Cvoice24.com

গাড়ি বানানোর প্রতিযোগিতা
লাল-সবুজের তরুণ দল

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ১৫ জুলাই ২০১৮
লাল-সবুজের তরুণ দল

অন্য অনেক দেশের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখার যে কী আনন্দ, সেটা ফাহিম, নাহিয়ান, জাবেররা আগে জানতেন না। তাঁরা সবাই আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কয়েক দিন আগে গাড়ি তৈরির একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের এ দলটি ঘুরে এসেছে ফ্রান্স থেকে।

প্রতিযোগিতার নাম শেল ইকো ম্যারাথন। সারা বিশ্বের একটি অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন অটোমোবাইল প্রতিযোগিতা এটি। প্রকৌশল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নিজেদের বানানো গাড়ি নিয়ে এই আয়োজনে অংশ নেন। শর্ত হলো—গাড়িটি হতে হবে জ্বালানিসাশ্রয়ী, নিরাপদ এবং আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন।

বাংলাদেশ থেকে একমাত্র দল হিসেবে ‘টিম রেড-এক্স’ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। দলের মোট সদস্য ১৫ জন। সবাই আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অধ্যাপক ড. দেওয়ান হাসান আহমেদ এবং সহকারী অধ্যাপক মো. জুবায়ের হোসেনের তত্ত্বাবধানে টিম রেড-এক্স-এর নেতৃত্ব দেন নাহিয়ান অর্নব। দলের অন্য সদস্যরা হলেন জাবের, ফাহিম, আফনান, রাব্বী, এহসান, সাদমান, ফারাবী, রিজবান, শুভ, তন্ময়, স্বরণ, অয়ন ও তাসিন।

গাড়ি বানানোর এই প্রতিযোগিতায় তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন গত বছরও। সেবার আসর বসেছিল সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এক্সিবিশন সেন্টারে। সেখানে ছোট ছোট ডকে সব দেশের প্রতিযোগীদের গাড়ি রাখা হয়। একদিন ফাহিমরা সেখানে গিয়ে অবাক—কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যাগভর্তি খাবার আর ফুল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এই তরুণদের জন্য। দলের সদস্য নাহিয়ান অর্নব বলছিলেন, ‘আমরা তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। কারণ, এখানে কোনো বাঙালি আমাদের পরিচিত নন। কাউকে আমরা কিছু জানাইনি। তাঁরা নিজেরাই খোঁজ নিয়ে চলে এসেছেন। বিদেশে এটা আমাদের প্রথম ভালোবাসা কিংবা অনুপ্রেরণা বলতে পারেন।’

ছোটখাটো কিছু ত্রুটির কারণে সেবার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পেলেও ২৩টি দেশের ১২৩টি দলের মধ্যে তারা ‘আরবান কনসেপ্ট গ্যাসোলিন’ শ্রেণিতে নবম ও ‘সমগ্র আরবান কনসেপ্ট’ শ্রেণিতে ১৯তম স্থান অর্জন করেছিলেন। উল্লেখ্য, শেল ইকো ম্যারাথনে দুই ধরনের গাড়ি অংশগ্রহণ করে। প্রোটোটাইপ (সাধারণত ৩ চাকাবিশিষ্ট) ও আরবান কনসেপ্ট (৪ চাকাবিশিষ্ট)। এ দুই শ্রেণির মধ্যে আরও কিছু বিভাগ থাকে। যেমন: গ্যাসোলিন, ডিজেল আর ইথানল মিলে হয় আইসি, ইলেকট্রিক ইত্যাদি।

গত ২৯ মে থেকে ১ জুন ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হলো এবারের প্রতিযোগিতা। অংশ নেয় ২১টি দেশের ৫০টি দল। টিম রেড-এক্স আরবান কনসেপ্ট গ্যাসোলিন ফুয়েল শ্রেণিতে দ্বিতীয় ও সমগ্র আরবান কনসেপ্ট গাড়িগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করে।

২০১৫ সালে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দল টিম অভিযাত্রিক। সে সময় টিম রেড-এক্স-এর সদস্যরা সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছেন। চোখেমুখে রঙিন স্বপ্নের আনাগোনা। বড় ভাইদের কাছ থেকে এই প্রতিযোগিতার কথা শুনেই তাঁরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন।

একটা গাড়ি তৈরি করা তো চাট্টিখানি কথা নয়। প্রকৌশল জ্ঞানের পাশাপাশি টাকাও এখানে বড় প্রয়োজন। একদল কাজ করছিল স্পনসর সংগ্রহের জন্য। অন্যদিকে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে খরচ করে ধোলাইখালে চলছিল গাড়ি তৈরির কর্মযজ্ঞ। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা যোগ হয়েছে এই শিক্ষার্থীদের ঝুলিতে। দলের একজন রিজবান আহমেদ বলছিলেন, ‘স্পনসর জোগাড় করাটা খুব কঠিন ছিল। কেউই বিশ্বাস করতে চাচ্ছিল না আমরা এ রকম কোনো গাড়ি তৈরি করতে পারব। এক কোম্পানি বলে দিল, “ইটস টোটালি রাবিশ!” ধোলাইখালেও শুনেছি, “এরা করে কী? ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ঠেলাগাড়ি বানানো শুরু করছে! ”’

সব বাধা-বিপত্তি পার করেই তাঁরা পৌঁছেছিলেন ফ্রান্সে, বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে। জাবের মাওলা বলছিলেন, ‘অন্য দেশের পতাকাগুলোর সঙ্গে যখন আমাদের পতাকা উড়তে দেখলাম, মনে হলো লাল-সবুজ পতাকাটা আগে কখনো এত সুন্দর লাগেনি। অজান্তেই চোখে পানি এসে গেছে।’

সিভয়েস/এএইচ

তারুণ্য ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়