Cvoice24.com


আইয়ুব বাচ্চুর ‘আকাশে উড়াল’ দেওয়ার ২ বছর আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৮ অক্টোবর ২০২০
আইয়ুব বাচ্চুর ‘আকাশে উড়াল’ দেওয়ার ২ বছর আজ

‘রুপালি গিটার’ হাতে মঞ্চে আইয়ুব বাচ্চু গাইতেন ‘আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে'। ঠিকই লাখ ভক্ত অনুরাগীকে কাঁদিয়ে ২০১৮ সালের এদিনে (১৮ অক্টোবর) ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে আইয়ুব বাচ্চু যখন সত্যি-সত্যিই তাঁর ‘রুপালি গিটার’ ফেলে আকাশ পানে উড়াল দিয়েছিলেন।

তার একটি গানে বলেছিলেন ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’। তবে হ্যাঁ তিনি নয় তাঁর অকালে চলে যাওয়ায় ভক্ত-অুনরাগীরাই কষ্ট পেয়েছিলেন। আজ সেই আইয়ুব বাচ্চুর ‘আকাশে উড়াল’ দেওয়ার দুই বছর। তিনি যখন রূপালি গিটারের রাজত্ব ছেড়ে ‘জীবনের গল্পের’ ইতি টানলেন, তখন দেশের সংগীতাঙ্গন থেকে যেন ‘এক আকাশ তারা’ খসে পড়ল।

বাংলাদেশের রূপালী গিটারের ৬ তারের রাজা আয়ুব বাচ্চু এখন চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন তার মায়ের পাশে চট্টগ্রাম নগরীর চৈতন্যগলি কবরস্থানে। মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে ১৯৮৩ সালে ঢাকায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। আর যেদিন ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর শেষবার চট্টগ্রামের গাড়ি ধরেছিলেন, সেদিন নিয়ে গেছেন ১৬ কোটি মানুষের ‘রক্তগোলাপ’ ভালোবাসা।

আইয়ুব বাচ্চুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে সংগীতপ্রেমী, ভক্ত-অনুরাগীদের দোয়া-প্রার্থনা ও ভালোবাসায় ভরে ওঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাকে উৎসর্গ করে সংগীতের আরেক জাদুকর প্রিন্স মাহমুদ প্রকাশ করলেন ‘আলো’ শিরোনামের নতুন গান। তার কথা-সুরে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন আভাস ব্যান্ডের ভোকাল তানযীর তুহীন।

এদিকে সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষিত হচ্ছে আইয়ুব বাচ্চুর গান। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি সংগীত তারকা, যার গান সরকারি ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দারুণ এই খবরটি আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার ও তার ভক্ত-অনুরাগীদের জন্য ভীষণ আনন্দের।

ইতোমধ্যে ২৭২টি গান সংরক্ষিত আছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের উদ্যোগে আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে খোলা ওয়েবসাইটে। পরবর্তীতে তার নামে কপিরাইট করা গানগুলোই এখানে ছাড়া হবে। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি আইয়ুব বাচ্চুর নামে খোলা হয়েছে ইউটিউব চ্যানেলও। সংগীতের মহান এই তারকার প্রতি সম্মান জানিয়ে এই প্রথম কপিরাইট অফিসের উদ্যোগে তার নানা স্মৃতি, গান রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউটিউবে গিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর যত গান এবং ওয়েবসাইটে ঢুকে তার সম্পর্কে জানা যাবে অনেক তথ্য।

‘আগলি বয়েজ’ দিয়ে ব্যান্ড সংগীত শুরু করা আইয়ুব বাচ্চু ২৭ বছরের ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ‘এলআরবি’-তে। এর মাঝে ‘ফিলিংস (নগর বাউল)’ ও ‘সোলস’-এর হয়ে গিটার হাতে মঞ্চে উঠেছেন। তারপর ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল তিনি নিজেই গঠন করেছেন ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’, যা পরে ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ বা ‘এলআরবি’ নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর পরের ইতিহাস তাঁর গানের অ্যালবাম ‘আমাদের বিস্ময়’-এর মতো। এলিফ্যান্ট রোডের হোটেলে ঢাকার জীবন শুরু করা চট্টগ্রামের রবিন হয়ে ওঠেন দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা গিটারবাদক।

আইয়ুব বাচ্চু মূলত রকস্টার। কিন্তু ব্যান্ড কিংবা রক তারকা হলেও অন্যান্য ঘরানার গানেও তিনি পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষ করে আধুনিক এবং লোকগানে তিনি দক্ষতার প্রমাণ রেখে গেছেন। নিজের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অন্যান্য শিল্পীদের জন্য আধুনিক, লোক এবং ক্লাসিক্যাল ঘরানার গানও তৈরি করেছেন তিনি। 
 
জিমি হেন্ডরিক্স, জো স্যাটরিনি, স্টিভ মুর তার গানের আদর্শ ছিলেন বলে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে আইয়ুব বাচ্চু জানিয়েছেন। সুখের চেয়ে বেদনার চিত্রই গিটার জাদুকরের গানে বেশি ফুঠে উঠেছে। যেনো গানের গল্পেই লুকানো তার জীবন। জীবনের এপাশ-ওপাশ। হয়তো এ কারণে তার হতাশার গানগুলো চোখ বুজেই লুফে নিয়েছেন শ্রোতারা।

আইয়ুব বাচ্চুর অধিক জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘সেই তুমি’, ‘কষ্ট’, ‘নীল বেদনা’, ‘আসলে কেউ সুখী নয়’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘সেই রুপালী গিটার ফেলে’, ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে’ ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ফেরারী মন’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের এনায়েত বাজারে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। তার বাবার মোহাম্মদ ইসহাক ও মা নূরজাহান বেগম। সংসার জীবনে তিনি স্ত্রী, ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব নামে এক কন্যা ও আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব নামে এক পুত্র সন্তান রেখে গেছেন।

২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর মাত্র ৫৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশীয় ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম দিকপাল, গিটার জাদুকর-এলআরবি’র প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু। আইয়ুব বাচ্চু ‘ঘুমন্ত শহরে’ নেই দুই বছর, তবে তাঁর গানের মতো তাঁকে ‘বারো মাস’ ভালোবেসে স্মরণে রাখছে তাঁর ‘ময়না’ ও ‘রিমঝিম বৃষ্টি’রা।

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়