Cvoice24.com


পশুরহাট: ক্রেতা কমের শঙ্কা, অনলাইনে বাহারি গরু!

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ৮ জুলাই ২০২০
পশুরহাট: ক্রেতা কমের শঙ্কা, অনলাইনে বাহারি গরু!

করোনার আঁচে ভেঙ্গে চুরমার অর্থনীতির চাকা। কাজ হারিয়ে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে বাজছে করুন সুর। কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছে অনেকেই। আবার সামর্থ্যবানরা সীমিত পরিসরে কোরবানি পালনের চিন্তা ভাবনা করছেন। এ অবস্থায় আসন্ন কোরবানি ঘিরে স্নায়ু চাপ বেড়েই চলেছে চট্টগ্রামের খামারিদের। এবার হয়তো সামলাতে হবে বিরাট ধাক্কা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে এবারে অন্য রকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে খামারিদের। করোনার উদ্ভূত পরিস্তিতিতে আয় কমেছে সাধারণ মানুষের। আগে যারা একক ভাবে কোরবানি করতো তারা যৌথভাবে কোরবানি দেওয়ার চিন্তা করছে। তাছাড়া একেবারেই সামর্থ্য হারিয়েছে অনেকে। আবার যারা একাধিক পশু কোরবানি করতো তারাও সীমিত আকারে কোরবানির কথা ভাবছেন।

অন্যদিকে প্রায় ৪ মাস ধরে চট্টগ্রামে আয়োজন হয় নি কোন বিয়ে-মেজবান কিংবা ঝাঁক-জমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী,  এই ৪ মাসে রয়ে গেছে প্রায় ৪৫ হাজার গবাদি পশু। চট্টগ্রামে ৮ হাজার ৭১ টি খামারে কোরবানির জন্য মোটাতাজা করা হয়েছে  ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২২ টি গবাদিপশু। গত বছর এই সংখ্যা ছিলো ৬ লাখ ১০ হাজার ২১৯ টি। 

এইবারে উৎপাদন বেশি ৭৮ হাজার ৮০৩ টি। তাছাড়া পাশাপাশি আরও ৪১ হাজার গবাদি পশু দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চট্টগ্রামের কুরবানি হাটে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। খাতা-কলমের এই হিসাবের বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে  যুক্ত হতে পারে আরও ১ লাখ গবাদি পশু। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে গরুর হাটে থাকবে সাড়ে ৭ লাখের বেশি হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশু। তবে গত বারের মত এবার চট্টগ্রামে কোরবানিতে গবাদি পশুর চাহিদা হয়েছে ৭ লাখ ৩১ হাজার- জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। যদিও প্রকৃত চাহিদা আরও কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা। 
 
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী,  স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত গরুর সংখ্যা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭২টি। মহিষ আছে ১৩১ টি। অন্যদিকে ছাগল মজুদ আছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯৪৪ টি, ভেড়া মজুদ আছে ৪১ হাজার ২৬৬ টি।  সেই সাথে অন্যান্য পশু (গয়াল) আছে ১০৯ টি।

একদিকে করোনার কারণে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা অন্যদিকে কোরবানিকে কেন্দ্র করে চাহিদার তুলনায় বেশি গবাদিপশু। সংশ্লিষ্টরা বলছেন করোনার উদ্ভুত পরিস্তিতিতে ছাগল-ভেড়ার বাজারে বেশি চাপ সৃষ্টি  হতে পারে। 

অন্যদিকে খামারিরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন এবারের গরুর বাজার জমজমাট না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে। তারা বলছেন, করোনার কারণে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হতে পারে।

সব মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় মজুদ বেশি। তাই পরিস্থিতি কিভাবে সামলানো হবে?- এমন প্রশ্নের উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক জানান, 'এবারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ভালো। তাই চট্টগ্রামের বাইরে থেকে যেন বেশি পরিমাণে গরু না আনা হয় সেদিকে লক্ষ রাখছি। '  এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'এই পর্যন্ত ৪১ হাজার গরু চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। যাতে বেশি না আসে সেইটাও আমরা চেস্টা করছি।'

বেচা কেনার ভরসা সোশ্যালে,  আছে বহু শঙ্কা----

করোনা সংক্রমণ এড়াতে অনলাইনে কোরবানি পশু বেচা কেনায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সময়ে খামার ব্যাবসায়ে ঝুঁকেছে তরুণ উদ্দ্যোক্তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর এসব তরুণের হাত ধরে অনেকটাই বদলেছে আগেকার সেই কোরবানি পশু বেচা কেনার চিত্র। তবে বেড়েছে অনলাইন প্রতারণা। সেই সাথে সরকার কিংবা চসিকের বিরাট অর্থের রাজস্ব হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

