Cvoice24.com


ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসতি : মাইকিংয়েই সীমাবদ্ধ কার্যক্রম! 

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ২৫ আগস্ট ২০২০
ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসতি : মাইকিংয়েই সীমাবদ্ধ কার্যক্রম! 

সারা বছর নিশ্চুপ থাকলেও বর্ষা এলেই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরাতে নড়চড়ে বসে প্রশাসন। শুরু হয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরির্দশন, মাইকিং, সচেতনতা আর আশ্রয়কেন্দ্র খোলার তোড়জোড়। এবারও শুরু হয়েছে প্রশাসনের এসব কার্যক্রম। ভারী বৃষ্টিপাতে ভূমি ধসের শঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে কয়েক দফায় মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন। 

বৃষ্টিকালীন সময়ে ১৭টি পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবৈধ বসবাসকারীদের রাখতে প্রস্তুত রাখা হয় ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে সরে বিপদকালীন সময়ে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসার অনুরোধ জানানো হয়। তবে মাইকিং এর এসব কথা কানে নেয়না কেউই।

এদিকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রভাবশালীদের দখল করা জায়গায় কম ভাড়ায় থাকেন তারা। ফলে প্রতিবছর পাহাড় ধসের আশঙ্কা সত্ত্বেও, সরানো যাচ্ছে না এসব মানুষদের। উচ্ছেদের পরপরই আবারো নিজ উদ্যোগে বসতি গড়ে তুলেন তারা। প্রশাসনের কার্যত কোন পদক্ষেপ না থাকায় এসব অবৈধ স্থাপনা ঘিরে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ভূমিদস্যুরা।

নগরের ১৭টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে ৮৩৫টি পরিবার। এর মধ্যে পাহাড় রক্ষা কমিটির সুপারিশের আলোকে গত ১৭ ও ২৪ জুন নগরীর বায়োজিদ-ফেজদারহাট লিংক রোড এলাকায় ৩৫০টি বসতি উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন উত্তর পাহাড়তলী এলাকা উচ্ছেদের কথা জানালেও, ফয়েজলেক ও আশপাশের এলাকায় বিস্তীর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছে আরো অনেক পরিবার। স্থানীয়দের দখলে নেয়া এসব পাহাড়ে বিভিন্ন এনজিওর অর্থায়নে গড়ে তোলা হয়েছে নানা প্রকল্প। এছাড়াও গড়ে উঠেছে ঘর, স্কুল, স্যানটারি টয়লেটসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়।

ভারী বৃষ্টিপাতের সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার কথা বলা হলেও পরবর্তীতে নেয়া হয়নি কোন আইনি পদক্ষেপ। দখলমুক্ত করা যায়নি রেলওয়ের এসব ভূমি। কারণ হিসেবে রেলওয়ে জানিয়েছে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদাশের কথা।

জানতে চাইলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ভূ সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, উচ্চ আদালতের দুইটি রিটের কারণে উচ্ছেদ অভিযানের কাজ বন্ধ রয়েছে। এরপরেও আমরা জেলা প্রশাসনের সহায়তায় মাইকিং করেছি। লিজের বাহিরে জায়গাগুলো উচ্ছেদে এ মাসে আমরা অভিযানে যাব। দেখা যায়, অভিযান শেষে আবারো তারা বিভিন্নভাবে সেখানে অবস্থান নেয়। আদালতে রিটের নিষ্পত্তি হলে জায়গাগুলো উদ্ধারে কার্যত ব্যবস্থা নেওয়া যাবেও বলে জানান তিনি। 

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, নগরীর ১৬টি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবস্থান করা এক হাজার ৮৫ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মাঝে লকডাউনের কড়াকড়ির সময়ে নগরীর বেশ কিছু পাহাড় কেটে আরও জনবসতি গড়ে উঠেছে বলে দাবি করেছেন সংস্থাটি।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক নুরুউল্লাহ নূরী সিভয়েসকে বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে খুলশী এলাকায় মাইকিং করেছি। উত্তর পাহাড়তলীর দুপাশে অভিযান চালিয়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে আইনি জটিলতায় খুলশী এলাকার উচ্ছেদ অভিযান আটকে আছে। এর মধ্যে লকডাউনে পাহাড় কেটে আর বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা গড়ে  উঠেছে। 

পুর্নবাসনের দাবি বিশেষজ্ঞদের

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি চিহ্নিত করে স্থায়ী পুর্নবাসনের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। নিম্ন আয়ের হওয়ায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই পাহাড়ের পাদদেশে থাকছেন তারা। নিম্ন আয়ের লোকজনকে এসব এলাকা থেকে সরাতে হলে স্থায়ী পুর্নবাসন কিংবা অল্প ভাড়াতে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল সিভয়েসকে বলেন, কেবল উৎখাত আর উচ্ছেদ করলে এর সমাধান হবে না। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব দুস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কোথায় থাকবে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, পাহাড়ে এরা ৩০০ থেক ৫০০ টাকা ঘরে ভাড়া থাকছে। বিভিন্ন সংস্থা পুর্নবাসনের কথা বলছে। কিন্তু স্থায়ী কোনো পুর্নবাসনের নজির কোথাও নেই। 

দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন দুস্থ ও গরীব মানুষদের বিল্ডিং করছে। কিন্তু ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ বসবাসের এই শহরে অন্তত ১৫ লক্ষের বেশি মানুষ অল্প বসতি এলাকায় থাকছে। খুব অল্প খরচে থাকতে পারে এমন একটি পরিকল্পনা সরকারের চিন্তায় থাকতে হবে। বিশেষ করে শহরের প্রান্তিক এলাকায় সরকারের এখনও কিছু জায়গা রয়েছে। ওই সব কম খরচের বসতি গড়ে দেিত হবে।

তিনি আরও বলেন, উচ্ছেদ অভিযানগুলোতে অনেকক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা রেলওয়ের পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে। যার ফলে পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা দিন দিন বাড়ছে। 

যা বলছে প্রশাসন

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন সিভয়েসকে বলেন, পুনর্বাসন করলেও যে একটা লাভ হবে তা কিন্তু না। এখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় রয়েছে। দেখা যাচ্ছে এখানে এক পক্ষকে পুর্নবাসন করলে, সেখানে অন্য পক্ষ এসে অবস্থান করছে। সরকারের লক্ষ্য হলো কেউ গৃহহীন থাকবে না। যারা এখানে বসবাস করছেন তারা এলাকায় চলে গেলে সরকারের সেখানে ঘর দিবে। এক্ষেত্রে পুনর্বাসন করে এ সমস্যার খুব একটা সমাধান হবে না।

আর লোকবলের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের লোকবল পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু ঘর উচ্ছেদের জন্য লেবার শ্রেণির লোকবল প্রয়োজন, তার অভাব রয়েছে। এরপরেও আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। 

সিভয়েস/এমএন

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়