Cvoice24.com

গঠনতন্ত্র ভেঙে ৪২৫ নেতার ঢাউস কমিটি— বিতর্কে চবি ছাত্রলীগের কমিটি

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ১ আগস্ট ২০২২
গঠনতন্ত্র ভেঙে ৪২৫ নেতার ঢাউস কমিটি— বিতর্কে চবি ছাত্রলীগের কমিটি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রলীগের ২ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির পূর্ণাঙ্গ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পাঁচ বছর পর ঘোষিত এ কমিটি বিশাল বহরের— ৪২৫ জনের! অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটি হওয়ার কথা ১৫১ জনের। এরপরও অসন্তোষ কমিটি নিয়ে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে পদধারী নেতারাও মাঠে নেমেছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে। 

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ— ঘোষিত ঢাউস কমিটিতে অছাত্র, বিবাহিত, মাদককারবারী, শিবির ও বহিষ্কৃতদের পদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন খোদ সংগঠনটিরই নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি না করেই কয়েকজনকে একাধিক পদে রাখা হয়েছে।

পদধারী প্রভাবশালী নেতাদের ছাত্রত্ব নেই

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঠাঁই পাওয়া প্রায় ২৫ জনের ছাত্রত্ব নেই। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু, নতুন কমিটিতে ১নং সভাপতি আল আমিন রিমন, সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি সম্পাদক রকিবুল হাসান, প্রদীপ চক্রবর্তী, মঈনুল ইসলাম, আবু বকর তোহা, জাহেদ আওয়াল, যুগ্ম সম্পাদক রাজু মুন্সি, শামসুজ্জামান সম্রাট, মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও সায়েদুল ইসলামের মত প্রভাবশালী নেতাদেরও নেই ছাত্রত্ব। যদিও রুবেল-টিপুসহ সকলেরই দাবি তাদের ছাত্রত্ব আছে এখনো।  

পদধারীরা মামলার আসামি

চট্টগ্রাম রেলওয়ের কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ২০১৩ সালের ২৪ জুন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিতে প্রাণ হারান যুবলীগের কর্মী সাজু পালিতসহ দুজন। ওই মামলার আসামি বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক রাজু মুন্সি। ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে শিক্ষককে মারধরের হুমকি— সবখানেই রাজু মুন্সীর নাম রয়েছে।

এছাড়া সহ-সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী ও জাহেদুল আওয়ালের বিরুদ্ধেও রয়েছে খুনের মামলা। ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের সামনে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তাপস সরকার খুন হন। এ মামলায় প্রদীপ ও জাহেদও আসামি। আরেক সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন ও আবু বকর নিজের সংগঠনের কর্মীদের ওপর হামলার মামলার আসামি বলে জানা গেছে। 

নেতৃত্বে বিতর্কিতরা

নতুন কমিটিতে পদ পেয়েছেন অনেক বিতর্কিত নেতা। ত্যাগী নেতাদের অভিযোগ— কেন্দ্রে লবিং ও টাকার বিনিময়ে পদ পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মারামারি, স্থানীয়ের বাড়িঘর ভাঙচুর, সাংবাদিককে হুমকির ঘটনায় প্রায় ৩০ জনকে পদে রাখা হয়েছে।

পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ কর্মী সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ক্যাম্পাস জীবনের শুরু থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছি। কিন্তু কমিটিতে নিজের জায়গা নেই।'

গঠনতন্ত্র অমান্য 

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের প্রথম ভাগের ৬ নম্বর ধারার (সাংগঠনিক কাঠামো) ‘জ’ নম্বরে বলা হয়েছে, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সাংগঠনিক জেলা হিসেবে গণ্য হবে। এই কমিটি হবে ১৫১ জনের। গঠনতন্ত্র না মেনে চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখা হয়েছে ৪২৫ জনকে।

একই ভাগের ধারা ১০ থেকে জানা যায়, জেলা শাখায় সহ-সভাপতি হতে পারবেন ২১ জন। কিন্তু চবি ছাত্রলীগের কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন ১১৮ জন।

সঠিক পদে মূল্যায়িত হয়নি নেতারা

প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ না পাওয়া নেতাকর্মীদেরও আন্দোলন করতে দেখা গেছে। সাবেক ও বর্তমান নেতারা কমিটি গঠনের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা করছেন। তাদের অনেকে এটাকে ‘টাউস কমিটি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

নতুন কমিটির সহ-সভাপতি পদে থাকা আবু বক্কর সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের নেতা মহিবুল হাসান নওফেল ভাই যে কমিটির লিস্ট স্বাক্ষর করেছিলেন, সে অনুযায়ী কমিটি হয়নি। মাঠের ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে অছাত্র, শিবির, মামলার আসামিদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে ক্রমধারা ঠিক করা হয়নি।’ 

আরেক সহ-সভাপতি বলেন, ‘এ কমিটি ছাত্রলীগের রাজনীতি তলানিতে নিয়ে যাবে। কারণ, এ কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকেই কোনো দিন ছাত্ররাজনীতি করেননি।’

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া রকিবুল হাসান দিনার বলেন, ‘সংখ্যাটা কেন বা কীভাবে হয়েছে সে ব্যাখ্যায় যাব না। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা রক্ষা করা হয়নি। আমার দাবি, কমিটি পুনর্গঠন করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের কমটিতে আনা হোক।’

কমিটি কত সদস্য বিশিষ্ট জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনির সিভয়েসকে বলেন, ‘এটা এখন বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’

ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি বলেন, ‘অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। যারা রাজনীতি না করে পদবি পেয়েছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। যদি প্রকৃত ত্যাগী নেতারা অমূল্যায়ন সেক্ষেত্রে বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

আরও দুই পৃষ্ঠার কমিটির লিস্ট ভাইরাল

এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভেরিফাই ফেসবুক পেজে ১২ পৃষ্ঠার কমিটি দিলেও সকালে হতেই আরও দুইটা পেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে ৫০ জনকে সহ-সভাপতি হিসেবে করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই দুই পৃষ্ঠার নাম যদি যুক্ত হয় কমিটি হবে ৪২৫ জনের। যেখানে শুধুমাত্র সহ-সভাপতি পদধারী ১১৮ জনই।

কমিটি কত সদস্য বিশিষ্ট জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুকে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেনি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়