Cvoice24.com

জেনারেল হাসপাতাল
আইসিইউর ১০ বেডই যেন অন্ধের যষ্ঠি!

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২২ মে ২০২০
আইসিইউর ১০ বেডই যেন অন্ধের যষ্ঠি!

চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত আইসিইউ শয্যা নিয়ে আলোচনা ছিল শুরু থেকেই। করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা দেড় হাজার ছুঁইছুঁই (১৪৮০) হলেও রোগীদের চিকিৎসায় জেনারেল হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ সিটকে বলা চলে অনেকটা অন্ধের যষ্ঠি।

গত কয়েকদিন ধরে এর সবগুলো শয্যাই ছিল রোগী দিয়ে ভর্তি। ফলে নতুন রোগীদের আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা দেয়া যাচ্ছেনা। বিশেষ কোন ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের তদবিরে আগে থেকে আইসিইউতে থাকা কোন রোগীকে আইসোলেশনে স্থানান্তরিত করে নতুন রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

সর্বশেষ এরকম নির্মম অভিজ্ঞতার শিকার হলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের পরিবারের দুই সদস্য। তারা নিজেরাই নামকরা শিল্প উদ্যোক্তা ও এস আলম গ্রুপের পরিচালক। 

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বড় ভাই মোরশেদুল আলমকে নিজের আইসিইউ সিটে জায়গা করে দিয়েও বাঁচাতে পারেননি অপেক্ষাকৃত কম অসুস্থ ছোট ভাই রাশেদুল আলম। গত ১৭ মে ৪ ভাই সহ করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন মোরশেদুল আলম। এর পর থেকে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২১ মে) বিকেলে মোরশেদুল আলমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ ওয়ার্ডে আগে থেকেই এস আলম পরিবারের আরেক সদস্য রাশেদুল আলম চিকিৎসাধীন ছিলেন।

জানা গেছে, মোরশেদুল আলমের আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হলেও কোন সিট খালি না থাকায় তাকে আইসিইউতে নেয়া যাচ্ছিল না। তবে অপর ভাই রাশেদুল আলমের শারীরিক অবস্থার তুলনামূলক উন্নতি হওয়ায় তাকে আইসিইউ ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে সেখানে প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের বড় ভাই মোরশেদুল আলমকে ভর্তি করা হয় পরিবারের সম্মতিতেই। 

তবে ছোট ভাইয়ের এই ত্যাগও মোরশেদুল আলমকে শেষ রক্ষা করতে পারেনি। জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (২২ মে) রাত ১০টা ৫০ মিনিটে মারা যান তিনি।

৬২ বছর বয়সে মারা যাওয়া মোরশেদুল আলম দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মোরশেদুল আলম এস আলম গ্রুপের পাশাপাশি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।

শুক্রবার মধ্যরাতে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের আত্মীয় রেজাউল হক চৌধুরী মোস্তাক ফেসবুকে লিখেছেন, 'করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে মোরশেদুল আলম তার অন্য চার ভাইয়ের সঙ্গে চট্টগ্রামের সুগন্ধার বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২১ মে) বিকেলে মোরশেদুল আলমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ ওয়ার্ডে আগে থেকেই এস আলম পরিবারের আরেক সদস্য রাশেদুল আলম চিকিৎসাধীন ছিলেন।'

তিনি আরও লিখেছেন, 'চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডের দশটি শয্যার সবকটিই পূর্ণ থাকায় সেখানে গুরুতর অসুস্থ মোরশেদুল আলমকে ভর্তি করা যাচ্ছিল না। তবে অপর ভাই রাশেদুল আলমের শারীরিক অবস্থার তুলনামূলক উন্নতি হওয়ায় তাকে আইসিইউ ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে সেখানে প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের বড় ভাই মোরশেদুল আলমকে ভর্তি করা হয়।'

প্রয়াত মোরশেদুল আলমকে শনিবার (২৩ মে) রাত ১টা ৩০ মিনিটে  পটিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে পিতার কবরের পাশে চির নিদ্রায় সমাহিত করা হয়। 

সৈয়দ আবরার শাহরিয়ার

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়