Cvoice24.com

হেফাজতের বিরুদ্ধে অলআউট অ্যাকশনে যাচ্ছে সরকার

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:১১, ৭ এপ্রিল ২০২১
হেফাজতের বিরুদ্ধে অলআউট অ্যাকশনে যাচ্ছে সরকার

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

আর সহনশীলতা নয় নানা ছুঁতোয় আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে শক্তহাতে দমন করা হবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে। ২০১৪ সালে বিএনপি জামায়াতের অবরোধের নামে সহিংসতার সময় যেভাবে সরকার অলআউট অ্যাকশনে (সর্বাত্মক অভিযান) গিয়েছিল; এবার হেফাজতের বিরুদ্ধেও সেই পথে যাচ্ছে সরকার। সরকার হেফাজতকে আইনগত ও দলীয় দুইভাবেই মোকাবেলা করবে। 

বুধবার (৭ এপ্রিল) সকালে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের সঙ্গে জরুরি টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে অধীনস্তদের কড়া বার্তা দিয়েছেন পুলিশের মহা পরিদর্শক ড. বেনজির আহমেদ। একইদিনে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকেও হেফাজতকে দমানোর বার্তা মিলেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক ও দলের অন্যতম মুখপাত্র মাহবুবুল আলম হানিফ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল পৃথকভাবে হেফাজতকে প্রতিরোধ করতে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তারা হেফাজতকে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিরোধের পাশাপাশি তালিকা করার নির্দেশনা দিয়েছেন নেতাকর্মীদের। 

জানা যায়, সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে নারীসহ হেফাজত নেতা মামুনুল হকের অবরুদ্ধের ঘটনায় গত ৪ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যের একটি বড় অংশ জুড়ে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে যে ধরনের বিক্ষোভ দেখিয়েছে তার সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘শনিবার মামুনুল হক অপবিত্র কাজ করে সোনারগাঁও এর রিসোর্টে ধরা পড়েছেন। এরা ধর্মের নামে এত কথা বলে, পবিত্রতার নামে এত কথা বলে, এখন অপবিত্র কাজ করে সোনারগাঁও এর রিসোর্টে ধরা পড়েছে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। এখন সেটা ঢাকার জন্য নানা রকম চেষ্টা করছে তারা।’ 

প্রধানমন্ত্রী সংসদে তার ভাষণে বলেন, ‘এত আগুন জ্বালাও-পোড়াও করে তিনি (মামুনুল হক) বিনোদন করতে গেলেন রিসোর্টে, একজন সুন্দরী মহিলা নিয়ে। এরা ইসলাম ধর্মের নামে কলঙ্ক। এরা ইসলাম ধর্মকে ছোট করে দিচ্ছে। এরা ধর্মকে কলুষিত করে দিচ্ছে, ধর্মের নামে ব্যবসা শুরু করেছে। বিনোদনের এত অর্থ কোথা থেকে আসে? আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। জনগণের সম্পত্তি নষ্ট করা এবং ধর্মের নাম নিয়ে অধর্মের কাজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ 

মূলত প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণের পরই নড়েচড়ে বসে সরকার ও তার দল আওয়ামী লীগ। হেফাজতের ‘নৈরাজ্য’ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। শাপলা চত্ত্বরে তাণ্ডবের পর দায়ের করা ৭৮ মামলার পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের হওয়া ২০টির অধিক মামলা হয়েছে। এরমধ্যে হাটহাজারীতেই ৬টি আর পটিয়াতে একটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় হেফাজতের নাম না থাকলেও হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রদের দ্বারা এসব তাণ্ডব সংঘটিত হয়েছে বলে এজহারে উল্লেখ ছিল। যদিও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার না করলেও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের এসপি রশিদুল হক। 

প্রশাসন মনে করে, সহিংসতা-সন্ত্রাস রাজনৈতিক সমস্যা নয়, তাই একে প্রশাসনিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলার জন্য মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে গণ্যমান্য ব্যক্তি, সরকারদলীয় নেতৃস্থানীয়দের সহযোগিতা চেয়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে হেফাজতে ইসলামকে দুর্বল করতে চায় সরকার৷ পাশাপাশি গ্রেপ্তারসহ অন্য বিষয় নিয়ে এগুচ্ছে পুলিশ। মামুনুল হকের রির্সোট কাণ্ডেই মূলত সরকার হেফাজতকে চেপে ধরার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। 

হেফাজতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় জোর দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর ও সফর পরবর্তী হেফাজতে ইসলামের নেতিবাচক কার্যক্রম এবং সর্বশেষ হেফাজত নেতা মামুনুল হক ইস্যু ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি হেফাজতের নেতাদের নামে যেসব মামলা হয়েছে বা আগে থেকে ছিল তা দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে তাদের আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। নতুন করে হেফাজত যদি কোনও আন্দোলনে যেতে চায় সেটাও শক্তহাতে দমন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

দেশের সব ইউনিট প্রধানদের সঙ্গে আইজিপির আজকের টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমেই মূলত হেফাজত বিরোধী পুলিশের অ্যাকশন শুরু হচ্ছে। এতোদিন হেফাজত ইস্যুতে পুলিশ অনেকটা সহনশীলতা দেখালেও এখন থেকে কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। হেফাজতে ইসলাম বিশেষ করে মসজিদ কেন্দ্রিক সভা-সমাবেশ করে থাকে। বুধবার সন্ধ্যায় ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে মসজিদ কেন্দ্রিক নামাজের আগে ও পরে কোনও ধরনের সভা সমাবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।  

হেফাজতে ইসলামও মনে করে, সরকার তাদের এখন চাপে ফেলতে চাইছে৷ হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুখপাত্র মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, ‘সরকার হেফাজতের কর্মসূচিতে ভীত হয়ে মামলা, হামলা ও হয়রানি করে হেফাজতকে দমন করতে চাইছে৷ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা অভিভাবকসুলভ আচরণ আশা করি৷ কিন্তু তিনি সংসদে সবার প্রধানমন্ত্রী নয়, আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রীর মতো কথা বলেছেন৷ যা আমরা আশা করিনি৷’

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো হেফাজত ইস্যুতে আইজিপির টেলি কনফারেন্সের কথা নিশ্চিত করলেও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ও সিএমপি কমিশনারের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়