Cvoice24.com


অনলাইনে বন্ধুত্ব : সচেতন হোন

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ১০ জুন ২০১৮
অনলাইনে বন্ধুত্ব : সচেতন হোন

জীবনে একজন ভালো বন্ধুর গুরুত্ব অপরিসীম। সবার জীবনেই ভালো বন্ধুর প্রয়োজন রয়েছে। বন্ধু ছাড়া জীবন প্রায় অসম্ভব। বন্ধুত্ব এমন এক সম্পর্ক যা সংজ্ঞায়িত করা যায় না; কিন্তু জীবনের প্রতিটি বাঁকে বন্ধুত্বের সান্নিধ্য বা উপস্থিতি অনুভব করা যায়, সুখে-দুঃখে পাওয়া যায় বন্ধুত্বের অপার্থিব ছোঁয়া। শুধু সুসময়ের বন্ধু নয়; অসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। ব্যথা-বেদনা-কষ্ট, দুঃখ-যন্ত্রনা-হতাশা, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, দুষ্টুমি এবং সব গোপন কথা, ঘটনার সাক্ষী ও সঙ্গী হলো বন্ধু। যা কাউকে বলা যায় না, তা শুধু বন্ধুকে বলা যায়। অব্যক্ত কথা ও নীরব ব্যথা শুধু বন্ধুর সঙ্গেই শেয়ার করা যায়। তাই বন্ধু হচ্ছে অনুভূতির নিরাপদ আশ্রয়। বন্ধুত্ব হচ্ছে দুটি মানুষের মনের নির্মল আত্মীয়তা।

