Cvoice24.com


ঢাকায় সহপাঠীকে ধর্ষণ-হত্যা, বন্ধুর দায় স্বীকার

প্রকাশিত: ১৫:০০, ৮ জানুয়ারি ২০২১
ঢাকায় সহপাঠীকে ধর্ষণ-হত্যা, বন্ধুর দায় স্বীকার

রাজধানীর নাম করা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল মাস্টারমাইন্ডের ‘ও’ লেভেলের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তার কথিত বন্ধু গ্রেপ্তারকৃত ফারদিন দিহান (১৮)। এদিকে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণেই বন্ধুর বাসায় স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তবে জোর-জবরদস্তির কোনো আলমত পাওয়া যায়নি। কিন্তু স্পর্শকাতর স্থানে কিছু ‘ইনজুরি’ পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বয়স নিয়ে জটিলতা নিরসণেও কাজ করছেন তারা।

এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার একমাত্র আসামী ছাত্রীর বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহান (১৮) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদলত। 

এদিকে শুক্রবার বিকালে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে এসে এ ঘটনায় অভিযুক্ত দিহানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ছাত্রীর মা শাহানুরী (৪৪)।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ঘটনার শিকার স্কুলছাত্রীর কথিত বন্ধু গ্রেপ্তারকৃত দিহান দাবি করেছে, তাদের দুজনের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। তবে মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ, কৌশলে মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে ওই ছাত্রীর ময়নাতদন্ত শেষ হয়। এরপর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্তকালে আমরা দেখতে পাই তার প্রচুর রক্তরক্ষরণ হয়েছে। আর সেটি হয়েছে মূলত তার ‘ভ্যাজাইনাল’ এবং ‘রেক্টাম’ রক্তক্ষরণ। দুইভাবে রক্তক্ষরণের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে।’ এটা আপাতদৃষ্টিতে বিকৃত যৌনাচার মনে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ধর্ষণ বা জোরাজুরির কোনো চিহ্ন পেয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. সোহেল বলেন, ‘এখানে জোর-জবরদস্তির কোনো আলমত পাইনি। তবে আমরা দুই পথেই কিছু ‘ইনজুরি’ পেয়েছি। সেই ইনজুরিগুলোর জন্যই রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং মারা গেছে।’ এটা গণধর্ষণের মতো কোনো ঘটনা কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা তার দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছি। ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য পাঠিয়েছি। রিপোর্ট আসলে এ বিষয়ে বলা যাবে।’

মৃত ছাত্রীর বয়স নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১৯। আর পরিবারের দাবি ১৭ বছর দুই মাস। পরিবার বয়সের প্রমাণস্বরূপ পাসপোর্টের কপিও দেখিয়েছে। বয়স জটিলতা নিরসণে পুলিশের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত বয়সের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. সোহলে মাহমুদ বলেন, ‘বয়স নির্ধারণের জন্য আমরা এক্সরে বিভাগে পাঠিয়েছি। শুক্রবার এ বিভাগ বন্ধ থাকে। তাই পুলিশ জানিয়েছে, সেটা করতে পারেনি। যেহেতু এক্সরে হয়নি তাই তার বডির গঠন দেখে, দাঁত দেখে এবং তার যে ডকুমেন্ট আছে সেগুলো দেখে আমরা একটা বয়স নির্ধারণ করতে পারব। এখানে একটা ক্যালকুলেশনের ব্যাপার আছে। এখনই আমরা এ বিষয়ে বলব না।’

আমাদের দেশে সাধারণত সার্টিফিকেটে বয়স কম থাকে, এক্ষেত্রে বয়স নির্ধারণ কিভাবে হবে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো তার প্রকৃত বয়সটা বের করা। যেহেতু আমরা এক্সরে করতে পারিনি, তাই কিছু মাইলফলক আছে সেগুলো দেখে, তার ডকুমেন্টগুলো নিয়ে আমরা একটা বয়স বলতে পারব।’

এদিকে মেয়ে মৃত্যুর ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেছেন (মামলা নং- ৬)। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান। শুক্রবার দুপুরে সেগুনবাগিচা এলাকায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোটার্স এসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় দাবি করা হয়েছে, ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বলেছি, ধর্ষণ হয়েছে কি না এটা পরীক্ষার পরে বলা যাবে। পুলিশ হেফাজতে ছেলেটি তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছে। আমরা ভ্যাজাইনাল সোয়াব এবং কেমিক্যাল টেস্টের কথা বলেছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অনেকে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। যদি আরও কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

এদিকে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার একমাত্র আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহান (১৮) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান আসামিকে আদালতে হাজির করেন। আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আদালতে (নারী ও শিশু) সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা স্বপন এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এজাহারে মেয়েটির বাবা উল্লেখ করেছেন, বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে ৮টায় আমার স্ত্রী অফিসে এবং আমি সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যবসার কাজে বের হয়ে যাই। পরে আমার মেয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় তার মাকে ফোন দিয়ে বলে সে কোচিংয়ের পেপার্স আনতে বাইরে যাচ্ছে। দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী দুপুর ১টা ৫২ মিনিটের দিকে হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন আমাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে। 

‘পরে আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারি দিহান আমার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। দিহান ফাঁকা বাসায় আমার মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অচেতন হয়ে যায়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দিহান চালাকি করে আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আমার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।’- উল্লেখ করা হয় এজহারে।

ঘটনার শিকার ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনা লুকাতে চেয়েছিল তার কথিত প্রেমিক ইফতেখার ফারদিন দিহান। এজন্যই মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে সে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন বাদী মেয়েটির বাবা মো. আল আমিন।

পুলিশের এসি আবুল হাসান বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তানভীর ইফতেখার দিহান জানান, মেয়েটি তার পূর্বপরিচিত। কলাবাগানের ডলফিন গলিতে তাকে তার বাসায় নিয়ে যান তিনি। এসময় ছেলেটির পরিবারের কেউ বাসায় ছিল না। এক পর্যায়ে মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তিনি তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক তরুণ এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন। কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তখন নিউমার্কেট অঞ্চল পুলিশের সিনিয়র এসি আবুল হাসান ওই তরুণকে আটকে রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। এরই মধ্যে কলাবাগান থানার পুলিশ আনোয়ার খান হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণকে আটক করে। খবর পেয়ে ওই তরুণের তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদেরও আটক করে।

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়