Cvoice24.com

চসিক নির্বাচন
বিদ্রোহী প্রার্থী : বল এখন নগর আ’লীগের কোটে

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ৬ জানুয়ারি ২০২১
বিদ্রোহী প্রার্থী : বল এখন নগর আ’লীগের কোটে

ছবি : সিভয়েস

বিএনপি প্রার্থীর জন্য নয় দলের বিদ্রোহীদের কারণে এখন বেকাদায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে প্রতি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিদ্রোহীদের দমাতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের দফায় দফায় বহিস্কারের হুংকারও কাজে আসেনি। দায়িত্বশীলরা বিরোধ মেটাতে না পারায় দলের সমর্থন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা এখন ভোটারের কাছে না গিয়ে সিনিয়র নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন।

প্রথমে নিজেদের মধ্যে জোট বাঁধার পর মঙ্গলবার তারা গেলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসায়। বুধবার গেলেন মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায়। মোশাররফ বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিস্কারের হুংকার দিলেও রেজাউল বলে দিয়েছেন তিনি যেহেতু প্রার্থী সেভাবে তার কিছুই করার নেই। বিদ্রোহীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নগর আওয়ামী লীগের জানিয়ে তিনি বল ঠেলে দিলেন নগর আওয়ামী লীগের কোটে। এখন অপেক্ষা সেক্রেটারি আ জ ম নাছিরের, তিনি ঢাকা থেকে আসলেই কি সিদ্ধান্ত হয় তার দিকে তাকিয়ে আছেন দল সমর্থিত কাউন্সিলররা। যদিও আ জ ম নাছির উদ্দিন বলছেন, কেন্দ্র যেভাবে নির্দেশনা দিবে সেভাবেই নগর আওয়ামী লীগ কাজ করবে । 

সিদ্ধান্ত যেটাই হোক, দল সমর্থিত প্রার্থীরা যে কোনও মূল্যে চাচ্ছেন দলের বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে। অন্যদিকে ১১ সদ্য সাবেক বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ভোটের মাঠে থাকা আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা নির্বাচন করার বিষয়ে অনড়। যতই বাধা আর হুংকার আসুক না কেন তারা কোনও ভাবেই নির্বাচনের মাঠ থেকে সরবে না —এটাই সোজা কথা। 

গত মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) রাতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীরা চসিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসায় দেখা করেছেন। সেখানে নিজেদের পক্ষে নগর আওয়ামী লীগ ও সিনিয়র নেতাদের অবস্থান প্রত্যাশা করেন। মোশাররফ হোসনে তাদের বলেছেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসলে আগামী ৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে দলের পদে থাকা বিদ্রোহীদের বহিস্কার করবেন। 

নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটিতে আছেন দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী ১০ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলীর মোরশেদ আকতার চৌধুরী (সদ্য সাবেক কাউন্সিলর) ও ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহরের মোহাম্মদ এয়াকুব। এছাড়া অনেক ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল নেতারাও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। চসিক নির্বাচনে এবার বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া ১১০ জন প্রাথীসহ মোট প্রার্থী হয়েছেন ২১৭ জন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন সাধারণ ওয়ার্ডে ৪০ জন আর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫ জন। তাদের মধ্যে     
সদ্য সাবেক ১১ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৫ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।  

আওয়ামী লীগের ৪৫ বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা বুধবার দুপুরে বৈঠক করেছেন মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চলা এ বৈঠকটির ফলাফলও শূণ্য। ওই বৈঠকে ৩৮ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৯ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী মেয়র প্রার্থীর কাছে বিদ্রোহীদের কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের নিজেদের ভাগে আনতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানান। যাতে করে তাদের ভোটের মাঠে নানা সমস্যার সম্মুখীন হবার কথা তুলে ধরেন। সেকারণে দলীয় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি তারা মেয়র প্রার্থীর সহযোগিতা চান। 

তবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ বৈঠকে সবার কথা শুনলেও রেজাউল করিম চৌধুরী দল সমর্থিত প্রার্থীদের বক্তব্যকে সমর্থন করলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে তার করার কিছু নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। এক্ষেত্রে রেজাউল করিম নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছেই নিজেদের এ অবস্থার কথা তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার পথ বাতলে দেন। বলা চলে, বিদ্রোহী ইস্যুতে মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম বল ঠেলে দিলেন নগর আওয়ামী লীগের কোটে। 

জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, ‘আমি ঢাকা আছি, চট্টগ্রামে গেলে কার কি অভিযোগ তা শুনে বিস্তারিত বলা যাবে।’ 

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্রোহীদের বহিস্কারের যে কথা বলেছেন সে সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক মেয়র নাছির বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। আমি আগে চট্টগ্রামে যাই, তখন উনার সাথে কথা হলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে কেন্দ্রের নির্দেশনা মতে সব করা হবে।’

বিদ্রোহীদের বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছে জানিয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত কোনও অভিমত বা নির্দেশনা নেই। দলের হাইকমান্ড সব অবজারভেশন করছে। দল থেকে যেহেতু নমিনেশন দেওয়া হয়েছে সেহেতু এ বিষয়ে দল থেকে নিশ্চয় সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসবে। আমার সোজা কথা দলীয় হাইকমান্ড যেভাবে নির্দেশনা দিবে নগর আওয়ামী লীগ সেভাবেই কাজ করবে।’ 

আগের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চসিক নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ২৯ মার্চ। করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ায় ভোটের সপ্তাহখানেক আগে অর্থাৎ ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পরে ৪ আগস্ট চসিকের প্রশাসক পদে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে স্থগিত থাকা চসিক নির্বাচনে নতুন করে ভোটের তারিখ ঘোষণা হয়েছে আগামী ২৭ জানুয়ারি। 

নির্বাচনের মাধ্যমে জয় ছিনিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম। 

৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য কাউন্সিলর পদে ১৬১ এবং ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৫৬ প্রার্থী লড়ছেন। এই নিবার্চনে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ পুরুষ এবং ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ নারী ভোটার। 

এদিকে সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রথমবারের মতো ৫৫ জনকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে সবচেয়ে আলোচনার জন্ম দেয় গত নির্বাচনে জিতে আসা দলটির রাজনীতিতে জড়িত ১৯ জনের এবার সমর্থন না পাওয়ার বিষয়টি। তাদের মধ্যে ১১ জনই তাই বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কেবল তারাই নন, নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ড ছাড়া প্রত্যেকটিতেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ৩-৪ জন করে ভোটে লড়ছেন। এ যেন— ঘরের শত্রুই বিভীষণ! সেদিক থেকে অবশ্য বিএনপি ঝুঁকিমুক্ত।  

কাউন্সিলর পদে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে যারা নির্বাচন করছেন, তারা হলেন— ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডের সাহেদ ইকবাল বাবু, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জহুরুল আলম জসীম, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের মোরশেদ আক্তার চৌধুরী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে সাবের আহমেদ, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের এফ কবির মানিক, ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ডের এসএম এরশাদ উল্লাহ, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের এইচএম সোহেল, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের আব্দুল কাদের, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তারেক সোলায়মান সেলিম, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডের হাসান মুরাদ বিপ্লব । এছাড়া অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও আওয়ামী লীগের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়