Cvoice24.com


নিরুপায় সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ ‘অটো পাসে’

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
নিরুপায় সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ ‘অটো পাসে’

করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত। দেশের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) মূল্যায়নে আনা হয়েছে অটো পাস ব্যবস্থা। এ বছর চট্টগ্রামে এইচএসসি  পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯৭ হাজার ৯০৫ জন। এ বছরের শেষেই এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল  ঘোষণা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অটো পাসে তারা প্রত্যেকে এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট পেতে যাচ্ছে। 

এই মূল্যায়নকে সরকারের নিরুপায় ও সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের শিক্ষাবিদরা। তবে নিঃসন্দেহে 'অটো পাস' ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী উচ্চ শিক্ষায় আসবে নতুন চ্যালেঞ্জ ও বাধা। 

শিক্ষার্থীদের অটো পাসের মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন সিভয়েসকে বলেন,  কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও যেহেতু পরীক্ষা নিতে পারেনি সরকার, এই  বাস্তব কারণে অটো পাস সরকারের একটি নিরুপায় সিদ্ধান্ত। এই পরিস্থিতিতে ভালোমন্দ বিচারের সুযোগ নেই। এই সিদ্ধান্ত অবধারিত, এটি নিতে হবে, নিতে হয়েছে সরকারকে  

তিনি আরো বলেন, 'জটিল পরিস্থিতিতে নানা দিক বিবেচনা করে সাময়িক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এটার জন্য উচ্চ শিক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে না। যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের ক্ষেত্রে সরকার বিকল্প ব্যবস্থা নিবে। তবে এটা সাময়িক, এটার জন্য তেমন কোন প্রভাব পড়বে না।'

অটো পাস সমীকরণে বলা হয়েছে, জেএসসিতে ২৫ শতাংশ এবং এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ওপর ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে। তবে যারা জেএসসিতে অংশগ্রহণ করেনি তাদের ক্ষেত্রে শতভাগ নম্বর এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ওপর নির্ধারণ করা হবে। কেউ আগের দুই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও অতিরিক্ত বিষয়ে ও ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর যুক্ত থাকলে তাদের ক্ষেত্রে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পরিবর্তন হতে পারে। বিষয়ভিত্তিক ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও একই সূত্র অনুসরণ করতে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

শিক্ষাবিদ অনুপম সেন সিভয়েসকে বলেন, এতো শিক্ষার্থী অটো পাস হলেও সবাই উচ্চ শিক্ষা লাভে সুযোগ পাবে না ঠিক, তবে ছাত্রদের জ্ঞানের পরিধিতো বাড়ল; বেকার থাকলেও বাড়বে এটাও তো একটা প্রাপ্তি।  

আমরা ব্রিটিশ শাসনে দেখি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়  বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা চালু করে শিক্ষার আলো সারা বাঙলায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রেও আমাদেরও শিক্ষার আলো ছড়াতে হবে।  

তিনি বলেন, 'বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরীক্ষা নেওয়াতো সম্ভব না এমনকি চাইলেও অনলাইনে সম্ভব  হচ্ছেনা। এই একই বিষয়টা ইউরোপ-আমেরিকাতেও করছে।একটা সিদ্ধান্তে তো সবাইকে আসতে হবে। অনেক জায়গায় অনলাইনে যে মূল্যায়ন করছে সেটা অনেকটা আই ওয়াসের (চোখে ধূলা দেয়া) মতো। আমাদের দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে তারপরেও চাকরির ক্ষেত্র বাড়ছে। নতুন নতুন ইকোনমিক জোন হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ১৯৩০ সালে আমেরিকায় যে 'গ্রেট ডিপ্রেশন' সৃষ্টি হয়েছিল সেসময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফাঙ্কলিং রুজভেল্টও বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য বৃহৎ প্রকল্প নিয়ে ছিলেন। সুতরাং আমার মনে হয় এ পরিস্থিতিতে যা করছে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা ঠিক করছে।'

বিগত কয়েক বছরের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিগত ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা  বোর্ডে এইসএসসি পরীক্ষার পাসের হার ৬২.১৯%, ২০১৮ সালে ৬২.৭৩%, ২০১৭ সালে,  ৬৮.৯১%, ২০১৬ সালে ৬৪.৬০% ছিল। তবে ২০২০ সালে অটো পাসের ফলে শতভাগ উত্তীর্ণ হবে চট্টগ্রামের প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী। দেশের অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডেও একই অবস্থা।  

এ পরিস্থিতে যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশে থাকবে নানা বাধা। সবচেয়ে বড় বাধা হবে স্নাতক সম্মান ভর্তিযুদ্ধে। উচ্চ শিক্ষায় চট্টগ্রামের অন্যতম বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৪ হাজার ৯২৬টি। এছাড়া নগরীর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভূক্ত কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ মাত্র ১৫  হাজার শিক্ষার্থী। এ পরিসংখ্যান বিচারে চট্টগ্রাম বোর্ডের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

শিক্ষাবিদ ড. মহীবুল আজিজ সিভয়েসকে বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো লকডাউনে শিক্ষায় অটো প্রমোশন সঠিক বলে ধরে নিচ্ছে, সেক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থায় যে জায়গায় আছে তাহলে এ সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে করি ' 

তিনি আরো বলেন, অটো পাসে সবাই হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিবে তবে সবাইতো সুযোগ পাবে না। এখানে পরীক্ষা দিয়েই উত্তীর্ণ হতে হবে এবং এটা সবাইকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। ' 

এদিকে, চট্টগ্রাম  কলেজের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী সিভয়েসকে বলেন, আমার জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ রয়েছে। অটো পাসের নিয়মে আমার এইচএসসি ফলাফল কেমনে হবে তা নিয়ে কৌতুহলে আছি। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে। এবছর নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন প্রতিযোগিতা দিতে হবে। 

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে- এইবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনেকটা ছাত্রবান্ধব হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কম হয় মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সিদ্ধান্তে ১৯ টি বিশ্বিবদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হবে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ ৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা পরীক্ষা নিবে। কিন্তু কবে নিবে এ পরীক্ষাগুলো তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।  

চট্টগ্রামে শিক্ষাবোর্ডের তথ্যমতে, ২০২০ সালে মোট এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৭ হাজার ৯০৫ জন। মোট কলেজের সংখ্যা প্রায় ২৭৪ টি। এর মধ্যে মোট ছাত্র ৪৭ হাজার ৮৬৭ জন। ছাত্রী ৫০ হাজার ১৮ জন।  

উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল থেকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়। গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দফায় দফায় সেই বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, যা এখনও চলমান।গত ৭ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, করোনা মহামারির মধ্যে প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসির মতো এবারের এইচএসসি পরীক্ষাও হচ্ছেনা। 

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবারের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা হবে না। এসব শিক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির মূল্যায়ন করা হবে। 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারের এইচএসসি শিক্ষার্থীরা দুটি পাবলিক পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। এদের জেএসসি ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে। যারা এসএসসি পাসের পর এইচএসসিতে (কেউ বিজ্ঞান থেকে বাণিজ্য বা মানবিকে ভর্তি) বিভাগ পরিবর্তন করেছেন, তাদের মূল্যায়নের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি বিভাগ পরিবর্তন করা শিক্ষার্থীদের বিষয়টি ঠিক করবে।

-সিভয়েস/এইচবি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়