Cvoice24.com


পাহাড়ে ভ্রমণ পিপাসুদের নতুন আকর্ষণ ‘বাদুরগুহা’

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২০
পাহাড়ে ভ্রমণ পিপাসুদের নতুন আকর্ষণ ‘বাদুরগুহা’

ছবি : সিভয়েস

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং এলাকার একটি পাহাড়ি গুহা (যা স্থানীয়ভাবে ‘বাদুরগুহা’ নামে পরিচিত) পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বাড়তি পাওনা রয়েছে গুহার পাশে একটি ঝরনা। তবে কিছুটা বুনো পথ ধরে পাহাড়ি ছড়া ও ঝরনা বেয়ে গুহা পর্যন্ত পৌছার পথটি কিছুটা কষ্টের। তাই এডভেঞ্চার টাইপের পর্যটকদের জন্যই এ গুহা দর্শন হবে আনন্দের; পারিবারিক ভ্রমণ না করাটাই হবে ভাল।

পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে আছে অবাক করা অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। দূর্গম এলাকা এবং মানুষের যাতায়াত না থাকার কারণে যা এখনো মানুষের আজানা। এরকম একটি গুহার সন্ধান পাওয়া গেছে দীঘিনালাার মেরুং ইউনিয়নে।

ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের রথিচন্দ্র কার্বারী পাড়ার দূর্গম এলাকায় গুহাটি অবস্থিত। স্থানীয় ত্রিপুরাদের ভাষায় ‘তাবাক্ষ’। তাবা অর্থ বাদুর আর ক্ষ অর্থ গুহা; বাংলা ভাষায় বাদুরগুহা। এখন যদিও গুহার ভিতরে বাদুরের সংখ্যা অনেক কম; কিন্তু এক সময় এ গুহার ভিতরে ঝাঁকে ঝাঁকে বাদুরের দেখা মিলত তাই স্থানীয় ত্রিপুরারা গুহাটির নাম দিয়েছে তাবাক্ষ বা বাদুরগুহা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গুহা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, গুহার প্রবেশ মুখের পাশেই একদল তরুণ রান্না করছে। তারা সকলেই গুহা দেখতে এসেছিল খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে। তরুণ কান্তি ত্রিপুরা (১৯), কান্তি ত্রিপুরা (১৮) জানান, গুহাটি অসাধারণ সুন্দর; গুহার ছাদ প্রায় ৩০ ফুট উঁচূ যা দেখে মনে হয় কোনো কারিগর নিখূঁত হাতে পাকা করে রেখেছেন।

সরেজমিনে দেখে তাদের কথার সত্যতা মিলে। গুহার প্রস্ত প্রায় ৩ ফুট; গুহার ভিতরে প্রবেশ করে প্রায় ১৭০ ফুট যাওয়া হয়েছে। এরপর মাঝপথে একটি পাথর রয়েছে, সে পাথরের ওপাশেও আরো দেখা গেলেও সাথে পর্যাপ্ত আলো না থাকার কারণে আর যাওয়া হয়নি।

গুহা দেখতে যাওয়া বোয়ালখালি বাজার এলাকার অজিত বড়ুয়া (৩৮) জানান, গুহায় প্রবেশ মুখের আগেই একটি ঝরনা। সে ঝরনার পাশ দিয়ে পাহাড়ি লতা ধরে ঝরনার পাহাড়টি বেয়ে বেয়ে নামতে হয়। যা এক অসাধারণ অনুভূতির সৃষ্টি করে। আর গুহাটিও নিঃসন্দেহে অনেক সুন্দর; এত বেশি উচ্চতার গুহা আর কোথাও আছে কিনা তাও সন্দেহ।

আরেক পর্যটক হিরেন্দ্র কুমার ত্রিপুরা (৩৫) জানান, নতুন করে আবিস্কার হলেও গুহাটি অসাধারণ সুন্দর। গুহাতে যেতে হয় খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের নয়মাইল ত্রিপুরা পাড়া এলাকার পাশ দিয়ে। অপরদিকে তৈদুছড়া ঝরনাতেও যেতে হয় একই পাড়ার পাশ দিয়ে। সেক্ষেত্রে পর্যটকগন বাদুরগুহা ও তৈদুছড়া ঝরনা দেখার একসাথে পরিকল্পনা করলে সুবিধা হবে এবং দীঘিনালায় প্রকৃতিক দুইটি সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করতে পারবেন।

রথিচন্দ্র কার্বারী পাড়ার কার্বারী (পাড়া প্রধান) গুনধর ত্রিপুরা জানান, পাড়ায় পৌছা পর্যন্ত পুরো পথ ইটসলিং রয়েছে। তবে কয়েক জায়গায় ইট সরে গিয়ে কিছুটা নষ্ট হয়েছে সে জায়গাগুলি সংস্কার করলে সুবিধা হবে। এছাড়া গুহার পথে এক কিলোমিটারের কম কাচা সড়ক, সেটিতেও ইটসলিং করলে আরো ভাল হবে। এরপর হাটা পথ মাত্র ১০-১৫ মিনিটের তাই পর্যটকদের সময় ও কষ্টও অনেক কম হবে। কিন্তু ঝরনার পাশ দিয়ে লতা বেয়ে নামতে হয়, যে কারণে নারী বা শিশুদের জন্য যাওয়া সম্ভব হবে না।

যেভাবে যেতে হয় গুহাতেঃ

খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের ঠিক মধ্যবর্তী এলাকা ৮ মাইলের পাশেই দীঘিনালা-খাগড়াছড়ির সীমান্ত সাইনবোর্ড। এরপাশ দিয়েই পূর্বদক্ষিণ দিকে চলে গেছে ইটসলিং সড়ক। এ সড়ক দিয়ে ৬ কি.মি. যেতে হবে; যাওয়া যাবে জীপ (স্থানীয় ভাষায় চাঁদের গাড়ি) বা মোটর সাইকেলে। পৌছবেন রথিচন্দ্র কার্বারী পাড়ায়, যেখানে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। সেখান থেকে আরো ১ কি.মি কাঁচা সড়কে যাবে আপনাদের বহনকৃত গাড়ি। এরপর পাহাড় বেয়ে হেটে নামতে হবে মেরুং ছড়াতে। ছড়া দিয়ে কিছুদূর এগুলেই শুনা যাবে ঝরনার ছল ছল আওয়াজ। এ ঝরনার পাশ ঘেঁষে পাহাড়ি লতা ঝুলছে, সে লতা ধরেই বেয়ে নিচে নামার পর ছড়া দিয়ে ১০০ গজের মতো সামনে এগুলেই বাম পাশে গুহার প্রবেশ মুখ। তবে বুনো পথে ভুল না করার জন্য রথিচন্দ্র কার্বারী পাড়া থেকে কোনো গাইডার নিয়ে যাওয়াই ভাল।

-সিভয়েস/এসসি

প্রদীপ চৌধুরী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়