Cvoice24.com


‘মানুষ না থাকলে নির্বাচন করে কি হবে’

প্রকাশিত: ১২:০১, ৪ ডিসেম্বর ২০২০
‘মানুষ না থাকলে নির্বাচন করে কি হবে’

ছবি: সিভয়েস

থামেনি করোনার ঢামাডোল। প্রথমটা সামলে উঠার আগেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা। এর মধ্যেই নির্বাচনী পালে ভোটের হাওয়া। এ নিয়ে তাই মিশ্র প্রতিক্রিয়া ভোটারদের মাঝে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে চসিক নির্বাচন- এমন গুঞ্জনের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ভোট দেওয়ার পরিস্থিতি নেই এখন। ফলে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম হতে পারে বলে আশঙ্কা। 

জানুয়ারিতে ভোট নেওয়ার ব্যাপারটা জানতেই অনেকটা বিস্ময় প্রকাশ করে রেয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী টিটু বলেন, ‘কি হন! করোনা তো নো হমে। আবার ভোটের ডেট দ্যিইয়ে না?’ (কি বলেন! করোনা সংক্রমণ তো কমেনি। আবার ভোটের তারিখ দিয়েছে কখন?)। 

বাকলিয়ার গৃহিনী আসমা খাতুন জানান, তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে সাতকানিয়ায় উপজেলায়। কিন্তু ভোটার হয়েছেন সিটি করপোরেশন এলাকায়। করোনার প্রকোপের মধ্যে দূরের পথ পাড়ি দিয়ে ভোট দিতে আসার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না তিনি।

সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন পরিষদকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে চলতি বছর আগস্টের শুরুতে। এরপরই খণ্ডকালীন চসিক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। পরে ৪১ ওয়ার্ডের নাগরিক সনদ, জন্ম-মৃত্যু সনদসহ বিভিন্ন বিষয় দেখভালের জন্য চসিকের তিন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরাসরি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি না থাকায় এতে দেখা যায় নানা জটিলতা। অনেকেই বলছেন, জানুয়ারিতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পারলে এসব ভোগান্তি কেটে যাবে। 

চকবাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হামিদুল্লাহ বলেন, ‘ভোট হয়ে গেলে জটিলতা কাটবে। মানুষ হাটে-বাজারে এমনিতেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখেন না, জরিমানা দিয়েও আটকে রাখা যাচ্ছে না। তাহলে ভোটের কী দোষ? ইলেকশনটা সুষ্ঠুভাব হলেই হলো।’

নগরীর দেওয়ানহাট এলাকার চা দোকানি মাসুদ সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বন্ধ করা হয়। এখনো করোনা রয়ে গেছে। এরমধ্যে যদি আবার নির্বাচন শুরু হয় তাহলে চট্টগ্রামে আবারও করোনা বেড়ে যাবে। নির্বাচনি জনসংযোগের সময় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের জন্য নির্বাচন। যদি মানুষ না থাকে তাহলে নির্বাচন করে কি হবে?’ 

নিউ মার্কেট এলাকার কাপড় দোকানি সামসুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনার এই সময়েও মানুষের মধ্যে স্বাস্থবিধির কোন লক্ষণ নাই। আর এ নিবার্চন দিয়ে কি হবে, এখনকি ভোট হয়, মানুষকি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে? ভোট তো আগের রাতেই হয়ে যায়। আমি নিজে ভোট দিতে পারিনি। ভোট কেন্দ্রে গেলে বলে দেয়, ভোট হয়েছে গেছে, আপনার ভোট দেওয়া হয়েছে। আমার ভোট আমি দিলাম না, আরেক জন দিয়ে দিছে। তাহলে নির্বাচনের নামে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ। তার চাইতে তাদের মনোনীত একজনকে মেয়র করে দিলেই হয়।’ 

নগরীর এক ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভয়েসকে বলেন, ‘আপনি (প্রতিবেদক) নির্বাচনের কথা বলছেন, আমার কাছে হাসি আসতেছে। এখন কি দেশে নির্বাচন হয়, নাকি নির্বাচনের নামে টাকা লুট হয়? নির্বাচন হলেও কি, আর না হলেও কি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাথরঘাটা এলাকার সাজু ধর বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে যাওয়া প্রয়োজন। করোনা সংক্রমণ বাড়ার আগে করতে পারলে ভাল হতো। আর বর্তমান প্রশাসকের ১৮০ দিন মেয়াদ শেষ হলে ভারপ্রাপ্ত কাউকে দায়িত্ব হস্থান্তর করতে হবে। তবে মার্চের মধ্যে নির্বাচন হয়ে গেলে ভাল হবে। অন্যথায় নির্বাচন না করে সরকার মনোনীত প্রার্থীকে  নির্বাচিত করে দেওয়া উত্তম হবে।’

নগরীর সাবেরিয়া এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ সুলতানা বলেন, ‘আগের বার ভোট দিতে গিয়ে দেখি, আমার ভোট অন্যজনে দিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে সারাজীবনের জন্য ভোট দেওয়ার ইচ্ছা চলে গেছে। যাদের নির্বাচিত করার ইচ্ছা তাদের অটোমেটিক করে নিলে ভাল হবে। নির্বাচন দিয়ে শুধু শুধু করোনা সংক্রমণ বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করছি না।’

এবার চসিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত মেয়র প্রার্থী। আর ৪১ সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য কাউন্সিলর পদে ১৬১ এবং ১৪ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৫৬ প্রার্থী লড়ছেন। এই নিবার্চনে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ পুরুষ এবং ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ নারী ভোটার। 

চসিকে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা মোট ৭৩৫টি। আর ভোটকক্ষ ৪ হাজার ৮৮৬টি। এবারের সিটি নির্বাচনে ৭৩৫ প্রিজাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৮৮৬ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৯ হাজার ৭৭২ পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। 

-সিভয়েস/এপি/এএন/আরএস/এস/এডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়