Cvoice24.com

গণমাধ্যম নিয়ে কর্মকর্তাদের মুখে তালা দিল চসিক

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১৭ অক্টোবর ২০২০
গণমাধ্যম নিয়ে কর্মকর্তাদের মুখে তালা দিল চসিক

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কর্মকর্তাদের এখন থেকে কথা বলতে হবে 'আইন মেনে'। তবে আইনটা কি তা স্পষ্ট করেনি চসিক। গণমাধ্যমে সরাসরি কোন বক্তব্য রাখতে পারবেন না তারা। এ খবরে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন কর্মরতদের অনেকে। চসিকের নগর ভবন জুড়ে এ নিয়ে চলছে মুখরোচক নানা আলোচনা-সমালোচনা।

চসিকের বক্তব্য হচ্ছে, গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে গিয়ে ফাঁস হচ্ছে চসিকের নানা ভেতরের খবর। চসিকের বিভিন্ন অনিয়ম এবং নাগরিক সেবা প্রদানে নানা সীমাবদ্ধতার কথাও বেরিয়ে আসছে। এমন বিব্রতকর পরিস্তিতি এড়াতে পুরানো আইন নতুন করে কর্মকর্তাদের ঘাড়ে চেপে দেওয়া হয়েছে। পুরোনো একটি আইনকে নতুন করে সামনে এনে অফিসিয়ালভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে গণমাধ্যমে আইন মেনে কথা বলতে হবে। যা চসিক প্রশাসক সুজনের সেচ্ছাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন অনেকেই। 

যদিও চসিকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন,  চসিকে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই গণমাধ্যমে কথা বলার যে আইন তা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে ।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মরত একজন জানান, চসিকে এই কাণ্ড শুরু হয়েছে মূলত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার প্রেক্ষিতে। তেল চুরি রোধে চসিকের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নানা ধরণের বক্তব্য দেন তিনি। 

এতে করে চসিকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে উল্লেখ করে মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর ) সুদীপ বসাকের কাছে একটি নোটিশ দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. মোজাম্মেল হক। তার স্বাক্ষরিত এই নোটিশে বলা হয়, "অদ্য ১৩/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখ দৈনিক আজাদী পত্রিকায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জ্বালানি তেল ও বিতরণ যাচাই বাছাই সংক্রান্তে 'তদন্ত প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর' এবং একই তারিখে দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় 
'তদন্ত প্রতিবেদন উদ্দেশ্য প্রণোদিত' শীর্ষক শিরোনামে (০২) দুই'টি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া একই বিষয়ে আরো অনেকগুলো পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। জ্বালানি তেল সংগ্রহ ও বিতরণের জন্য প্রশাসক মহোদয় কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি যথারীতি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে অভিযুক্ত কাউকে অদ্যবধি অত্র সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক কারণ দর্শানো হয়নি। তা স্বত্তেও আপনি জনাব সুদীপ বসাক,  তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) তদন্ত প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নানা ধরণের বক্তব্য পেশ করেছেন। যা কর্পোরেশনের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করেছে এবং একই সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন চাকরির বিধিমালা,  ২০১৯ এর সাধারণ আচরণ ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত ৩৬ (৬) বিধি এর পরিপন্থী।"এই চিঠির উত্তর চেয়ে ৩ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে চসিক।   

অন্যদিকে নাগরিক সেবায় নিয়োজিত চসিকের গাড়িগুলো থেকে চুরি হচ্ছে জ্বালানি তেল। মূলত এমন সন্দেহের জেরে তেল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও চুরি ঠেকাতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছে চসিক। এতে করে প্রশাসক সুজনের নির্দেশনায় চসিকে তেল সরবরাহের দায়িত্ব পায় হাক্কানি ফিলিং স্টেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তখন খোদ প্রশাসক সুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠে নিজের ব্যবসায়িক পার্টনার থেকে বেশি দামে তেল সংগ্রহ করছেন সুজন। যদিও তা অস্বীকার করে প্রশাসক সুজন দাবি করেছিলেন,  জ্বালানি তেল চুরির নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বচ্ছতা রক্ষায় নেওয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। 

এদিকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে মানা করার বিষয়টি জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. মোজাম্মেল হক সিভয়েসকে বলেন, "এটা নিয়ে আসলে ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমাদের তো অফিসিয়াল কনডাক্ট রুলস আছে। আবার তথ্য অধিকার আইন আছে। সবাই যদি কথা বলে অনেক সময় সঠিক কথাটা ঠিক মত আসে না। আর সবার কথা বলার এখতিয়ারও নেই। 

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "এটা অর্ডার না। এটা হচ্ছে আমাদের সরকারি কর্মচারীদের যে চাকরি বিধি এটা মনে করিয়ে দেওয়া। সবাই কথা বললে তো প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়।"

-সিভয়েস/এপি/এডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়