Cvoice24.com


ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পাহাড় থেকে সরছে না মানুষ

প্রকাশিত: ১৫:৩৫, ১১ জুলাই ২০১৯
ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পাহাড় থেকে সরছে না মানুষ

কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। তারমধ্যে পৌরসভার অভ্যন্তরে অতি ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৯শত ৯৮টি পরিবার। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতির পরও ঝুকি’র মাঝেই এসব মানুষ বসবাস করে যাচ্ছে।

প্রতি বছর পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়লেও সেদিকে কোন খেয়াল নেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী এসব মানুষের। ঝুঁকিতে থাকা এসব লোকজন বলছেন তাদের স্থায়ী নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা না হলে পাহাড় ছাড়বেনা।

অন্যদিকে প্রশাসন বলছেন পাহাড় কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন হতে পারেনা। যারা দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর জনগণের জান মাল রক্ষার্থে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় থাকা লোকজনকে সরিয়ে ফেলা হবে। জান রক্ষার্থে প্রয়োজনে জোরপূর্বক সরানো হবে।

এদিকে গত ৪ দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে যেকোন মুহুর্তে পাহাড় ধ্বসে মানবিক বিপর্যয় ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকায় ঝুঁকিপুর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। শহর সহ প্রতিটি উপজেলায় মাইকিং করে পাহাড়ে ঝুকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

সিপিভি ভলান্টিয়ার, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, এনজিও সহ বিভিন্ন গ্রুপ ঝুকিপুর্ণ এলাকায় গিয়ে লোকজনকে সরিয়ে নিতে প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীরা বলছেন তাদের কোন থাকার স্থান না থাকায় পাহাড়ে ঝুঁকি জেনেও বসবাস করছে। সরকারের প্রতি তাদের দাবি বসবাসের জন্য নিরাপদ স্থায়ী স্থান দেওয়া হোক।

শহরের খাঁজা মঞ্জিলের পাহাড়ে অবস্থান করা রাবেয়া খাতুন জানান, গত ৯ বছর ধরে এই পাহাড়ে অবস্থান করছেন। প্রতি বছর বর্ষায় বৃষ্টি হলেই ভয় লাগে। কখননা পাহাড় ধ্বসে পড়ে। সরকার যদি আমাদের জন্য স্থায়ীভাবে নিরাপদ কোন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করত তাহলে আর এই আতংকে থাকতে হতনা।’

পাহাড়তলী এলাকার নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, ‘নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাকিং করলেও কিছু করার থাকছে না। ঝুঁকি থাকলেও পাহাড় ছাড়তে পারবনা। বউ-বাচ্চা নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। সুতরাং কাপালে যা আছে তাই হবে।’

পাহাড় কেন দখল করে আছে এমন প্রশ্নে নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি এক প্রভাবশালীর কাছ থেকেই এই জায়গা কিনেছে। তার থাকার কোন জায়গা নেই তাই অল্প টাকায় পাহাড়ে উচুঁতে জায়গা কিনেছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যেকোন মুহুর্তে পাহাড় ধ্বসের আশংকা রয়েছে। তাই কেউ যাতে মানবিক বিপর্যয় ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির শিকার না হয় সেই লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। লোকজনকে অনুরোধ করা হচ্ছে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে। পরিস্থিতি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলে প্রশাসন দিয়ে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রয়োজনে উচ্ছেদ করা হবে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা বসতি। 

পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড়ের চুড়ায় অতি ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করা পরিবারের জন্য একটি স্থানে অবকাঠামো তৈরি করে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে জীবন-জীবিকার একটি প্রস্তাবনা দাখিল করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক। আর এসব পাহাড়ে বনায়ন করে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি ঝুঁকিপুর্ণদের বিপর্যয় ও সম্পদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সিভয়েস/এএস 
 

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়