Cvoice24.com


জামির অভিযাত্রিক স্কুল

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ৩ জুন ২০১৮
জামির অভিযাত্রিক স্কুল

মাত্র তারুণ্যে পা দিয়েছে ছেলেটি। অথচ স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া। তৈরি করে ফেলেছে নিজের পরিচয়, মানুষের কাছাকাছি থাকার আত্নবিশ্বাস। কথা হচ্ছে অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট আহমেদ ইমতিয়াজ জামিকে নিয়ে। পড়ছে আ্হসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে ৩য় বর্ষে।

“সবার তো এরকম কাজ করার সাহস বা ইচ্ছা থাকে না, আপনার কী করে হলো?” প্রশ্নে জামি জানান, তখন সেন্ট জোসেফ কলেজে পড়ি। প্রথম বর্ষ চলছে। একদিন রাস্তায় দেখি ৬ বছর বয়সী একটা শিশু পত্রিকা বিক্রি করছে। পরদিন কলেজে গিয়ে ইফতি আহমেদ রায়হান, জামিল আযহার শাকিল, মিনহাজ আহমেদ মিঠূ নামের তিন বন্ধুকে জানাই। সেখান থেকেই শুরু হয় অভিযাত্রিক।” 

প্রথমদিকে বাকি সবার মতো অভিযাত্রিকের চলার পথ ও বন্ধুরই ছিল! একে তো মানুষকে বিশ্বাস করানো যায় না, তার ওপর টাকা নেই। নিজেদের পকেট খরচ দিয়েই শুরু করতে হয়। এভাবে প্রায় দুই বছর চলে। যদিও একটা সময় পর বাবা মায়ের সাপোর্ট ছিল জামি’র সাথে তবে প্রতিকূলতাও কিছু অংশে কম ছিল না।

অভিযাত্রিক দল

কথায় কথায় জামি জানান, আমরা কাজ করছি ২০১০ থেকে। এটি একটি ভলান্টিয়ার অর্গানাইজেশন। আমরা কাজ করি শিক্ষা, দারিদ্র বিমোচন, চিকিৎসা, পরিবেশ এবং আরও কিছু বিষয় নিয়ে। এর মধ্যে আমাদের মুল লক্ষ্য শিশু শিক্ষা। এর লক্ষে আমরা ২০১৩ সালে ঢাকার মিরপুরে প্রতিষ্ঠা করি অভিযাত্রিক স্কুল। আমাদের স্কুলে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্য শিক্ষা দেই। এর পাশাপাশি তাদের বই, খাতা, পেন্সিল, রাবার, স্কুল ড্রেস, খাবার দেয়া হয়।

এরপর ২০১৫ সালে পটুয়াখালীতে স্কুলের ১ম ব্রাঞ্চ শুরু করেন তারা। ঢাকার শাখায় ১০০ এবং পটুয়াখালীতে  ৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত এখন ক্লাস হয়। আগামি বছর ক্লাস ৪ এবং ৫ শুরু হবে। এছাড়া শিশুদের জন্য বছরে ২টি শিক্ষা সফর এবং প্রতি মাসে স্বাস্থ্য পরিক্ষা ও বিনামূল্য মেডিসিন বিতরন করা হয়।

এছাড়া ঢাকা শহ আমরা বরিশাল, খাগড়াছড়ি, সিলেট, চট্টগ্রাম,রংপুর শহরে কাজ করছে অভিযাত্রিক। নিবন্ধিত ভলান্টিয়ার এখন দেড় হাজারেরও বেশি! বছর জুড়ে ভলান্টিয়ারররা বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করে। ২১শে ফেব্রুয়ারি রাতে ১০০ ভলান্টিয়ার পুরো ঢাকার সকল পুরাতন জেব্রা ক্রসিং নতুন রঙ করে দেয়। এ ছাড়াও শীতে, রোজায়, প্রয়োজনে নানা কাজ করে যাচ্ছে অভিযাত্রিক। জুন ১, ২০১৬ তারিখে ঢাকার ৩৫০জন ভলান্টিয়ার রাস্তায় নামে জয় অফ গিভিং ইভেন্ট পালনে। এর মাধ্যমে তারা ফান্ড কালেক্ট করে যা দিয়ে গত রমজানে ৮৪৫টি পরিবারকে একটি ইফতার ব্যাগ উপহার দেইয়া হয়েছে যেখানে রমজানের ইফতার সামগ্রি যেমন বুটডাল, মুড়ি, চিড়া, গুড়, দুধ, তেল, চাল, ডাল, সেমাই, বেসন ছিল যেন তারা কারো কাছে হাত না পেতে পরিবার নিয়ে অন্তত ১০দিন ইফতার করতে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত ‘পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম’ বাস্তবায়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে এক বছর মেয়াদি চুক্তি সাক্ষরিত হয় অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন এর সাথে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভলান্টিয়ার সাপোর্ট দেওয়া হবে অভিযাত্রিক থেকে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে জুলাই ২০১৭ পর্যন্ত। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার তাদের নিবন্ধন দেয় ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালে আমেরিকা সরকার থেকে আন্তর্জাতিকভভাবে কাজ করার অনুমতি লাভ করে অভিযাত্রিক।

আহমেদ ইমতিয়াজ জামি জানা তার আসলে আলাদা করে শখ বলে আলাদা কিছু নেই। পড়ছি সিএসই-তে। নিজের ছোট একটা আইটি ফার্মও আছে। তবে অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনই আমার স্বপ্ন। অভিযাত্রিকই আমার শখ। কারো শখ আর ইচ্ছা যদি হয় মানব সেবা তবে তাকে আর ঠেকায় কে?

সিভয়েস/এএইচ

তারুণ্য ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়