Cvoice24.com


চট্টগ্রামে প্রতি ৫ টেস্টে করোনা শনাক্ত ১ জন

প্রকাশিত: ১০:০০, ৬ জুন ২০২০
চট্টগ্রামে প্রতি ৫ টেস্টে করোনা শনাক্ত ১ জন

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। সামাজিক সংক্রমণ রোধে এখনো সচেতন নয় চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। সাধারণ ছুটির আগে ও গতকালের সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রামে প্রতি ৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ দশমিক ১ জন করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা এই সংক্রমণের হার কমানোর জন্য তুলে ধরেছেন তাদের মতামত।

চট্টগ্রামে মোট কোভিড-১৯ পরীক্ষা করেছেন ১৮ হাজার ৭৮৬ জন। তারমধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা হলো ৩ হাজার ৮০৯ জন। যা পরিসংখ্যানের গণিতে প্রতি ৫ জনে ১ দশমিক ১ জন। সর্বশেষ ৫ জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী।

গত ২৬ মার্চ সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পরে চট্টগ্রামে গত ৩ এপ্রিল আক্রান্ত হিসেবে একজন শনাক্ত হয়। এরপরে ৪ এপ্রিলের নমুনা পরীক্ষায় কারো শরীরে করোনা শনাক্ত হয়নি। কিন্তু এরপর থেকে নিয়মিত করোনা শনাক্ত হতে থাকে। যা সাধারণ ছুটির শেষ দিন গত ৩১ মে ৪০৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১৮ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। প্রতি ১০ জনের হিসেবে ২ দশমিক ৮৯ জনের শনাক্ত হয়। একইভাবে ১ জুন ৬৩১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২০৮ জন শনাক্ত, যা প্রতি ১০ জনের হিসেবে ৩ দশমিক ৩০ জন। ২ জুন ৬২১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২০৬ জন শনাক্ত, যা প্রতি ১০ জনের হিসেবে ৩ দশমিক ৩২ জন। ৩ জুন ৫৩০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪০ জন শনাক্ত, যা প্রতি ১০ জনের হিসেবে ২ দশমিক ৬৪ জন। ৪ জুন ৪৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩২ জন শনাক্ত, যা প্রতি ১০ জনের হিসেবে ২ দশমিক ৮৪ জন। সর্বশেষ গতকালের (৫ জুন) তথ্যমতে ৫৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪৩ জন শনাক্ত, যা প্রতি ৫ জনের হিসেবে ১জন।

এ বিষয়ে কথা বলা হয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইসিডিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সাথে।

তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‌‌‌‌এই সংক্রমণ রোধ করার জন্য মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। মুখে মাস্ক পড়ার ব্যাপারে সকলে সচেতন হলেও আমরা দেখছি মানুষ তা প্রয়োগ করছে না। সুতরাং সচেতনতা প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- আমাদের আবেগী হওয়া চলবে না। আবেগী হওয়ার কারণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি একই পরিবারে অনেকের সংক্রমণ হচ্ছে। সুতরাং যারা করোনার উপসর্গগুলো নিজের শরীরে অনুভব করবেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন এবং নিজেকে সম্পূর্ণভাবে আইসোলেট করবেন। কেননা আবেগ দিয়ে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব নয়।'

এই সময়ে সাধারণ ফ্লু ও জ্বর নিয়ে অনেকেই ভুগছেন। তারা কিভাবে ও কখন পরীক্ষা করবেন এবং সংক্রমণ রোধে কী ভূমিকা রাখবেন জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. আব্দুর রব বলেন, 'যারা সাধারণত ও জ্বরে ভুগছেন, তাদের প্রথম কাজ হলো নিজেকে আইসোলেট করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। সামাজিক ভাবে এর সংক্রমণ যেহেতু ছড়িয়ে পড়েছে, তাই সকলকে এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অনেকে একদিনের জ্বর নিয়েও পরীক্ষা করাতে চান। তার কোন প্রয়োজন নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ৮০ শতাংশ মানুষ ঘরে থেকেই সুস্থ হচ্ছেন। এছাড়া ১০ ভাগ মানুষ আপনা-আপনি সুস্থ হচ্ছেন। শুধুমাত্র ১০ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে হাসপাতালে প্রয়োজন আমরা দেখতে পাচ্ছি।'

