Cvoice24.com


চবি ক্যাম্পাসে বাড়ছে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য, ঝুঁকিতে নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ১১:৪২, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০
চবি ক্যাম্পাসে বাড়ছে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য, ঝুঁকিতে নিরাপত্তা

ছবি : প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। দিনরাত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনাগোনা, অবস্থান লেগেই আছে বহিরাগতদের। ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা যে কোন সময়ে প্রবেশ করছে। দূর-দূরান্ত থেকে এসে ‘মানবিক আবেদন’ জানিয়েও প্রবেশ করছে অনেকেই। শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কম থাকলেও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশে বিভিন্ন পয়েন্টে স্বাভাবিক দিনের মতই বিরাজ করছে লোকারণ্য পরিবেশ। এছাড়াও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে উচ্চ গতিতে বহিরাগতদের মোটরসাইকেল চালনা লক্ষ্য করা গেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় শুরুর দিক থেকেই নানান উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ওইদিন থেকেই আবাসিক হল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ৪ জুলাই থেকে দুই দফায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লকডাউন শুরু হয়। আর গত ২৩ নভেম্বর চবি ক্যাম্পাসে অবস্থানকালীন সময়ে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকায় অযথা ঘোরাঘুরি সীমিত করে রাত সাড়ে আটটার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও উল্লেখ করা হয় সেখানে। এনিয়ে সপ্তাহব্যাপী ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সচেতনামূলক মাইকিংও করা হয়।

তখন রাত সাড়ে আটটার পর খাবার হোটেলও বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। এতে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সংকটেও পড়তে হয়েছিল। কিন্তু এখন কোন নির্দেশনাই মানা হচ্ছে না।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্রই শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বহিরাগত নির্বিশেষে স্বাভাবিক চলাফেরা করছে। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে ও সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা না মেনেই ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করছে সবাই। রাত সাড়ে আটটার পরেও সকল ধরনের দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা গেছে। 

এদিকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পয়েন্টেই বিচরণ করছে বহিরাগতরা। ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট, শহিদ মিনার, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কলার ঝুপড়ি, লেডিস ঝুপড়ি, সেন্ট্রাল ফিল্ড, ফরেস্ট্রিসহ পুরো ক্যাম্পাসই যেন বহিরাগতদের দখলে। আর সপ্তাহের শুক্র ও শনিবারে বাড়ছে বহিরাগতদের বাড়তি চাপ। এদিনগুলোতে পরিবার-পরিজনসহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেখা যায় বহিরাগতদের। মাইক্রোবাস নিয়েও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছে অনেকেই। বিভিন্ন পয়েন্টে উচ্চগতিতে মোটরসাইকেল হাঁকাতেও দেখা গেছে তাদের।

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে হল না খোলার শর্তে বিভিন্ন বিভাগের কয়েকটি বর্ষের অসমাপ্ত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা ইতোমধ্যে শুরুও হয়েছে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছে। তাছাড়া আগে থেকেই বেশকিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে। তবে বহিরাগতদের তুলনায় এই শিক্ষার্থীদের পরিমাণ খুবই কম। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র দেওয়ান তাহমিদ সিভয়েসকে বলেন, করোনার এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উপস্থিতি দুটো ঝুঁকি বাড়ায়। প্রথমত, তাদের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, এই সময়ে ক্যাম্পাসের জনমানুষের সংখ্যা কম থাকায় বহিরাগতরা নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেন কেবল বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট মানুষরাই থাকে সেটি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের যথোপযুক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত বলে মনে করি।

একই শিক্ষাবর্ষে আইন বিভাগের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ফোরকানুল আলম বলেন, পরীক্ষার কারণে এখন ছাত্রীরাও ক্যাম্পাসে এসেছে। কিন্তু ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে শিক্ষার্থীরা এখানে সংখ্যালঘু, বহিরাগতরা অবাধে চলাফেরা করছে- বাইক হাঁকাচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন পিকনিক স্পট। এতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এদিকটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মো. আতিকুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছি, অনেককেই প্রধান গেট থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। তবে আমরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নিরাপত্তা বাহিনী নই। ফলে তাদের প্রতি কঠোর হতে পারিনি। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসে মানবিক আবেদন জানায়। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে, মেনে নিচ্ছি। কিন্তু আমরা কঠোর হওয়ার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় তো শিক্ষার্থীদের জন্যই। তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রক্টরিয়াল বডি, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী আছে। কোন দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিলে শিক্ষার্থীরা যেন আমাদেরকে জানায়। আর আমাদের সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টির পরেও ছাত্রীদের বলবো তারা যেন সচেতনভাবে চলে।

চবি প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়