Cvoice24.com

তারুণ্যকে টেনে নামানোর অপসংস্কৃতির রাহুগ্রাসে ‘এলিট’

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ১৭ নভেম্বর ২০২০
তারুণ্যকে টেনে নামানোর অপসংস্কৃতির রাহুগ্রাসে ‘এলিট’

একটি কৌতুক জীবনে চলার পথে দেখলাম বারবার সত্য প্রমাণ হয়, একজন আরেকজনকে জিঙ্গেস করছে, বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু কেন? উত্তরে অপরজন বলল, একজন তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইলে আর ৩/৪ জন তাকে টেনে ধরে। এ কৌতুকটার বাস্তবতা জীবনে হারে হারে টের পেয়েছি। তবে কৌতুকটার বাস্তবতায় বেশি শিকার হতে হয়, জীবন যুদ্ধে সমপর্যায়ীদের মাঝখান থেকে উঠে আসা তারুণ্যকে। একদম সমাজের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত। নিজের অবস্থান থেকে কাজ ও মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে একটু উপরে উঠলেই এ টানাটানি বেশি শুরু হয়। এ সময়ের প্রতিকূলতা কাটিয়ে যে তারুণ্য নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে সেই সফল।

তারুণ্যকে টানাটানির এ বাস্তবতার রাহুগ্রাসে সবসময় সম্মুখীন হতে হয় এমন একজনকে দেখেছি। তিনি হলেন- চট্টগ্রামেরই সন্তান বাংলাদেশের তারুণ্যের আইকন ‘নিয়াজ মোর্শেদ এলিট’। সম্পর্কটা আমার সাথে বেশি দিনের ছিল না। আমি প্রবাসে আসার আগে মাত্র এক কিংবা দেড় বছরের মত হবে। এ সময়টুকুতে আমি তার সাথে খুব কাছ থেকে মিশেছি। 

আমরা চায়ের দোকানে বা ফাইভ স্টার হোটেলে আড্ডায় বসলে দেখা যায়, বেশির ভাগ সময় পার করি একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নেগেটিভ কথাবার্তা বা সমালোচনার মধ্য দিয়ে। এলিট ভাইয়ের সাথে যখন আড্ডায় বা কথা বলতে বসতাম তখন দেখতাম, তিনি নেগেটিভ কাতবার্তা খুব কম বলতেন এবং অন্যের সমালোচনা খুব কম করতেন। তার এ গুণটা আমাকে খুব টানে। তবে মানুষ তো পরিবর্তনশীল ভাল মানুষ সময়ের আবর্তে খারাপ হয় আবার অনেক ভাল মানুষ আরও ভাল হয়। এলিট ভাইয়ের কাছে আমার ব্যক্তিগত প্রত্যাশা বড় হওয়ার সাথে সাথে তার মন-মানসিকতা যেন আরও পরিবর্তন হয়। 

আমি প্রবাস জীবনে প্রায় আড়াই বছর, তার আরেকটি কথা আমার খুব কানে বাজে, তিনি সবসময় বলতেন, মানুষকে ভালবাসতে হবে, মানুষের জন্য কিছু করতে পারাটাই জীবনের মহত্ব। মানুষকে নিয়ে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি ছিল, ‘প্রতিটি মানুষ হচ্ছে একেকটা পৃথিবী’। প্রত্যেকের মাঝে একেক রকম গুণাবলী আছে। তাই কাউকে অবমূল্যায়ন করার কোন সুযোগ নেই। মানুষের সম্পর্কে ভালো ধারণাটাই মূলত তার উঠে আসার মূল কারণ বলে আমি মনে করি। 

কোন যুবক বা তারুণ্য যদি কোন কারণে শিল্পপতির ছেলে হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সে অন্য মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না। কিন্তু এলিট ভাইয়ের ক্ষেত্রে আমি তার উল্টো চিত্রটি দেখেছি। 

তার আরেকটি বিষয় নিয়ে, আমি বেশ কৌতুহলী ছিলাম। তার বাবার বিএনপি রাজনীতি নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া বা ভেতরের চিন্তাধারা কি? এ প্রশ্নের উত্তর খুজঁতে গিয়ে তার এলাকার মানুষ জনের কাছ থেকে জানতে পারলাম, একসময় ওই এলাকার সাংসদের খুব কাছের মানুষ ছিল নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের বাবা। রাজনৈতিক মত পার্থক্য বা কোন একটা সমস্যার কারণে তিনি ক্ষোভ আর অভিমানে একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু এলিট আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় বিষয়টি তার জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠে। সেই থেকে তিনি বাবার ব্যবসা থেকে দূরে সরে এসে নিজেই নিজের ব্যবসা গুছিয়ে তুলেন। রাজনীতির আদর্শের জায়গা থেকে বাবার সাথে তার দ্বিমত দেখা দিলে পারিবারিকভাবে বাবা মার সাথে না থেকে তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন। এটাই আমার জানা মতে বাস্তবতা। 

এবার তাদের বাবা-ছেলের রাজনীতি নিয়ে আমার জানা আরেকটি বিষয় আপনাদের শেয়ার করি। এলিটের বাবা বিএনপির রাজনীতি করেন, এলিট আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। বিষয়টি নিয়ে ওনারা দু'জনকেই কিন্তু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এলিট আওয়ামী লীগ করে বলে, বিএনপির রাজনীতিতে বিষয়টি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেই এলাকার বিএনপির রাজনীতির ওনার বাবার প্রতিপক্ষরা। এমনকি এ বিষয়টি নিয়ে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এলিটের বাবা ইউসুফ বিএনপির মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয় বলে এলাকার মানুষের এমনটি ধারণা। অন্যদিকে এলিটের বাবা বিএনপির রাজনীতি করার কারণে এলাকায় আওয়ামী লীগে এলিটের প্রতিপক্ষরা বারবার একই অপবাদ দিয়ে এলিটকে নিয়ে নানা বিতর্ক তুলে। একটু সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, বিষয়টি নিয়ে দু'জনই দুই দিক থেকে সমস্যায় রয়েছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে এলিটকে দোষারোপ করা একেবারেই অবান্তর।

সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রিয় সদস্য হলে এলিটকে নিয়ে একটি মহল নানা রকম প্রশ্ন  তুলে, যা তরুণ সমাজের কাছে অগ্রহণযোগ্য। আরও হাস্যকর বিষয় হলো, তিনি আওয়ামী রাজনীতির সাথে নতুন নন। আরও দুই বছর আগে থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়াও ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগ করতেন।

তারপরও ওই যে আমরা তারুণ্যকে টেনে নামানোর অপসংষ্কৃতির রাহুগ্রাস থেকে যে মুক্ত হতে পারছি না। ধীরে ধীরে এটা আমাদের জাত-স্বভাবে পরিণত হচ্ছে। তবে বিষয়টি এখন বাংলাদেশের তরুণ সমাজ বুঝতে পারছে। এ অপসংষ্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছে তরুণ সমাজ। তাই আমি বলব, এ সময়ে একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা ও সফল সংগঠক  হিসেবে দেশের তারুণ্যের আইকন নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের প্রতি বাংলাদেশের সকল তারুণ্যের সাপোর্ট দেয়া উচিত। আগামীতে এ তারুণ্যেই এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশকে, এ প্রত্যাশা রাখছি।

লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক

মফিজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়