‘ছোট স্বপ্ন নয়, বড় স্বপ্নই বাস্তবে রূপায়িত হয়’
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, ‘স্বপ্ন দেখলে ছোট দেখবো কেন, বড় বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। কারণ বড় বড় স্বপ্নই বাস্তবে রূপায়িত হয়।’ ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে সফলতা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় চলে। ৫৪ বছর আগে এটি শুধুমাত্র ৭ জন শিক্ষক ও ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। আজ এখানে ২৭০০০ শিক্ষার্থী, ৩০০০ শিক্ষক-কর্মচারী, ৯টি অনুষদ, ৫৪টি বিভাগ, ১টি হোস্টেলসহ ৮টি হল এবং ৬টি ইনিস্টিউটের বিশাল ক্ষেত্রে রূপলাভ করেছে।
আজ বুধবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউটে চবি এলামনাই এসোসিয়েশনের আয়োজনে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গর্ববোধ করে চবি উপাচার্য বলেন, আমরা উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে সবসময় কঠোর। গত ৫০ বছরে কোন পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের নজীর নেই আমাদের। আমরা মানকে রক্ষা করে চলি, বিশ্ব একদিন আমাদের স্বীকৃতি দিবে। গত ৫০ বছরের ইতিহাস আমাদের জন্য সুবর্ণমণ্ডিত ও গৌরবজনক। আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি চার বছর আগে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়। যদি এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত না হতো শিক্ষার্থী ঢাকামুখী বা বিদেশগামী হয়ে পড়তো।
উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান হায়ারিং করেছি। গত দেড় বছর এটা নিয়ে কাজ চলছিল। এটি একটি চলমান ধারা। বর্তমানে মাস্টার প্ল্যানটি রিভাইজড পর্যায়ে আছে। এটি শেষ হলে আমরা তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো, সাথে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও।
এই সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন প্রকল্প ও বাস্তবায়নের স্বপ্ন ও আশ্বাস নিয়ে তিনি বলেন, এখানে ১০০ একর জায়গা নিয়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণ হতে যাচ্ছে। গত ১৪ তারিখ আমরা এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। তবে প্রথমে ৬০ একর নিয়ে হাইটেক পার্ক প্রকল্প শুরু হবে। আমাদের ক্যাম্পাসে বর্তমানে ২১০০ একর জায়গা নেই, আমরা ভূমি অধিগ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছি ১৭৫০ একর। এর ভিতরেই আমাদের মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। এক থেকে দু’বছরের মধ্যে হাইটেক পার্ক বাস্তবে রূপলাভ করবে।
তিনি আরও বলেন, সমুদ্র বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কক্সবাজারে ১০ একর জায়গা জুড়ে ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা রিসার্স সেন্টার’ নির্মাণ করতে যাচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে পজিটিভ অঙ্গীকার পেয়েছি। অল্প সময়ে কক্সবাজার প্রশাসন থেকে জায়গা বুঝে নিব। এখানে দেশের বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ চাষ ও গবেষণা করা হবে। এছাড়াও মেরিন সাইন্স অনুষদে যুক্ত করা হবে দু’টি ভ্যাসেল জাহাজ।
বক্তব্যে চবি উপচার্য বলেন, চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ তলা বিশিষ্ট রিসার্চ সেন্টার নির্মিত হবে। চীন আমাদের এই অঙ্গীকার দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে খরস্রোতা ছড়া বা খাল থেকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প করার পরিকল্পনাও রয়েছে আমাদের মাস্টারপ্ল্যানে।
ড. শিরীণ আখতার আরও বলেন, চবি মেডিক্যালে বর্তমানে ১৪ বেড, এটি ভবিষ্যতে ২০০ শয্যায় পরিণত করা হবে। চবি এলামনাই এসোসিয়েশন মেডিক্যালে ৫০ কোটি টাকা সহয়তার আশ্বাস দিয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণকালীনে দেশের বাইরের এলামনাইরা চবিকে ইতোমধ্যে ৫০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এছাড়াও এখানে দুইটি টিএসসি নির্মাণ হবে শীঘ্রই। একটি ক্যাম্পাসে আরেকটি শহরে। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আমাদের এগোতে হবে।
চাকসুর সাবেক ভিপি মো. নাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং চবি এলামনাই এসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক সাইফুদ্দিন সাকী’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চবি এলামনাই এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আবুল কদর, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সগীর আহমদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
-সিভয়েস/এইচবি/এমএম
সিভয়েস প্রতিবেদক