Cvoice24.com


মাদক : অধিদপ্তর আছে, নেই নিয়ন্ত্রণ

প্রকাশিত: ১১:৫২, ৪ জানুয়ারি ২০২১
মাদক : অধিদপ্তর আছে, নেই নিয়ন্ত্রণ

ছবি: ইন্টারনেট।

প্রতিষ্ঠার ৩১ বছর পেরিয়ে ৩২ এ পা রেখেছে। অথচ এখনো সেভাবে গড়ে উঠতে পারেনি; পারেনি মাদকের লাঘাম টেনে ধরতে। উল্টো চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে মাদকের বিস্তার—এ হলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সুনির্দিষ্টভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণের কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত এ সংস্থাটির চেয়েও আইন-শৃঙখলা রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত পুলিশ ও র‌্যাব-ই এ কাজটি বেশি করছেন। ২০২০ সালে যেখানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় ইয়াবা উদ্ধার করেছে ১৪ লাখ ৪১ হাজার ২০৫ পিস। অ্যনদিকে সিএমপি শুধুমাত্র নগরের ১৬ থানা থেকেই ইয়াবা উদ্ধার করেছে ৩৫ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫১ পিস ইয়াবা।    

সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের মাদক নিয়ন্ত্রণসহ আরও অনেক বিষয়ে কাজ করছে এ অধিদপ্তর। যেমন দেশের মাদক সংক্রান্ত অপরাধ দমন, আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ, আইনের প্রয়োগ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পূনর্বাসন নিশ্চিতকরণসহ শিল্পে ব্যবহৃত মাদক সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল বা কেমিক্যাল আমদানির জন্য লাইসেন্স প্রদান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে নিবিড় কর্ম সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নোডাল এজেন্সি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অফিস জানায়, ২০২০ সাল জুড়ে তারা চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ হাজার ৬৪৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে। ৩ হাজার ২৬৬ জন মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করেছে ২ হাজার ৯৮৯টি। উদ্ধার করা হয়েছে ১৪ লাখ ৪১ হাজার ২০৫ পিস ইয়াবা, ৩ গ্রাম গুড়া ইয়াবা, সাড়ে ৯১৫ কেজি গাঁজা, ১টি গাঁজা গাছ, ৩ হাজার ৫৬০ বোতল ফেনসিডিল, ২ লিটার তরল ফেনসিডিল, ১ হাজার ২৩০ বোতল এসকফ, ৮২৯ বোতল বিলাতী মদ, ২ হাজার ৮১১ বোতল বিয়ার, চোলাই মদ ৩ হাজার ৯০১ লিটার, ৪৬৪ লিটার ডিনেচার্ড স্পিরিট, ১ হাজার ২০০ লিটার মিথানল, ৫ হাজার ২৩০ লিটার পচুঁই, ১ হাজার ১৪৮ কেজি মুলি, ২৪ হাজার ৩০৯ লিটার ওয়াস (জাওয়া), ১০ লিটার তাড়ী, ১০৮ পিস শাড়ী, ৫০০ পিস সুপারি ও ৪০ পিস ফয়ের।

এছাড়াও বছরজুড়ে পরিচালিত এসব অভিযান থেকে নগদ ১৪ লাখ ৭ হাজার ৯৩০ টাকা, ১টি এলজি অস্ত্র, ২ রাউন্ড গুলি, ২টি ট্রাক, ৬টি পিকআপ ভ্যান, ৩টি প্রাইভেট কার, ৮টি সিএনজি, ১টি ফিশিং বোর্ড, ১২টি মোটরসাইকেল, ১টি লেগুনা, ১টি অটো, ১টি টমটম ও ৪২টি মোবাইল উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম।

এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রোর বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, তারা ২০২০ সাল জুড়ে নগরীতে মোট ৩ হাজার ৫১১টি অভিযান পরিচালনা করেছে। যেখানে মাদকসহ গ্রেপ্তার ৮৯৯ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৮৭১টি মামলা দায়ের করেছে। উদ্ধার করেছে ৬ লাখ ১২ হাজার ৯৮ পিস ইয়াবা, ৮৮ বোতল ফেনসিডির, ৭১ দশমিক ২০০ কেজি গাঁজা, ৩৭৭ বোতল ফেনসিডিল, ১টি মোটরসাইকেল ও ১টি প্রাইভেট কার। 

মেট্রো কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, তারা ২০১৯ সাল জুড়ে ৪ হাজার ৩৫৪টি অভিযান চালিয়ে মাদকসহ ১ হাজার ১৫২ জনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১২৬টি মামলা দায়ের করেছে। উদ্ধার করেছেন ২ লাখ ১৫ হাজার ৬০২ পিস ইয়াবা।

অথচ একই সময়ে সিএমপির ১৬ থানার অভিযানে ৩ হাজার ৪০০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ২ হাজার ৮৮৫ টি মামলা দায়ের করা হয়। উদ্ধার করা হয়েছে ২৯৭ কোটি ৯৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৫ টাকা সমমূল্যের  ৩৫ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫১ পিস ইয়াবা, ১২৩ দশমিক ৩২৫ কেজি গাঁজা, ৬৬৯৪ দশমিক ৭০৫ লিটার চোলাই মদ, ১ হাজার ৮০৯ বোতল ফেনসিডিল, ১০৪ বোতল বিয়ার, ৮৫ বোতল বিদেশী মদ, ৮ পিস আইপিআই, ৮২০ গ্রাম কোকেন ও ৭৭৭ গ্রাম ফেইনথাইলামিন।

জানা যায়, ১ বার ২৭ হাজার, কয়েকবার ২০ থেকে ২৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তেমন কোনো সফলতা নেই। তারা শুধু নিয়ম মেনে অভিযানে যায় এবং ভ্রাম্যমাণ মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীকে আটক করে নিয়ে গিয়ে মামলা দেয়। এছাড়াও প্রায় সময় দেখা যায়, অভিযানে আটককৃত অধিকাংশই ভবঘুরে। যারা নগরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে আনলে তারা বলেন, পুলিশ ও র‌্যাবের মতো এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজাতে হবে। পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করতে হবে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলতে থাকবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, নানা রকম সংকটের মধ্যেই তারা মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ফলে মাদকের শেকড় সেভাবে উপড়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তারা বসে নেই, যতটুকু আছে তা দিয়ে মাদক নির্মূলে কাজ করছেন বলেও জানান মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম মেট্রোর উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান সিভয়েসকে বলেন, ‌‘আমাদের খালি হাতেই অভিযান পরিচালনা করতে হয়। পর্যাপ্ত গাড়ি নেই, লোকবলের সংকটও রয়েছে। নেই নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট ও আর্মস। সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ঝুঁকি ভাতার ব্যবস্থা করা হয়নি। এতো সংকটের মধ্যেও সাহসের সাথে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি। মাঝে মধ্যে অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীকে খালি হাতেই মোকাবেলা করতে হয়।’

এ প্রসঙ্গে সুাশসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি আকতার কবির সিভয়েসকে বলেন, ‘মাদক নির্মূলে পুরোপুরিভাবে দায়িত্ব পালন করার কথা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। কিন্তু তারা তা পারছে না। পুলিশ ও র‌্যাব নানা কাজের মধ্যেও মাদক নির্মূলে ভালোই কাজ করছে। এখান থেকে তাদের শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। যদিও তাদের প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের উচিত তাদের সে সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা।’

-সিভয়েস/এসএইচ/এমএম

সরকার হাবীব

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়