Cvoice24.com


করোনা ও বকেয়ার ভয়ে চামড়া কেনা নিয়ে দোটানায় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২০ জুলাই ২০২০
করোনা ও বকেয়ার ভয়ে চামড়া কেনা নিয়ে দোটানায় ব্যবসায়ীরা

করোনা ভাইরাস সৃষ্ট মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে আকাল সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব পড়বে চামড়া শিল্পে। অর্থনৈতিক মন্দার ফলে ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বিলাসবহুল পণ্যের চাহিদা ব্যাপকহারে কমে গেছে। ক্রমশ কমতে থাকা এ চামড়ার ব্যবসা নিয়ে শঙ্কিত বর্তমান চামড়ার ব্যবসায়ীরা। 

অন্যদিকে ট্যানারি মালিকরা এখনো আগের পাওনা পরিশোধ করেনি, পাশাপশি মন্ত্রণালয় এখনো চামড়ার দাম নির্ধারণ করেনি । অর্থনৈতিক মন্দা ও বকেয়ার কারণে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে দোটানায় পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।

আড়তদার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের আড়তদারদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এফবিসিসিআই’র সমঝোতায় চার কিস্তিতে পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও প্রথম কিস্তির বেশিরভাগ চেকে টাকা মেলেনি। সুতরাং মাত্র ১০ শতাংশ টাকা পেয়েছেন পুরো দেশের অধিকাংশ চামড়ার আড়তদাররা। বকেয়া টাকা পরিশোধ না হলে এবার আরো খারাপ চিত্র দেখা দিতে পারে।
 
আড়তদাররা বলছেন, সংকট কাটাতে ঈদের আগে অন্তত ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ কারা উচিত ট্যানারি মালিকদের। অন্যথায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করতে পারবেন না ।

চলতি বছরেও চামড়া সংগ্রহ করে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে চট্টগ্রাম চামড়া আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, ‘এবার কীভাবে ব্যবসা করবো বুঝতে পারছি না। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। তারমধ্যে ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি। ইউরোপিয়ান দেশগুলো চামড়া ব্যবসার মতো বিলাসবহুল পণ্যের ব্যবসা করতে চাচ্ছে না। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়নি। করোনার কারণে গতবারের তুলনায় কোরবানির সংখ্যা কমতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বকেয়া টাকা আদায় না হলে এ বছরও পর্যাপ্ত পরিমাণ চামড়া কিনতে পারবেন না আড়তদাররা। ব্যাংক গত কোরবানির পর এ খাতে ট্যানারি মালিকদের ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। এফবিসিসিআই’র সমঝোতায় চার কিস্তিতে পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও তারা এখনও ১০ শতাংশের বেশি টাকা পরিশোধ করেননি। বকেয়া না পেলে আড়তদাররা চামড়া কিনবেন, না লবণ কিনবেন? ট্যানারি মালিকদের কারণে এ চামড়া শিল্পে বিপর্যয় নেমে এসেছে।’

প্রসঙ্গত, গত বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় বেচাকেনার ঘোষণা দিয়েছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় কম দাম নির্ধারণ করা হলেও তা কার্যকর করেননি এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। ফলে চট্টগ্রামের মতো সারাদেশে কোটি কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়ে যায় বলে দাবী করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া খাতে মোট রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৯ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে মাত্র ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ আয় কমেছে ২৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। ইপিবি সূত্র আরও জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছর চামড়ায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪০ দশমিক ২৮ শতাংশ, চামড়াজাত পণ্যে রফতানির প্রবৃদ্ধি কমেছে ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ফুটওয়্যার রফতানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে এবার সম্ভাব্য কোরবানির পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে সাত লাখ ৩১ হাজার। এর মধ্যে রয়েছে গরু চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭২টি, মহিষ ৫৭ হাজার ১৩১টি, ছাগল ও ভেড়া এক লাখ ৬৭ হাজার ২১০টি এবং অন্যান্য ১০৯টি। আর গত বছর সাত লাখ ৩০ হাজার ৭৮৯টি পশু জবাই হয়েছিল।

সিভয়েস/এসবি/এসএএস

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়