Cvoice24.com

ভিন্নধর্মী নাম-পরিচয়ে আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ধরতে গিয়ে জানা গেল আসল পরিচয়!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
ভিন্নধর্মী নাম-পরিচয়ে আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ধরতে গিয়ে জানা গেল আসল পরিচয়!

চট্টগ্রামে ধর্ষণের অপরাধে এক যুবককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। তবে এর আগেই হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় ওই যুবক। পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তারে আদালতের পরোয়ানা আসে খুলশী থানায়। তাকে গ্রেপ্তারে নেমে পুলিশ জানতে পারে দণ্ডপ্রাপ্ত ওই যুবকের দেওয়া নাম-ঠিকানা সবই ‘ভুয়া’। তার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ধর্ষণের মামলা ও বিচারের নথিপত্রে এবং সাজা পরোয়ানায় তার নামের মিল নেই। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তারের পর ‘আসল’ সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। 

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কুমিল্লার কোতোয়ালী থানার ছাতিপট্টি এলাকায় একটি স্বর্ণের দোকান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার সুপন চন্দ্র দেবনাথ (২৫) কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার হেসাখাল গ্রামের রাধা কৃষ্ণ দেবনাথের ছেলে।

পুলিশ জানায়, ২০২০ সালের ২৯ জুন চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে খুলশী থানায় মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী কিশোরীর মা। ধর্ষণের অভিযোগ পেয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে অভিযুক্তকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আসামি ছয় মাস জেলে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। ওই মামলায় ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। এর আগেই জামিন নিয়ে পলাতক থাকায় আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়।তাকে গ্রেপ্তারের জন্য একাধিকবার অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয় পুলিশ। আসামির দেওয়া ঠিকানায় যোগাযোগ করা হলে সেখানে নাম-ঠিকানা সঠিক নয় বলে জানা যায়। পরে আসামির সম্ভাব্য নাম-ঠিকানা ও এনআইডি সংগ্রহ করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান শনাক্ত করা হয়। কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালী মডেল থানার ছাতিপট্টি এলাকার একটি জুয়েলারি দোকান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানায়, মামলায় তার যে নাম এবং ঠিকানা রয়েছে তা ভুল তথ্য। ‘মো. সবুজ’ নামে মামলায় ছয় মাস জেল খানায় ছিলেন। পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়। আসামি তার কর্মস্থলে প্রকৃত নাম ‘সুপন চন্দ্র দেবনাথ’ গোপন করে ‘নারায়ণ’ পরিচয় দিয়ে চাকরি করে। স্বর্ণের দোকানের মালিক জনৈক সাধন বাবু তাকে ‘নারায়ণ’ নামে চিনেন। পরে সে তার প্রকৃত নাম-ঠিকানা সম্বলিত এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দেখায়। এনআইডি অনুযায়ী তার প্রকৃত নাম-ঠিকানা ‘সুপন চন্দ্র দেবনাথ (২৫)’। তারা বাবার নাম রাধা কৃষ্ণ দেবনাথ এবং মায়ের নাম কানন বালা দেবনাথ। তার বাড়ির ঠিকানা ছিল কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার হেসাখালের রাখাল কবিরাজের বাড়ী।

তবে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তার নাম সুপন হলেও ধর্ষণের মামলা ও বিচারের নথিপত্রে এবং সাজা পরোয়ানায় তার নাম ছিল ‘মো. সবুজ (২২)’। এতে তার বাবার নাম দেওয়া ছিল মো.আক্কাস এবং মায়ের নাম শেফালী বেগম। আর বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলায় এবং বর্তমান ঠিকানা চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানার লালখান বাজার টাংকির পাহাড় এলাকার সোহেলের ভাড়াঘরের ঠিকানা দেওয়া ছিল।

খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, সুপন নোয়াখালী শহরে একটি কারখানায় স্বর্ণের গহনা তৈরির কাজ করতেন। মা-বাবার উপর অভিমান করে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন এবং লালখান বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। তবে কেউই তার আসল নাম-পরিচয় জানতো না। ধর্ষণের ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হলে সেখানে ভুয়া ভিন্নধর্মের নাম-ঠিকানা দেয় পুলিশকে। তার দেওয়া নাম-পরিচয়ে অনুযায়ী মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিল হয়। পরে রায়ের পর সাজা পরোয়ানাও জারি হয়।

গ্রেপ্তারে অভিযানে নেমে তার ভুল নাম-ঠিকানা দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে বলে জানিয়েছেন ওসি সন্তোষ কুমার। তিনি জানান, আসামির নাম লেখা ছিল ‘সবুজ এবং স্থায়ী ঠিকানা ছিল ফেনী।’ এছাড়া বর্তমান ঠিকানা দেওয়া ছিল লালখান বাজার। সেই তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকবার অভিযান চালিয়েও ওই ঠিকানায় এই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান শনাক্ত করে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে ভিন্নধর্মী নাম-পরিচয় ব্যবহারের বিষয়ে পুলিশ প্রতিবেদনসহ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে সাজামূলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সিভয়েস/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়