Cvoice24.com


নির্দোষ, তবুও অপরাধী মায়ের সাথে কারাবাসে ৬১ শিশু

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০
নির্দোষ, তবুও অপরাধী মায়ের সাথে কারাবাসে ৬১ শিশু

অপরাধী না হয়েও বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে ৫ বছরের নিচে ৬১ জন ছেলে ও মেয়ে শিশু তাদের মায়েদের সাথে বন্দি জীবন যাপন করছে।

শিশু ইয়াসিন (৫)। ফৌজদারি বা দেওয়ানি কোনো অপরাধ করেনি সে। এটুকু বয়সে সে অপরাধ করতেও পারে না। তার বিরুদ্ধে থানা আদালতে কোনো মামলা মোকাদ্দমাও দায়ের হয়নি। এরপরও তার ঠিকানা কারাগারের চার দেয়ালের অন্ধকার কুঠুরিতে। নির্দোষ হওয়া স্বত্ত্বেও ২০১৯ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে সে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দাদীর (মাদকসহ গ্রেপ্তার) সাথে কারাবাস করছে।

শুধু ইয়াসিন নয়, অপরাধী না হয়েও বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে ৫ বছরের নিচে ৬১ জন ছেলে ও মেয়ে শিশু তাদের মায়েদের সাথে বন্দি জীবন যাপন করছে। সচেতন মহল প্রশ্ন রেখে বলছেন, উচ্চ আদালতের রুল জারির পরও শিশু কারাগারে কেন থাকবে? তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা কেন থাকবে না? কেন তাদেরকে প্রবেশনে বের করে শিশুসদন বা শিশু নিবাসগুলোতে স্থানান্তর করা হবে না? 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি এডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘মহিলা রাইটার, হাজতি ও কয়েদীদের মাঝে বেড়ে ওঠায় কারাবাসে থাকা শিশুদের শিশুসুলভ আচরণগুলো লোপ পাচ্ছে। মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কারাগারের ওই পরিবেশ থেকে তাদের সুস্থ পরিবেশে বড় হওয়ার বিকল্প সুযোগ করে দিতে হবে।’

আমরা উন্নত দেশের নানা উদাহরণ দিই; কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুস্থ পরিবেশটা পর্যন্ত দিতে পারি না উল্লেখ করে বাংলাদেশ হিউমেন রাইটস ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান সিভয়েসকে বলেন, ‘বিনাপরাধে শিশু কারাগারে থাকার অর্থ হচ্ছে শিশু অধিকারের চরম লঙ্ঘন। তাদের পক্ষে কর্তৃপক্ষের গ্রহণযোগ্য ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। যদিও সরকারের প্রতিনিধি, বেসরকারি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। কারাগারে থাকা শিশুদের পূনর্বাসন বা অন্ধকার কুঠুরি থেকে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে মুক্তির বিষয়ে তাদের কার্যকর কোন পদক্ষেপে নেই। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশে এ মানসিকতা এখনো গড়ে উঠেনি।’

আদালতসূত্র জানায়, কারাবাসে থাকা শিশু ইয়াসিনের দাদী জোহরা প্রকাশ বর্মানীকে (৫৫) ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি জেলার পটিয়া থেকে দেড় হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ সময় শিশু ইয়াসিন তার দাদীর সাথেই ছিল। নেয়ার মতো কেউ না থাকায় ইয়াসিনকেও হেফাজতে নেয় পুলিশ। এরপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। মামলাটি এখন চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। 

এ আদালতের পিপি আয়ুব খান সিভয়েসকে বলেন, ‘নেয়ার মতো কেউ না থাকলে শিশুর কারাগারে থাকার নিয়ম রয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় বলতে তেমন কিছু নেই।’

শিশু ইয়াসিনের দাদী জোহরার আইনজীবী আবদুল্লাহ হাসান পিকু সিভয়েসকে বলেন, ‘আমার মক্কেল জোহরা তার নাতি ইয়াসিনকে নিয়ে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জামিন পাওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকা স্বত্ত্বেও মিলছে না জামিন। গত ১৩ ডিসেম্বরও জামিন চেয়েছি। আগামী ৭ জানুয়ারিও তারিখ রয়েছে, সেদিনও জামিন প্রার্থনা করবো। দেখা যাক কি হয়।’

কারাগার সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩২০ জন নারী হাজতি ও কয়েদি রয়েছে। এরমধ্যে বেশ কজন নারী কারাগারেই শিশুর জন্ম দিয়েছেন। অনেকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের শিশুকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন। সব মিলেয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে ৫ বছরের নিচে ৬১ জন ছেলে ও মেয়ে শিশু তাদের মায়েদের সাথে রয়েছেন। 

কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা একটি চারতলা ভবনের দুটি ওয়ার্ডে এসব শিশুরা তাদের মায়েদের সাথে থাকছেন। অন্যান্য বন্দীদের চেয়ে তাদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। বিশেষ করে শিশুদের দুধ ও চিনির পাশাপাশি ডিম, কলা ও পাউরুটিও দেয়া হয়। সম্প্রতি এসব শিশু ও তাদের মায়েদের সমাজসেবা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও কারাগার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান সিভয়েসকে বলেন, ‘কারা অভ্যন্তরে থাকা শিশুদের নানান সুযোগ রয়েছে। তাদেরকে বিশেষভাবে দেখভাল করা হয়। সরবরাহ করা হয় প্রযোজনীয় সামগ্রী। একটি ডে কেয়ার সেন্টার রয়েছে। যেখানে অপরাধী মায়েদের সাথে থাকা শিশুরা খেলাধুলা করেন। মায়েদের সাথে খোলা জায়গায় বসে সময় কাটান।’

সিভয়েস/এসএইচ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়