Cvoice24.com


ক্যান্সারের কাছে হেরে চিরঘুমে ‘কাউন্সিলর’ সেলিম

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২১
ক্যান্সারের কাছে হেরে চিরঘুমে ‘কাউন্সিলর’ সেলিম

প্রাণে উচ্ছ্বাস আর বুকভরা সাহস—তাতে ভর করে বারবার লড়েছেন নানা নীল নকশার বিরুদ্ধে। বাঘের হুংকারে কুপোকাত করেছেন প্রতিপক্ষকে। আর এসব করতে গিয়ে বারংবার জুটেছে অকথ্য নির্যাতন, জেল-জুলুম আর সমালোচনা। বারবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন, প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে বারবার জয়ী হলেও এবার জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন আলকরণের 'কাউন্সিলর’ তারেক সোলেমান সেলিম। 

মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে জনগণের প্রার্থী হয়ে ভোট যুদ্ধে থাকা সেলিম ভোটে জেতার আগেই জীবনযুদ্ধে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন সোমবার দুপুর ২ টায় ঢাকার ডেল্টা হাসপাতালে। এক সময়ের তুখোড় এ ছাত্রনেতার জীবনের কাঁটাকণ্টক পথ পেরিয়ে কয়েক মাস ধরে লড়েছেন মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে। নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন নিজের প্রাণপ্রিয় শহর থেকে ঢাকার হাসপাতালে। অবশেষে দিলেন চিরঘুম। তার মৃত্যুর খবরে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। 

আরও পড়ুন: ভোটে নয়, জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে লড়ছেন ‌‌‘কাউন্সিলর’ সেলিম

চসিকের এক্স কাউন্সিলর ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এস এম জামাল হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, 'সেলিম ভাই আজ দুপুর ২ টায় ঢাকার ডেল্টা হাসপাতালে মারা যান। আমরা শোকাহত।'

তারেক সোলায়মান সেলিমের ছায়াসঙ্গী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বোখারী আজম বলেন, ‘উনার মরদেহ সড়ক পথে এখন চট্টগ্রামে আনা হচ্ছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) দুপুর ২ টায় চট্টগ্রাম পুরাতন রেল স্টেশনে জননেতা তারেক সোলেমান সেলিম ভাইয়ের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’

জীবনের গল্পটা যেন এক মুকুটহীন রাজার 

সময়টা ১৯৯০ সাল। আওয়ামী লীগের তীব্র আন্দোলনের মুখে নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জীবন রক্ষায় চট্টগ্রামের আলকরণ ওয়ার্ডে ঘরছাড়া হন তারেক সোলেমান সেলিমরা চার ভাই। রাজপথে থেকে অলিগলি ঘুরে ঘুরে নির্ঘুম কাটছিল রাতের পর রাত। তাদের অপরাধ আওয়ামী লীগের ডাকে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতনের পর বাড়ি ফিরেন সেলিমরা চার ভাই। সেদিন মমতাময়ী মা ফেরদৌস আরা বেগম সন্তানদের কাছে পেয়ে বলেছিলেন— ‘এরশাদ ফল (পতন) করেছে। আমি যতটা না... খুশি হয়েছি। আমার বড় আনন্দ, এখন থেকে আমার চার ছেলে বাসায় ঘুমোতে পারবে।’ 

স্থানীয়রা অবশ্য বলছেন, আগাগোড়া আওয়ামী লীগ পরিবার হওয়ায় এদের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ঝঞ্ঝার ছোট্ট একটি নিদর্শন মাত্র এই ঘটনা।

তারেক সোলেমান সেলিমের বাবা মোহাম্মদ সালেহ ছিলেন আলকরণ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে প্রস্তুতি মিটিং— এসবের সবই হয়েছিল সালেহর বাড়ি থেকেই। মুক্তিযুদ্ধকালীন এ বাড়িতেই চলতো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ। পরে পুরো ট্রেনিং নিতে সেখান থেকে ভারতে যেতেন যোদ্ধারা। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন ‘সিটি আওয়ামী লীগে’র (বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগ) সহ-সভাপতির দায়িত্বে থেকে মৃত্যুবরণ করেন মোহাম্মদ সালেহ।

বাবা-মায়ের সান্নিধ্যেই রাজনীতিতে হাতেকড়ি তারেক সোলেমান সেলিমের। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর প্রতিবাদ আর আক্রোশ নিয়ে তিনি নেমে পড়েছিলেন রাজপথে। সৈরাচার বিরোধী আন্দোলন কিংবা এক-এগারোর সময় আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন সামনের সারিতে। 

আওয়ামী লীগের বিপদের পরম বন্ধু আলকরণ ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে পচাত্তর পরবর্তী সময়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেন। পরে সিটি কলেজ ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন। 

সেলিমের ভাই তারেক ইফতেখার সিভয়েসকে বলেন, ‘এরকম গল্পতো বলে শেষ করা যাবে না। তবে ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ে আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা করেছিল সন্ত্রাসীরা। আটকে রাখে তৎকালীন উত্তর জেলা সভাপতি এমএ ওয়াহেব, দক্ষিণ জেলার নেতা এমএ সালেহ এবং ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে। এই তিন নেতাকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচাতে সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তারেক সোলেমান সেলিমসহ আরও ২৪ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। পাল্টা হামলা করে নেতাদের উদ্ধার করেন।’

এছাড়াও তারেক সোলেমান সেলিম কয়েকবার হামলার শিকারও হন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে ২১ আগস্টের নির্মম ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেফতারও হন। বিরোধী পক্ষের শত অত্যাচার-নির্যাতন সয়েও চুল পরিমাণ বিচ্যুত হননি দলের আদর্শ ও নীতি থেকে। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তারেক সোলেমান সেলিম। এরপর ২০০০, ২০০৪ এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়