Cvoice24.com


ওয়াসার এমডির দুর্নীতি আড়াল করতেই সাজানো আগুন?

প্রকাশিত: ১৫:১২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
ওয়াসার এমডির দুর্নীতি আড়াল করতেই সাজানো আগুন?

চট্টগ্রাম ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) হাইকোর্টের নির্দেশনার রাতেই ওয়াসা ভবনে লাগে রহস্য জনক আগুন। এতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বিভিন্ন প্রকল্পের ফাইল, ডকুমেন্ট রাখা কম্পিউটার - ল্যাপটপ, আলমিরাহ সহ অনেক কিছুই। তাই নিছক দুর্ঘটনা নয় বরঞ্চ দুর্নীতির প্রমাণ আড়াল করতেই এই আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে সব! মঞ্চস্থ করা হয়েছে আগুন লাগার সাজানো নাটক। এমনটাই দাবি উঠেছে ওয়াসার শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও। 

বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে আগুন লাগার ঘটনায় সন্দেহ আর অভিযোগের তীর এভাবেই ছুটছে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর দিকে। এ নিয়ে এমডি'র বিরুদ্ধে বেশ কিছু স্পর্শকাতর অভিযোগ তুলেছে চট্টগ্রাম ওয়াসার শ্রমিক ইউনিয়ন।

খোদ চট্টগ্রাম ওয়াসার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম সোজাসাপ্টা বলেছেন, 'বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টে রিটের শুনানি হয়। এতে দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর দুই ঘণ্টা না যেতেই ভবনে আগুন লেগে সব ফাইল পুড়ে গেছে। তা সম্পূর্ণ নাটক। তদন্ত করলে সব বের হবে।'

যদিও অগ্নি নির্বাপনের পর প্রাথমিক অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছিল শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অবশ্য পরে এই বক্তব্য থেকে সরে এসেছে সংস্থাটি।

ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমদ  বলেন, 'সরেজমিন পরিদর্শন করে আমরা কাছে মনে হয়েছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেনি। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে আমরা সেটি খতিয়ে দেখছি। আগুনে কিছু কাগজপত্র ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।' তবে যাই হোক না কেন চট্টগ্রাম ওয়াসার শ্রমিক ইউনিয়ন চাইছে ঘটনার সূত্রপাতের সুষ্ঠু তদন্ত।

এসব সন্দেহের বহু যুক্তিও তুলে ধরেছেন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম। তিনি সিভয়েসকে বলেন, '১৯৬৪ সালে ওয়াসার জন্ম, বর্তমানে ২০২০ সাল। এত বছর ওয়াসার ভবনে কোনদিন আগুন লাগেনি। দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে আগুন কেমনে লাগলো?'

দু'দিন আগেই ভোর রাতে পাঁচতলা ওয়াসা ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লেগেছিল। তৃতীয় তলার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি সিভয়েসকে বলেন, 'ওই রুমটা সরাসরি তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তিনি এমডি ফজলুল্লাহর ডান হাত। সেখানে আগুন কেমনে লেগেছে। সেটা অবশ্যই তদন্ত করা উচিত।'

অবশ্য এর আগেই ওয়াসা ভবনে আগুন লাগার কারণ রহস্যজনক বলে দাবি করে নগরবাসীর পক্ষে সাত জনের নাম উল্লেখ করে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।  

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টে রিট হওয়ার পর রিটের আদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ খবর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াসা অফিসের তৃতীয় তলায় আগুন লাগার ঘটনা রহস্যজনক। সুষ্ঠু তদন্ত বিঘ্ন ঘটানোর জন্য ফিল্মি স্টাইলে পরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগানো হয়েছে। বুধবার রাত ৮টা থেকে মেইন গেইট দিয়ে কারা আসা যাওয়া করেছে সিসিটিভি ক্যামেরা পরীক্ষা করলে আসল সত্য উদঘাটন হবে।'

আরও আগে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে হাসান আলী নামের এক গ্রাহক হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। 

এর প্রেক্ষিতে ওয়াসা এমডির অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে আগামী এক মাসের মধ্যে এসব তথ্য জানতে চেয়েছেন আদালত। ২৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। 

আগুনের সূত্রপাত কীভাবে তা চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সেটি জানে না। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তারা ইতোমধ্যে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুল্লাহ।

কিন্তু এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে  বক্তব্য জানতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহকে ফোন করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এতে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

-সিভয়েস/এপি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়