Cvoice24.com


সাম্প্রদায়িক বিভক্তির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিলো 'স্যার আশুতোষ কলেজ'

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
 সাম্প্রদায়িক বিভক্তির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিলো 'স্যার আশুতোষ কলেজ'

ছবি: সিভয়েস

মুসলিম-অমুসলিম বিভাজন রেখে একাদশে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ। চট্টগ্রামের শতবছরের পুরনো বোয়ালখালী উপজেলার 'স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ'র ভর্তির এমন নিয়মে বিভ্রান্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। কয়েক বছর ধরেই এমন পৃথক ফি'তে মুসলিম-অমুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর অভিযোগও রয়েছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, এক কলেজে মুসলিম-অমুসলিমদের জন্য দুই নিয়ম হতে পারে না। কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে লাগে না কোনো ধর্ম-বর্ণ, মানে না কোনো জাত-পাত। শিক্ষা সবার জন্যই সমান। যেখানে শিক্ষাঙ্গন থেকেই শেখা হয় ইতিবাচক মূল্যবোধ, গণতন্ত্র, সমতা, মানবিকতা এবং নারী-পুরুষের সমতা ও ন্যায্যতা। আর এসব মূল্যবোধ চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর এমন শিক্ষাস্তর থেকেই মুসলিম-অমুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি বিভক্ত করে কিসের ইঙ্গিত দেয়া হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি শুরু হয়েছে। ভর্তির আগেই স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের ১০ সেপ্টেম্বরের এক নোটিশে বলা হয়েছে, বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের ২৬০১ টাকা এবং অমুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ২৫৫১ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকে ভর্তির ক্ষেত্রে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ২৩৪১ টাকা এবং অমুসলিমদের জন্য ২২৯১ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে মসজিদের জন্য বাড়তি ৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মুসলিম ও অমুসলিম হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া নোটিশে এমন কোনো কারণই উল্লেখ ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদ্য একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষা সবার জন্যই সমান। আর এ কলেজের ভর্তির নোটিশে এবং ভর্তি হতে এসে দেখতে হলো ধর্ম-বর্ণ আলাদা।

নোটিশে বিভক্তি ফি’র কারণ জানতে চেয়েও জানতে পারেননি বলে জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক। তাদের অভিযোগ, যেখান থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো কিছু শিক্ষা নিবে আর যেখানে এসেই ভুলে যাবে ধর্ম-বর্ণের কথা। অথচ সেখানেই যেন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বারবার পৃথক হতে শেখাচ্ছে ধর্ম-বর্ণ আলাদা।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক (ভাই) ওসমান আলী রাজু বলেন, ভর্তির নোটিশ পেয়ে ভর্তি করাতে এসেছি। মুসলিম-অমুসলিম ফি বিভক্তের বিষয়টি প্রথমে খেয়াল করিনি। পরে খেয়াল করলাম মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা বেশি। এ বিষয়ে কারো থেকে জানারও সুযোগ ছিল না। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নোটিশে কোনো কারণ বা বিবরণও দেয়া ছিল না।

স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক বছর ধরেই এমন পৃথক ফি'তে মুসলিম-অমুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হচ্ছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ না করে সমপরিমাণ ফি নির্ধারণ করার দাবিও জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে কথা হয় স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. পার্থ প্রতীম ধরের সাথে। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘এ নিয়ম আগে থেকে রয়েছে। কয়েকবছর ধরেই এভাবে নোটিশও দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলিমদের জন্য মসজিদ আছে, তাই মুসলিম ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মসজিদের জন্য ৫০ টাকা করে বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বাড়তি কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু কলেজে অমুসলিমদের কোনো উপাসনালয় নেই, তাই তাদের কাছ থেকে সেই টাকা নেওয়াও হচ্ছে না।’

অনেক অভিভাবক এ কারণ জানতে চেয়েও জানতে পারেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নোটিশে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি তবে রসিদে সব টাকার বিবরণ উল্লেখ আছে।

এ বিষয়ে সমাজতত্ত্ববিদ ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. ইমাম আলী সিভয়েসকে বলেন, নীতিগতভাবে এটা একরকম বৈষম্য। শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সবাই শিক্ষার্থী হিসেবেই পরিচিত৷ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হলে আলাদাভাবে অধ্যক্ষের নিকট আবেদন করে তার জন্য টাকা কমানোর সুপারিশ করা যায়। তবে ভর্তির জন্য আলাদা নোটিশ দিয়ে মুসলিম-অমুসলিমদের জন্য ফি বিভক্তি করার কোনো নিয়ম নেই। এটা পুরোটাই অযৌক্তিক। এটা কখনও হতে পারে না।

বাংলাদেশের সংবিধানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল নাগরিকদের জন্য শিক্ষা সমান। বাংলাদেশের সংবিধানেও কোনো শিক্ষার্থীকে আলাদা করে দেখে না। কলেজ কর্তৃপক্ষের দেখার দরকার নেই কোন শিক্ষার্থী কোন ধর্মাবলম্বী থেকে এসেছে, কোন পরিবার থেকে এসেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে পাঠদান সম্পন্ন করা, পরীক্ষা সম্পন্ন করা। এসব ধর্ম ভেদাভেদ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করতে পারে না, এটা অন্যায়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপ কলেজ পরিদর্শক মোহাম্মদ হালিমের সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। নোটিশে বিষয়টি উল্লেখ না করাই এমন সমস্যা হয়েছে। সেটা করলে কোনো প্রশ্ন তৈরি হতো না বা শিক্ষার্থীদের মাঝে এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতো না। তারপরও এ বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।

-সিভয়েস/এমএম/এসসি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়