Cvoice24.com

মুজিবকন্যার পদ্মা সেতুর গল্প

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
মুজিবকন্যার পদ্মা সেতুর গল্প

যে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত সে দেশের জাতীয় উন্নয়নও তত দ্রুত হয়। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এটা দেশের বৃহত্তম প্রকল্প এবং নির্মাণ পরবর্তী সময়ে এটা হবে দেশের সর্ববৃহৎ সেতু। উত্তর দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া উপকূল এবং দক্ষিণ দিকে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জাজিরা উপকূল হলো সেতুটির প্রস্তাবিত স্থান। 

সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কি.মি. এবং প্রস্থ ২১.১০ মি.। রেল ও বাস উভয়ই চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে এ পদ্মা সেতু। এটি বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে নির্মিত হবার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে তা সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ সেতুর নির্মাণ কাজের মূল অংশের ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে (জুন-২০২০)-১ নদীশাসনের কাজও শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। সব মিলিয়ে অগ্রগতির পরিমাণ ৮৬ শতাংশ।

পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে ৪২টি পিলারের ওপর, যার মধ্যে ৪১তম স্প্যান বসানো হয়েছে। যার ফলে সেতুটির মূল কাঠামো পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো। সেতুটি তৈরির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড’র আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ নামক একটি কোম্পানি। কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। 

বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রকল্পটির ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪৪,০০০ বর্গ কি. মি. (১৭,০০০ বর্গ মাইল) বা বাংলাদেশের মোট এলাকার ২৯ শতাংশ অঞ্চলজুড়ে ৩ কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। 

সমীক্ষায় আরও বলা হয়, সেতুটির মাধ্যমে আঞ্চলিক বাণিজ্য সমৃদ্ধ হবে, পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচন হবে এবং উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত হবে। দেশের ওই অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব গড়ে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমবে।

আরেক সমীক্ষায়, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) নির্মাণের ফলে দেশের আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে লক্ষণীয় অগ্রগতি হবে। এই সেতু চালু হলে মানুষ ও পণ্য পরিবহনের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে, যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি ও আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে।

পদ্মা সেতু শুধু রড, সিমেন্ট ও পাথরের সেতু নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১৭ কোটি মানুষের আবেগ। চ্যালেঞ্জকে জয় করার অদম্য স্পৃহা এবং আগামীতে দেশের অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনার হাতছানি। 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। একটির পর একটি স্প্যানে এখন দৃশ্যমান সেতুটির পুরোটাই। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে ক্রমেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সেতুর কাজ।

পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য খুলে যাচ্ছে। সেতুকে ঘিরেই মানুষের জীবনযাত্রার মানও বদলাচ্ছে। সেখানে বিশ্বমানের অলিম্পিক ভিলেজ, বেনারসি তাঁতপল্লী, রাজউকের উদ্যোগে আইকন টাওয়ার, দেশের মধ্যে একমাত্র ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমিসহ বড় বড় প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে।

এ পদ্মা সেতুর বাস্তব রূপ পেয়েছে একজন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার জন্য। বিশ্ব নেতৃত্বে শেখ হাসিনা এখন একটি অনুকরণীয় নাম। ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে দুর্যোগ দুর্বিপাক যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসের গভীর আঁধার থেকে দেশের মানুষকে নতুন দিনের সূর্যালোকে নিয়ে আসতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। 

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাপানি অর্থ সহায়ক সংস্থা (জাইকা) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করে। ওই সময়েই ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যার মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণের বীজ বপন করা হয়।

শেখ হাসিনার অদম্য সাহসিকতার ফল এই পদ্মা সেতু। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, সকল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ও দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগকে পেছনে ফেলে ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর যে স্বপ্নের বীজ বুনা হয়েছিল পদ্মার পাড়ে সেই স্বপ্ন এখন একেবারে তীরে ভেড়ার অপেক্ষায়।

ওমর ফারুক হিমেল

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়