Cvoice24.com


মাদকবিরোধী যুদ্ধের আড়ালে চলছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড: রিজভী

প্রকাশিত: ১১:৪১, ৩ জুন ২০১৮
মাদকবিরোধী যুদ্ধের আড়ালে চলছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড: রিজভী

-ফাইল ছবি

মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কক্সবাজার টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হত্যা নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কাদেরের বক্তব্য ‘মানবাধিকারের সঙ্গে ঠাট্টা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

আজ রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যা সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ ধরনের মহৎ অভিযানে দুই একটি ভুল হতেই পারে। মানুষের জীবন নিয়ে ভুল! ওবায়দুল কাদের সাহেবের এমন বক্তব্য মানবাধিকারকে ঠাট্টা করা। খুনি-সন্ত্রাসীদের ন্যায় বেআইনি হত্যাকে স্বীকৃতি দেয়া।

তিনি বলেন, কাউন্সিলর একরামুল হত্যার অডিও শুনে, তার স্ত্রী ও মেয়েদের কান্না শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, বিশ্ববিবেককেও নাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু একরামুল হত্যাই নয় এখন পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানের নামে প্রায় ১৩০ জনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

গত চার মাসে ২৫০ জন মানুষকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে এমন দাবি করে রিজভী বলেন, এদের বেশিরভাগই তরুণ যুবক। তারা কে কতটুকু অপরাধের সাথে জড়িত সে সম্পর্কে জনগণকে অন্ধকারে রেখে বিনা বিচারে হত্যার পেছনে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। নিহত পরিবারগুলো শোকের সাগরে ভাসছে। মানুষের দুঃখ কষ্টকে নিয়ে এমন মন্তব্য তারাই করতে পারে, যারা অবৈধ ক্ষমতায় মশগুল থেকে মানবিক গুণাবলী হারিয়ে ফেলে।

রিজভী বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে সরবরাহের উৎস পথ আটকে যাচ্ছে না কেন? কারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাদক ঢুকতে সহায়তা করছে? রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কি উৎসমুখ খোলা থাকে! এই উৎসমুখগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন বদিদের মতো এমপিরা প্রশাসনের সহায়তায়। বদিসহ ক্ষমতাসীনদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কীভাবে এতগুলো গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশ ছেড়ে গেল জাতি তা জানতে চায়। সরকারই গডফাদারদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।

রিজভী বলেন, আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে একটি এতিম জেনারেশন তৈরি করতে চায়। বেআইনি হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সরকার তাদের টিকে থাকার সমাধান খোঁজে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে অন্যায়ের প্রতিশোধ প্রকৃতি নিজেই নেয়। একটি বেআইনি হত্যা আরও অনেক হত্যার বিস্তৃতি ঘটায়।

তিনি আরো বলেন, মাদকের বিস্তার ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের সহায়তাকারী হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য। তাদের এই সাড়ে নয় বছরে মাদকে ছেয়ে গেছে দেশ। প্রতিবেশী দেশ  ভারত থেকে ফেনসিডিল ও মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আমদানিকে মদদ দিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। কথায় আছে কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে দুটি জিনিস ধ্বংস করতে হয়, এক হলো শিক্ষা, দুই হলো যুবসমাজ। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার এ দুটিই কাজই করতে পেরেছে দক্ষতার সাথে।

শিক্ষা ব্যবস্থাকে তারা পুরোপুরি ধ্বংস করে এখন মাদক ঢুকিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। আবার কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে এডহক ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে আরেক দফা উস্কে দিচ্ছেন ওবায়দুল কাদেররা।

একরামুল হত্যা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন একরামুল হত্যা তদন্ত করবেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট। এসব মনভোলানো কথায় জনগণের আতঙ্ক দূর হবে না। এ ধরনের বক্তব্য একটা তামাশা।

রিজভী বলেন, বেআইনি হত্যার জন্য তো সরকারই দায়ী। সরকারের আশকারাতেই কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে চলছে দেশব্যাপী মানুষ হত্যার বিভীষিকা। মাদকবিরোধী যুদ্ধের আড়ালে চলছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।

মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঈদের পর বিএনপি জোটের আন্দোলন দমনে একটি টেস্ট কেস বলেও দাবি করেন রিজভী।

খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকার কারসাজি করছে এমন দাবি করে রিজভী মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের পূর্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বেগম খালেদা জিয়ার ওপর যে জুলুম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হচ্ছে, তার জবাব দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে।

-সিভয়েস/আরসি/কেএম

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়