় ২১ মার্চে। অথচ চট্টগ্রামে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিলে। এরপর অবশ্য ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। বেড়ে যাওয়ার তালিকায় চট্টগ্রামে একদিনে সর্ব্বোচ ৩২ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসে ৪ শতাংশে নামে। এর মধ্যে অক্টোবরের শেষ দিকে এসে আবারও করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। 

গত ২৮ অক্টোবর দেশে আক্রান্তের মোট ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ ছিল চট্টগ্রামে। ২৯ অক্টোবরে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশে, ৩০ অক্টোবরে ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ, ১ ডিসেম্বরে ১৮ দশমিক ৭১ শতাংশ, ২ ডিসেম্বরে ১৮ দশমিক ৭১ ও ৩ ডিসেম্বরে ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ২৫ হাজার ৮২৫ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩২০ করোনা আক্রান্ত রোগীর। শুরু থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন : ‘মানুষ না থাকলে নির্বাচন করে কি হবে’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) স্থগিত নির্বাচন ঘিরে মাঠের লড়াইয়ে ফের সরব হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। বিভিন্ন দলের সাত মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের মধ্যে। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ থাকলেও কৌশলে মাঠে সক্রিয় আছেন দুজনই।

কর্মী বাহিনীকে চাঙ্গা করে তুলতে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরব চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। করোনা পরিস্থিতি যেমনই হোক, আর নির্বাচন পেছানোর পক্ষে না তিনি। তার দাবি করোনার মধ্যেই যখন জনজীবন স্বাভাবিকভাবে চলছে আর বিভিন্ন নির্বাচন হচ্ছে সেখানে চসিক নির্বাচন কেন স্থগিত থাকবে। আবার হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মাঠ ছাড়েননি নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তাদের তৎপরতায় নগরীতে আবারও ফিরেছে নির্বাচনী আমেজ।  

স্থগিত নির্বাচনে ভোটের আভাস ও নিজের প্রস্তুতি নিয়ে এম রেজাউল করিম চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছি। নৌকাকে জয়ী করতে দলের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে সভা করা হচ্ছে।’ এখন তো করোনার সময়, সামনে যদি সংক্রমণ আরও বাড়ে তখন কী করবেন- জবাবে রেজাউল বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরবাসী সব কিছু করছে। করোনার জন্য তো কোনো কিছু থেমে থাকেনি। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানেও নির্বাচন হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হোক। সামাজিক দূরুত্ব মেনে আমরা ভোটে অংশ নিবো।’ 

আরও পড়ুন : চসিক নির্বাচন নিয়ে কি প্রস্তুতি ইসির

করোনা দিনদিন বাড়ছে চট্টগ্রামে। যখন করোনার সংক্রমণ চট্টগ্রামে পৌঁছেনি তখন কিন্তু চট্টগ্রাম সিটির ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছিল নির্বাচন কমিশন। করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলেও কি নির্বাচন চান? এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজাউল করিম বলেন, ‘করোনার মধ্যেই যখন জনজীবন স্বাভাবিকভাবে চলছে আর বিভিন্ন নির্বাচন হচ্ছে সেখানে চসিক নির্বাচন কেন স্থগিত থাকবে? করোনাকালীন আমি নগরজুড়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছি। এছাড়া মানুষ এখন সচেতন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনও ভোটারদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিবে নিশ্চয়। তাছাড়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে নগরবাসী তাদের সেবা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন, সনদপত্রসহ যাবতীয় কাজ থমকে গেছে। জনদুর্ভেোগ লাগবে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হোক।’ 

করোনার উর্ধ্বমূখী সংক্রমণের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে রেজাউলের তর না সইলেও প্রস্তুতিতে রেজাউলের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাতও ভোটের লড়াইয়ে নিজেকে জানান দিচ্ছেন। ইউনিট পর্যায়ে ছোট ছোট সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা থাকলেও অভিযোগ তুলছেন শত বাধার। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাধা দলের শীর্ষপর্যায় থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে থাকা মামলা। এর মধ্যে প্রার্থী ডা. শাহাদাতের বিরুদ্ধেই মামলা আছে ৫১টি। এসব মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে দিতেই দিন কাটে তাদের। আবার মতবিনিময় সভা করতে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীর। 

নতুন করে ভোটের বিষয়ে মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘জানতে পারছি নির্বাচন কমিশন চসিক নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করবে। তবে করোনার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কেননা আমরা সাধারণ মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করি। এখন করোনার যে অবস্থা সামনে যদি আরও বাড়তে থাকে তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে হবে।’

নগর বিএনপির এই সভাপতি বলেন, ‘আমরা ইউনিট পর্যায়ে সভা-সমাবেশ শুরু করেছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী এবং ওষুধ বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে ছোট ছোট সভার মাধ্যমে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এ বিষয়ে পুলিশ থেকে অবশ্য মৌখিক সম্মতি পাওয়া গেছে। সমস্যা হচ্ছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মতবিনিময় করতে চাইলে অনুমতি লাগে না। আর আমাদের তা নিতে হয়। এ জন্য আমরা সমান সুযোগ পাচ্ছি না। এ ছাড়া শত শত গায়েবি মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই আমাকে নিতে হচ্ছে ভোটের প্রস্তুতি। এর পরও নির্বাচন করতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের নির্বাচনী এজেন্টরাও তৈরি আছেন।’

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলে প্রায় দেড় হাজারের মতো সিট আছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের অক্সিজেন সরবরাহও ভালো। তবে মনে রাখতে হবে, চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় ১ কোটি মানুষের বাস। এ জন্য আমরা যে কোনো সভা-সমাবেশ ও আড্ডা দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করছি। এর মধ্যে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে পরিস্থিতি বেশি খারাপ হতে পারে। তখন হয়তো আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। তাই করোনা পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো প্রকার জমায়েতকে সমর্থন করতে পারি না।’

-সিভয়েস/এসবি/এস/এডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়