তিনি আরো বলেন, 'সাধারণ ফ্লু জ্বর-কাশি অনেক কারণে হতে পারে। তবে আমাদের করোনার সংক্রমণ হয়েছে ভাবতে কিনা তা হবে। জ্বর ৫ থেকে ৭ দিনের বেশি থাকলে, তখন আমাদের কোভিড টেস্ট করতে হবে। অনেকে ১-২ দিনের জ্বর নিয়ে পরীক্ষা করার কারণে আমরা ৩০ শতাংশ রিপোর্ট ভুল পাচ্ছি। কোভিড টেস্ট বাড়ানো চাইলে সম্ভব নয়। ডেঙ্গুর মতো রেপিড টেস্ট এর মাধ্যমে ১৫ মিনিটে ফলাফল জানার সুযোগ থাকলে আমরা সবাইকে টেস্ট করানোর পরামর্শ দিতে পারতাম। কিন্তু চট্টগ্রামের টেস্ট করানোর সীমাবদ্ধতা আছে। এখন একদিনে চট্টগ্রামে ৫০০ পরীক্ষা করার সামর্থ্য আছে। তাই ফ্লু বা জ্বর হলে নিজেকে আইসোলেট করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। এবং পাঁচ থেকে সাত দিন সময় দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত বলে মনে করি।'

সামাজিক সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে গত ৩১ মে সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় সংক্রমণ আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সংক্রমণ রোধ করার জন্য কি কি করা প্রয়োজন জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইসিডিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, 'এখন আসলে ভালো কিছু আশা করা খুব কঠিন। এরপরেও আশা করতে হবে এবং সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা বর্তমানে সারাদেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ তিনটি জোনে ভাগ করেছি। এখন আমাদের যেটি করতে হবে, তা হলো- লাল জোনের কোন মানুষ যেন হলুদ জোনে যেতে না পারে, হলুদ জোনের কোন মানুষ যেন সবুজ জোনে যেতে না পারে তা কঠোরভাবে দেখতে হবে। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক কতজন আক্রান্ত হচ্ছে তা বিবেচনা করে ছোট ছোট জোন তৈরি করতে হবে।'

তিনি আরো বলেন, 'অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য দুটিকে একই সাথে সঠিক পরিকল্পনায় আনতে হবে। তাই চট্টগ্রামের যে অঞ্চলগুলো বাণিজ্য নির্ভর সে অঞ্চলগুলোকে খোলা রেখে বাকি অঞ্চলগুলো পার্শিয়ালি ও স্ট্রিকলি লক ডাউন করতে হবে। নতুবা সচেতন হলেও উপসর্গহীন সংক্রমিত ব্যক্তিরা এ ভাইরাস অন্য এলাকায় ও অন্য মানুষদের কাছে ছড়াবে। তবে যারা সংক্রমিত হবেন, বা যাদের এ ধরনের কোনো উপসর্গ দেখা যাবে তাদের উচিত হবে নিজেদের আইসোলেট করে রাখা। আইসোলেট হয়ে থাকার কোনো বিকল্প নেই।'

সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত গত ১ জুনের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগরে আক্রান্তের দিক থেকে প্রথম কোতোয়ালী, দ্বিতীয় পাঁচলাইশ ও তৃতীয় খুলশী অঞ্চল। আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে কোতোয়ালী থানা এলাকায় ৩২৪ জন, পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ২১৫ জন, খুলশী থানা এলাকায় ১৮৩ জন, পতেঙ্গা থানা এলাকায় ১৬৮ জন, বন্দর থানা এলাকায় ১২৩ জন, পাহাড়তলী থানা এলাকায় ১১৪ জন, আকবরশাহ ও চকবাজার থানা এলাকায় ১১১ জন, চান্দগাঁও থানা এলাকায় ১০৬, বায়েজিদ ও বাকলিয়া থানা এলাকায় ৯৯ জন, সদরঘাট থানা এলাকায় ৮৬ জন ও কর্ণফুলী থানা এলাকায় ৫৬ জন। তবে এরমধ্যে ৮৫ জনের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন- ১. লাল জোন, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সম্পূর্ণভাবে লকডাউন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ২. হলুদ জোন, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা শংকাজনক, যা আংশিক ভাবে লকডাউন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ৩. সবুজ জোন, যেখানে করোনা সংক্রমণ হয়নি। এ তালিকায় চট্টগ্রামকে রাখা হয়েছে হলুদ জোনে।

এলাকাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে সর্বশেষ তথ্য নিয়ে এলাকাভিত্তিক হিসেব এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। তবে ঢাকা থেকে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। আশাকরি, খুব অল্প সময়ে সফটওয়্যারটির কাজ শেষ হবে। সফটওয়্যারটিতে নিয়মিত আপডেট রাখা হবে। এতে কোন এলাকায় কতজন আক্রান্ত হয়েছেন কতজনের পরীক্ষা হয়েছে তা জানা যাবে।'

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে মোট কোভিড-১৯ পরীক্ষা করেছেন ১৮ হাজার ৭৮৬ জন। তারমধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা হলো ৩ হাজার ৮০৯ জন। যা পরিসংখ্যানের গণিতে প্রতি ১০ জনে ২ দশমিক ২ জন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে আক্রান্ত হয়েছে গতকাল শুক্রবার (৫ জুন) ১৪৩ জন, ৪ জুন ১৩২ জন, ৩ জুন ১৪০ জন, ২ জুন ২০৬ জন, ১ জুন ২০৮ জন, ৩১ মে ১৬০ জন, ৩০ মে ২৩৭ জন, ২৯ মে ১৫৯ জন, ২৮ মে ২২৯ জন, ২৭ মে ২১৫ জন, ২৬ মে ৯৮ জন, ২৫ মে ১০৩ জন, ২৪ মে ৬৫ জন, ২৩ মে ১৬৬ জন, ২২ মে ১৬১ জন, ২১ মে  ৯২ জন, ২০ মে ২৬০ জন, ১৯মে ১২৮ জন, ১৮মে ৫৪ জন, ১৭ মে ৭৩ জন, ১৬ মে ৭৫ জন, ১৫ মে ৬৮ জন, ১৪ মে ৬১ জন, ১৩ মে ৯৫ জন, ১২ মে ৭৫ জন, ১১ মে ৬৫ জন, ১০ মে ৪৮ জন, ৯ মে ১৩ জন,  ৮মে ১১ জন, ৭ মে ৫৭ জন, ৬ মে ১১ জন, ৫ মে ২২জন (তারমধ্যে ঢাকা, কুমিল্লা ও কক্সবাজার থেকে আসা তিনজন রোগী চট্টগ্রামের রিপোর্টে যুক্ত হয়), ৪মে ১৬ জন, ৩ মে ১৩ জন, ২ মে তিনজন, ১ মে তিনজন, ৩০ এপ্রিল একজন, ২৯ এপ্রিল ৪ জন, ২৮ এপ্রিল ৩ জন, ২৭ এপ্রিল ৯ জন, ২৬ এপ্রিল ৭জন (রাজবাড়ী থেকে এসে যুক্ত হয় একজন), ২৫ এপ্রিল ২ জন ( ঢাকা থেকে আসে একজন), ২৪ এপ্রিল একজন, ২২ এপ্রিল ৩ জন, ২১ এপ্রিল ১ জন, ১৩ এপ্রিল ৪জন, ১৮ এপ্রিল ১ জন, ১৭ এপ্রিল ১ জন, ১৬ এপ্রিল ১ জন, ১৫ এপ্রিল ৫ জন, ১৪ এপ্রিল ১১ জন, ১৩ এপ্রিল ২ জন, ১২ এপ্রিল ৫ জন, ১১ এপ্রিল ২ জন, ১০ এপ্রিল ২ জন, ৭ এপ্রিল ৩ জন, ৫ এপ্রিল ১ জন, ৪ এপ্রিল কোনো পজেটিভ পাওয়া যায়নি ও ৩ এপ্রিল একজন আক্রান্ত হয়েছিল।

সিভয়েস/এসজেবি/এডি


 

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়