Cvoice24.com

তরুণদের বুঝতে চেষ্টা করুন

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ৩১ মার্চ ২০১৮
তরুণদের বুঝতে চেষ্টা করুন

প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবারগুলো একক পরিবারে পরিণত হচ্ছে। একক পরিবারের সন্তানরা বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে বড় হয়। বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকে ওদের সব কিছু। আর যৌথ পরিবারের সন্তানরা পরিবারের অনেককেই কাছে পায়, অনেকের সঙ্গেই তাদের ওঠবস, চলাফেরা, তাই প্রতিটি কাজে বাবা-মায়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় না। 

আমাদের ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ছে। আমরা ৪ ভাইবোন। দাদা, দাদি, চাচা, চাচি, বড় মা (দাদার মা) ফুপাতো ভাইবোনসহই ছিল আমাদের সেই ছোটবেলা।
মা ঘরসংসারের কাজেই ব্যস্ত থাকতেন। বয়স অনুযায়ী সবার কাজ আলাদা ছিল। কাজ আলাদা হলেও সবাই ছিল পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আমাদের বন্ধু ছিলেন মা, আমাদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন দাদি আর বড় মা। আমাদের ভালোমন্দের অনেক সিদ্ধান্ত নিতেন দাদা। বাবা শহরে ছিলেন, বাবা কখনোই আমাদের শাসন করতেন না। মা বন্ধু ছিলেন, মা-ই আবার শাসন করতেন। তবে ভুল শাসন করলে দাদা এর প্রতিবাদ করতেন। আমাদের উপযুক্ত নয় এমন কোনো কাজের ফরমায়েশ যদি মা দিতেন, তাহলে দাদি এসে মাকে বকা দিতেন। নিজেই কাজটা করে দিতেন।
মা ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকলে ছোটদের নিয়ে সময় কাটাতেন বড়রা, মানে দাদা-দাদি বা বড় মা। পড়তে বসলে দাদা বলতেন,  -জোরে জোরে পড়, ভুল হলে আমি ধরিয়ে দেব।

কিন্তু আজ আমাদের সন্তানরা বড় হচ্ছে শুধু আমাদের (বাবা-মায়ের কাছে)। দুজনই চাকরিজীবী হলে দিনের অনেক অংশ সন্তানদের থাকতে হচ্ছে গৃহকর্মীর কাছে অথবা একা একা। যৌথ পরিবারের সবার কাজগুলো এখন বাবা-মাকেই করতে হচ্ছে। এতে কাজের চাপেও আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। অল্পতেই অধৈর্য হয়ে যাই। এক সময় যার প্রভাব গিয়ে পড়ে সন্তানদের ওপর। আমরা বাবা-মাই সন্তানের সব দায়িত্ব পালন করছি। ভালো খাবার তুলে দিচ্ছি মুখে। দামি দামি ঘরের বাইরের খাবার এনে সন্তানের মুখে দিয়ে তাকে খুশি করি। ভিনদেশ থেকে বা বিলাসবহুল শপিংমল থেকে তাদের পোশাক কিনে দিচ্ছি। জন্মদিনে ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হই, দামি খাবার খাওয়াই, আবার গিফট কিনে দিই। এ সবই করি ওকে খুশি করার জন্য। আর লোকদেখানো জৌলুসের এই সমাজে নিজের আভিজাত্য দেখাই। এসব করার জন্য অনেক সময় প্রতিযোগিতায়ও নামি, যা আমাদের সাময়িক খুশি এনে দিলেও আসলে আমরা নিজের ও সন্তানের অনেক ক্ষতিই করে ফেলছি। 

পরিবারে এমন কিছু ছোট ছোট বিষয় থাকে, যা আমাদের বুঝতে হবে, সন্তানদের মন বোঝার চেষ্টা করতে হবে, যা ওকে তৈরি করবে আগামীর জন্য। তেমনি কিছু ছোট ছোট বিষয় অভ্রকে প্রাইভেটে দিয়ে বাসায় ফিরছি। পথে দেখি এক বয়স্ক লোক আখ আর কতবেল নিয়ে বসে আছে। কতবেল কেনা হলেও আখ কেউ কেনে না আমাদের বাসায়। কিন্তু রৌদ্র আর অভ্র আখের রস খুব পছন্দ করে। রাস্তার পাশের আখের রস শরীরের জন্য উপকারের চেয়ে ক্ষতিই করে বেশি। আগে আমার বাবা বাসায় এলেই দেশি ফল, আখ ইত্যাদি নিয়ে আসতেন। আমি আখ কিনে বাসায় আসি। অভ্র যখন বাসায় আসবে আমি থাকব না। জানি বাসায় এসে আখ দেখলেই ওর খেতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু ওর তো দাঁতের সমস্যা। দেখা যাবে আখ ছিলতে গিয়ে আরেক সমস্যা করে ফেলেছে। আমি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে একটা আখ ছিলে রান্নাঘরে এমন জায়গায় রাখি, যেখানে সে যাবেই, দেখবেই।

যাই হোক, ঠিক সময়ে ও বাসায় আসে, আমি আসি অনেক পরে। এসে দেখি বাটিতে আখের ছোবা। মানে সে খেয়েছে। বাসায় আসার পর অভ্র বলেÑ
-বাসায় এসে যখন টেবিলে আখ দেখি, তখনি খেতে ইচ্ছে করেছিল। কিন্তু ভাবছি ছিলব কী করে, দাঁতের যে অবস্থা। খাবার খেয়ে প্লেট রাখতে রান্না ঘরে গিয়েই দেখি একটা আখ ছিলে রাখা। ভেবেছি তুমি খাওয়ার জন্য ছিলেছ; কিন্তু খাওয়ার সময় পাওনি বলে রেখেই চলে গেছ। পরে ওটা আমিই খেলাম।
আমি বললাম আমার জন্য নয়, এটা তোমার জন্যই আমি ছিলে রেখে গেছি। 
কথাটা শুনেই অভ্র জড়িয়ে ধরে। ও ঠিক বুঝতে পারে মা ওকে বোঝে, বোঝার চেষ্টা করে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের এমন বোঝাপড়া থাকা উচিত।

22

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়