তবে অনলাইন প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ সর্তকতার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (এডিসি দক্ষিণ) আসিফ মহিউদ্দীন সিভয়েসকে বলেন, 'আসন্ন কোরবানি ঈদে অনলাইনে পশু বেচা কেনায় সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। ভুইফোঁড় অনলাইন পেইজে কোন অবস্থায় এডভান্স পেমেন্ট করা যাবে না। লেনদেন করার আগে পেইজগুলোর কিংবা গ্রুপগুলোর রিভিউ অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে। সব মিলিয়ে অনলাইনে বেচা কেনা করতে হলে অবশ্যই সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায় যে কেউ প্রতারিত হতে পারেন।'


তবে অনলাইন বেচাকেনায় ভর করে নানা সংকটের মধ্যেও গত বছরের মতোই চট্টগ্রামে পশু জবাই হতে পারে বলে দাবি করেন জেলা প্রাণিসম্পদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে  আশার বাণী শুনিয়ে তিনি বলেন,  'মানুষ এখন অনেক সচেতন, এবার কোরবানিতে হাট-বাজারে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করবে না ক্রেতা। পাড়া গ্রাম কিংবা খামার থেকে কেনার আগ্রহ বেশি থাকবে। খামারে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে। ইতোমধ্যেই অনলাইনে অনেকে সাড়া দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ১ হাজারের উপর গরু কিনেছেন ক্রেতারা গত বছর প্রায় ৪ হাজারের মতাে গরু অনলাইনে বেচাকেনা হয়েছে। এবার সংখ্যাটি আরও বাড়বে।'

চট্টগ্রাম নগরীতে ছোট বড় ১২/১৪ টি এগ্রো ফার্ম রয়েছে। এসব খামার উদ্যোক্তারা বলছেন, এবার অনলাইনে গরু বেচা-কেনা বেশ জম জমাট হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল সাইটগুলোতে যোগাযোগ করে অনেকেই খামারে এসে কোরবানি পশু পছন্দ করে গিয়েছে। কিছু গরুর বুকিং হয়েছে। অর্ডারের এসব গরু কোরবানির ২/৩ দিন আগে পৌঁছে দেওয়া হবে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। টাকা নিয়ে কোন ঝামেলা হবে না। কারণ ক্রেতারা সরাসরি দেখে নিচ্ছে। তাছাড়া কার্ড দিয়ে টাকা দেওয়া অথবা ক্যাশ অন ডেলিভারির ব্যবস্থাও রয়েছে।

অনলাইনে বিভিন্ন পশু বিক্রির বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মূল্যের গরুর ছবি দেওয়া রয়েছে। ছবির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে গরুর পরিচিতি। গরুর দর দামের পাশাপাশি ক্রেতারা জানতে পারছেন- গরুর জাত, রং,  উচ্চতা,  ওজন এবং বয়স। প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনে দাবি করছে, এসব গরুর বিশেষত্ব হচ্ছে অর্গানিক খাবার খাওয়ানো এবং গৃহ পরিবেশে লালন-পালন করা হয়েছে।

শাহারা এগ্রোফার্মের মালিক আলিফ ইকবাল চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন,  '২০১৭ সাল থেকে আমারা  অনলাইনে পশু বিক্রি শুরু করি,  আমরা ৩ বছর ধরে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করছি। ক্রেতাদের সাড়া প্রতিবছরই বাড়ছে। এবার ১ হাজারের বেশি কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন রয়েছে আমাদের সাইটে। কোরবানির জন্য গরুর ছবি আপলােড করা হয়েছে। এখানে প্রতিটি গরু ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চাওয়া হয়েছে।'

অন্যদিকে অনলাইনে এসব বাহারি বিজ্ঞাপনে ভরসা করতে পারছেন না অনেকেই। ক্রেতাদের একটি অংশ প্রশ্ন তুলছেন অনলাইনে প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে। একটি পশু দেখিয়ে  পশু হাত বদলের চেস্টা করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বাকলিয়ার বাসিন্দা মাইনুদ্দিন বলেন,  এগ্রোফার্মের ওয়েব সাইটে কোরবানি পশু দেখে তাদের ফার্মে গিয়েছিলাম পশুটি দেখতে। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারি সরাসরি আর ছবির গরুর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। অথচ দাম হাঁকা হয়েছিল  ছবির সাথে মিলিয়ে! একটু উৎসাহী হয়ে সোশ্যালেই দরদাম করলে হয়তো কোন গ্যাঁড়াকলে পড়ে যেতাম।'

এদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে  শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে  চলার আহবান জানিয়ে 
সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেন  ' আমরা অনলাইনকে উৎসাহিত করবো। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তাকে বলেছি, নিবন্ধিত খামারিরা যেন অনলাইনে বিক্রি করেন। অন্যান্য বছর তারা হাটে নিয়ে গরু বিক্রি করেছেন। ' সব মিলিয়ে  বলা চলে এবারের কোরবানি পশু কেনা বেচার ভিন্নরকম অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারেন নগরবাসি। 


এপি/এনআর

আসিফ পিনন ও নাজমুল রাতুল

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়