Cvoice24.com


খাগড়াছড়িতে ৪ বছরেও চালু হয়নি মাতৃভাষায় পাঠদান

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
খাগড়াছড়িতে ৪ বছরেও চালু হয়নি মাতৃভাষায় পাঠদান

সরকারিভাবে সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িতেও তিনটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০১৭ সালে। বিগত চার বছর খাগড়াছড়িতে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা এ তিন সম্প্রদায়ের শিশুদের মাতৃভাষাভিত্তিক বই ও শিক্ষা উপকরণও এসেছে যথারীতি। প্রশিক্ষিত শিক্ষক এবং স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের উদাসীনতায় মাতৃভাষার পাঠ গ্রহণের সুযোগ থেকে শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে অযত্নে-অবহেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সরকারি শিক্ষা উপকরণ।

অভিযোগ রয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের চিহ্নিত কিছু কর্মকর্তা জেলার শিক্ষার মান উন্নয়নের চেয়ে অর্থের বিনিময়ে যখন তখন শিক্ষক বদলি এবং ডেপুটেশন ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন বেশি। তাছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আগ্রহ থাকলেও শিক্ষা বিভাগের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় পার্বত্য জেলা পরিষদও এগোতে পারছে না। অথচ জাতীয় শিক্ষাক্রমে মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত হওয়ায় পার্বত্য তিন জেলাসহ সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষাচিত্র আমূল বদলে যাবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন পাহাড়ের মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঝড়ে পড়া রোধ করার জন্য পাহাড় আর সমতলে বসবাসকারী  ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক থেকে শিক্ষা লাভের সুযোগ নিশ্চিত করার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এনসিটিবি’র উদ্যোগে ২০১২ সালে কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ শুরু হয়। প্রথমত জনসংখ্যার পরিমাণ বিবেচনায় চাকমা, মারমা, গারো, সাঁওতাল, ত্রিপুরা ও সাদরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাথমিক পর্যায়ে এই কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। চালু হয় ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করলেও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকা ও সকল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব না হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।

ফলে মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। আর শিক্ষকেরা বলছেন, তারা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলে বর্ণগুলো না চেনা বা পড়তে না পারার কারণে শিক্ষার্থীদেরকে তারা শিখাতে পারছেন না। তাদের দাবী তাদের যেন সরকার দ্রুত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের শেখানের সুযোগ করে দেওয়া হয়। আর যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তারা বলছেন, একটি ভাষার বর্ণগুলো আয়ত্ব করার জন্য এটি পর্যাপ্ত নয়। শিক্ষকদের দাবী তাদের যেন মাতৃভাষার বই পড়ানোর জন্য দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৭০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে। 

আপার পেরাছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষিক সোনালী ত্রিপুরা বলেন, সরকারি এই উদ্যোগের ফলে অভিভাবকরাও অনেক আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কোন কোন বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ ছাড়াও শিক্ষকরা নিজ নিজ আগ্রহে সীমিত পরিসরে পাঠদান করছেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে মাতৃভাষাভিত্তিক পাঠদান কার্যক্রম চালু করতে হলে শতভাগ প্রশিক্ষণ জরুরী।

কমলছড়ি মূখ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রশিক্ষণ চলছে। সকল শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পেলে পড়ানো সহজ কবে।

এনসিটিবি’র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি লেখক প্যানেলের সদস্য মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, পিটিআই গুলোতে কিভাবে মাতৃভাষা শেখানো হবে, তা কারিকুলামে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। কারিকুলামের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ করতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের দক্ষ করে তোলার জন্য সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা রির্সোস সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর রিন্টু কুমার চাকমা বলেন, কমিউনিটি ভিত্তিক শিক্ষক পদায়ন, মধ্য ও স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখা, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার দক্ষতাকে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনায় নিলে দ্রুত সুফল মিলবে।

খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মধুমঙ্গল চাকমা বলেন, এই ভাষা আয়ত্ব করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করা দরকার। সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই শিক্ষা গ্রহণ করা সহজ হবে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। বাকী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির শিশুদের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে। গত চার বছর ধরেই সরকারিভাবে বিপুল অর্থ ব্যয় করে বই ও উপকরণ প্রেরণ করা হচ্ছে। কিন্তু চাকমা-মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মধ্যে মাতৃভাষায় লিখতে পড়তে পারার মতো অভিজ্ঞ জনের ঘাটতি রয়েছে। তাই এ সমস্যা সমাধানে সমাজের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আরো মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দেন।

-সিভয়েস/এমএম

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়