Cvoice24.com


গানের মাঝে চিরঞ্জীব শেফালী ঘোষ

প্রকাশিত: ১০:২৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০
গানের মাঝে চিরঞ্জীব শেফালী ঘোষ

ছবি : সংগৃহীত

‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি পানিত, লুসাই পাহাড়ত্তুন লামিয়ারে যারগই কর্ণফুলী’ কিংবা ‘সূর্য উডের অভাই লাল মারি/ রইস্যা বন্ধু যারগই আমার বুকে শেল মারি’- চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এমন অসংখ্য গানে কর্ণফুলীপাড়ের দুই তীরের আনন্দ-বেদনার গল্প সুর তুলেছিল শেফালী ঘোষের কণ্ঠে। তিনি মাত্র ৬৫ বছরের জীবদ্দশায় পেয়েছিলেন ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা।

আজ ৩১ ডিসেম্বর। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তী শিল্পী শেফালী ঘোষের ১৪ তম মৃত্যু বার্ষিকী। ২০০৬ সালে বছরের শেষ সূর্যাস্তের সাথে লক্ষ লক্ষ ভক্তকে শোকসাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে গমন করেছেন এ গুণী শিল্পী।

কিংবদন্তী এই শিল্পী দেশের গণ্ডি পেরিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বব্যাপী। তাঁর গানে বিশ্বদরবারে চট্টগ্রামের পরিচয় ঘটে নতুনরূপে। 

শেফালী ঘোষকে আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী বলা হলেও তিনি সুরের মূর্ছনা ছড়িয়েছেন আধুনিক, ফোক এবং ভান্ডারী গানেও। তাঁর সুরেলা কন্ঠে সব ধরণের গান সুর ছড়াতো। তাইতো চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেছেন তিনি। পেয়েছেন সমান জনপ্রিয়তা। সুরের জাদুতে জয় করেছেন লাখ লাখ সংগীতপ্রেমীর হৃদয়।

১৯৬০ সালে গান শেখার জন্য চট্টগ্রাম আসেন তিনি। গান গেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক আশরাফুজ্জামান শেফালী ঘোষ এবং আঞ্চলিক গানের সম্রাট শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবকে ডেকে পাঠালেন। প্রস্তাব দিলেন আঞ্চলিক ভাষায় গান গাইতে। দুজনই রাজি হলেন। শেফালী ঘোষ আর শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের দ্বৈতগান খুবই জনপ্রিয়তা পেল। এরপর থেকে দুটি নাম একই সঙ্গে উচ্চারিত হতো। যেখানে শ্যাম-শেফালী সেখানে সংগীতপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। তাদের অভিনব পরিবেশনার কারণে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান পৌঁছে যায় অনন্যমাত্রায়। গানের সাথে দু’জনের প্রাণবন্ত অভিনয় দর্শকরা পৌঁছে যেতেন আনন্দের সপ্তচূড়ায়। 

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শেফালী ঘোষ স্বাধীনতা সংগ্রামেও অবদান রেখেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতারে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিয়মিত গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন। 
জানা গেছে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তার দুই হাজারেরও বেশি গান রয়েছে। তার গানের অ্যালবামের সংখ্যা প্রায় ১৫০। এছাড়া তিনি ২০টি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন।

তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘মনের বাগানে ফুটিল ফুলরে’, ‘বন্ধু আঁর দুয়ারদ্দি যও’, ‘শঙ্খনদীর মাঝি আঁই তোয়ার লগে রাজি’, ‘সূর্য উডের অভাই লাল মারি’, ‘আঁধার ঘরত রাত হাডাইয়ুম হারে লই’, ‘নাতিন বরই খা’, ‘ও বানু বানুরে’, ‘ভাঙা গাছর নয়া টেইল’, ‘ওরে সাম্পানওয়ালা তুই আমারে করলি দেওয়ানা’ ও ‘পালে কী রং লাগাইলিরে মাঝি’।

শেফালী ঘোষ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। অর্জন করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক পদক (১৯৯০), বাংলা একাডেমির আজীবন সম্মাননা (২০০২), শিল্পকলা একাডেমি পদক (২০০৩) ও একুশে পদকে (২০০৬) মরণোত্তর)।

কিংবদন্তী সংগীত শিল্পী শেফালী ঘোষ ১৯৪১ সালের ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগো পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর লাখ লাখ ভক্ত-শ্রোতাকে শোক সাগরে ভাসিয়ে মৃত্যুবরণ করেন আঞ্চলিক গানের রাণী শেফালী। 

ষাটের দশকে সংগীতানুরাগী ননী গোপাল দত্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের এক ছেলে। নাম ছোটন। পেশায় চাকুরীজীবী। তিনি এক ছেলে ও মেয়ের জনক।

আজ এ মহান শিল্পীর ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর গাওয়া হাজারো গান এখনো তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে কোটি মানুষের মনি কোটায়।

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়