একজন বন্ধুর সামনে দাঁড়ালে আয়নার প্রায়োজন পড়ে না। একজন ভালো বন্ধু উৎকৃষ্ট, স্বচ্ছ আয়নার মতো। যার সমালোচনা, রাগ, অনুনয়, বকাঝকা কিংবা অধিকার খাটিয়েই প্রকাশ করে জীবন পথের সঠিক প্রতিচ্ছবি। কিন্তু ইন্টারনেটের এই সহজলভ্যতার যুগে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দৌরাত্ম্যে এমন বন্ধুত্ব কি আদৌ পাওয়া সম্ভব?
ফেইসবুকে একটি ফ্রি অ্যাকাউন্টের বিনিময়ে পাওয়া যায় ৫ হাজার বন্ধু। আসলেই কি তাদের বন্ধু বলা যায়? ছবি কিংবা স্ট্যাটাসে লাইক অথবা কমেন্টে ভাসিয়ে দিলেই কি সবাই ভালো বন্ধু হয়ে যায়? সময় অসময়ে পিংপং চ্যাটিং কিংবা ইমো দিয়েই ভাব বিনিময়, মেসেজ আদান-প্রদানের নামই কি বন্ধুত্ব? আর এই ৫ হাজার বন্ধুর মুখ স্মরণ রাখা কিংবা সুখ-দুঃখের খবর জানা বা রাখা কি আদৌ কারও পক্ষে সম্ভব? আর এসব বন্ধুরা কতটাই বা বিশ্বস্ত? আর বিশ্বাস ছাড়া কি কখনও কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় বা করা সম্ভব, না বন্ধুত্বের মতো নির্ভেজাল সুন্দর, নিখাদ সম্পর্ক গড়ে ওঠে?
অপরিচিত কিংবা স্বল্পপরিচিত তথাকথিত বন্ধুর কাছেই মেলে ধরা যায় নিজের একান্ত জগৎ। আজকাল পত্রিকা খুললে, অনলাইন নিউজ পোর্টালে ঢুকলে কিংবা টেলিভিশনে প্রায়ই পাওয়া যায় অপ্রীতিকর নানা ঘটনা, লুণ্ঠন কিংবা ধর্ষণের সংবাদ।
আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ফেইসবুকে কিংবা অনলাইনে ব্যবহার ও বন্ধুত্ব করা দোষের কিছু নয়। তবে মানুষ না চিনে, না বুঝে, ঠিকমতো না জেনে যার তার সঙ্গে বন্ধত্ব করাটা দোষের। কারণ অনেকে ফেক আইডি খোলে অনেকভাবে সরলতার সুযোগ নিয়ে ক্ষতি করে থাকে। তাই তরুণ-তরুণীদের সচেতনভাবে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে হবে।
‘ফেইসবুকে বন্ধুত্ব অতঃপর...’, ‘অনলাইনে বন্ধুত্বের...’ এসব শিরোনাম আবার খবরে আর নিউজফিড হিসেবে চলে আসে ফেইসবুকেরই ওয়ালে। বন্ধুত্বের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে অনেক সময় প্রতারণা করে থাকে কুচক্রী লোক। বিশেষ করে তরুণীরা এসব প্রতারণার শিকার হন বেশি।
প্রতারণার অভিনব কৌশলে ‘ভার্চুয়াল’ বন্ধুর পাতা জালে আটকে যান অনেকেই, বিশেষ করে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা। চ্যাট হিস্ট্রি, খোলামেলা ছবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বন্ধুত্ব কিংবা ব্ল্যাকমেইলিংÑ প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। বর্তমানে ব্যস্ততার কারণে বন্ধুদের সঙ্গে কম যোগাযোগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর হয়তো তাই ভিন্ন পথ খুঁজতেই অনলাইন বন্ধুদের সঙ্গেই চলছে কথোপকথন। কিন্তু এই আলাপচারিতাই হয় বিপদের কারণ। ভালো বন্ধুত্ব আকস্মিকভাবে গড়ে ওঠে না। বিশ্বাস, একাগ্রতা, সততা ও আত্মত্যাগের ফল হচ্ছেÑ উত্তম বন্ধুত্ব।
আজকাল বন্ধুত্ব মানেই যেন অনলাইন বন্ধুত্ব। ফেইসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে ইয়াহু চ্যাট রুমÑ কোথায় নেই বন্ধু! এমনকি ডেটিং আর প্রেমে পড়ার জন্যও। কিন্তু একটা কথা ভুলে গেলে মোটেও চলবে না যে, এই অনলাইনে বন্ধুত্ব একটি ভয়ানক বিপজ্জনক বিষয়।
অনলাইনে বন্ধুত্বের মাধ্যমেই নানা ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে আপনার। হতে পারেন নানা রকম প্রতারণা ও হ্যারেজমেন্টের শিকার এবং হ্যাঁ, এগুলোর জন্য দায়ী আপনি নিজেই। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন আপনি কি করে দায়ী? তাহলে জেনে রাখুন, বুঝে-না বুঝে প্রতিদিন অনলাইনে আপনি এমন অনেক বোকামি করে চলেছেন, যা আপনাকে ঠেলে দিচ্ছে রীতিমতো ঝুঁকির দিকে। অনলাইনে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে এই ভুলগুলো করা থেকে বিরত থাকুন।

যে ভুলগুলো করা থেকে সাবধান
থাকতে হবে
ফোন নাম্বার দেওয়া : অনলাইনে পরিচয়ের শুরুতেই নিজের ফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া শুধু বোকামিই নয়, মস্ত বড় ভুল। ফেইসবুক, টুইটার কিংবা ইয়াহু চ্যাট রুমÑ যে মাধ্যমেই কারো সঙ্গে পরিচিত হোন না কেন, অপর পাশের সত্যিকার মানুষটাকে কিন্তু আপনি জানেন না বা চেনেন না। হয়তো আপনারই দেওয়া এই ফোন নম্বরটি চলে যাবে কোনো বাসের সিটের পেছনে, কিংবা টাকার ওপর। অথবা এই ফোন নম্বরে অনবরত বিরক্ত করা হতে পারে আপনাকে। আসতে পারে অশ্লীল মেসেজ ও কল।

নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে দেওয়া : অল্প ক’দিনেই নিজের জীবনের সব ব্যক্তিগত কথা বলে দেওয়া আরেকটি বোকামির পর্যায়ে পড়ে। নিজের ব্যক্তিগত কথা বলে দিলে পরে বিপদে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেক। আপনি কী করেন, কী করতে পছন্দ করেন, কোথায় থাকেন, পরিবার-পরিজন সম্পর্কিত কথাবার্তা, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের নাম-ঠিকানা এসবই ব্যক্তিগত তথ্য। কারণ এতে অপর মানুষটি খুব সহজেই আপনাকে খুঁজে বের করতে পারেন। মানুষটি ভালো না হলে এতে আপনার বিপদের সম্ভাবনা বাড়বে। সুতরাং সতর্ক থাকুন।
সবার জন্য ছবি উন্মুক্ত রাখা : এই ভুলটি অনেকে না জেনেই করে থাকেন। আবার সতর্কভাবে অনলাইন ব্যবহার না করলেও এই বোকামিটি অনেকেই করেন। অনলাইনে ছবি দেওয়ার ব্যাপারে অনেক সতর্ক হতে হবে। আপনি সামান্য পরিচয়ে যাকে আপনার ছবি দিচ্ছেন সে তা ব্যবহার করতে পারে অশ্লীল কোনো ছবিতে। নিজের ছবি ফেইসবুকে বা অন্য কোথাও দেয়ার পর তা উন্মুক্ত রাখাও নিরাপদ নয়। কারণ যে কেউ এই ছবি ব্যবহার করতে পারে খারাপ কোনো কাজে। শুধু কিছু লাইক কমেন্ট পাওয়ার আশায় নিজের ছবি প্রাইভেসি সেটিং না দিয়ে রাখাটা বোকামি। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। 

নতুন বন্ধুর সঙ্গে সারাদিন চ্যাটিং : এই ভুলটি অনেকেই করেন। দু-একদিনের পরিচিত নতুন বন্ধুর সঙ্গে সারাদিনই চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে কথা চালিয়ে যান অনেকেই। এটা অনেক বড় একটি বোকামি, কারণ এতে আপনার দৈনন্দিন রুটিনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে আপনার নতুন বন্ধুটি। আর এত দ্রুত কাউকে নিজের জীবনে স্থান দেওয়ার ফলাফল হতে পারে ভয়ানক।
ভিডিও চ্যাটিং করা : অনেকেই আছেন যারা স্কাইপে কিংবা ইয়াহু অথবা ফেইসবুকে অপরিচিত কিংবা সামান্য পরিচিত মানুষের সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করে থাকেন। কয়েক দিনের পরিচিত মানুষ হলেও এই কাজটি করা বোকামির পর্যায়ে পড়ে। কারণ এতে আপনার অনেক ছবি তুলে রাখা যায় এবং ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে আপনার ঘরের অনেক কিছু অপর পাশের ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। এর মাধ্যমে আপনি নিজেই তাকে ব্ল্যাকমেইল করার নানা উপকরণ দিয়ে দিচ্ছেন। খুব ঘনিষ্ঠ মানুষ ছাড়া ভিডিও চ্যাট করা অনুচিত।
অল্প দিনের পরিচয়ে দেখা করা : অনলাইনে আট-দশ দিনের পরিচিত কোনো মানুষের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া শুধু অনেক বড় বোকামিই নয়, মস্ত বড় ভুলও। কারণ যে মানুষটির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তাকে আপনি ভালো মতো জানেনই না। খারাপ মানুষ হলে ছিনতাই, রেপ এমনকি খুনের মতো বিপদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারেন। ইদানীং এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সুতরাং সতর্ক থাকুন। একজন ভালো বন্ধু বাস করে মনের মধ্যে, চেতনার গহিনে। তাই বন্ধু আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। আর বন্ধু নির্বাচনে ভুল হলে চরম মূল্য দিতে হতে পারেÑ আর তাই ফেইসবুক কিংবা অনলাইন বন্ধুত্ব করতে আরও সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনীয় সতর্কতাই এসব অনাকাক্সিক্ষত সমস্যার সমাধান দিতে পারে।

সিভয়েস/এএইচ

 

তারুণ্য ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়