Cvoice24.com

‌‌‌‌‘দুর্বল’ নগর আওয়ামী লীগকে সবল করতে সম্মেলনের আভাস

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২০ জুন ২০২১
‌‌‌‌‘দুর্বল’ নগর আওয়ামী লীগকে সবল করতে সম্মেলনের আভাস

রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাংগঠনিক মত বিনিময় সভা বক্তব্য রাখছেন মাহবুবুল আলম হানিফ।

মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দাবি নানা সময়ে বিছিন্নভাবে উঠলেও কখন হবে তার স্পষ্ট ঘোষণা বা ইঙ্গিত মিলেনি কখনও। তবে দেশব্যাপী দল গোছানোর কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সম্মেলন চলতি বছরের মধ্যেই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তেমনি ভাবে আগামী বছরের শুরুতেই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগেরও সম্মেলন করতে চায় কেন্দ্র। 

রবিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দুই দিনের সাংগঠনিক মত বিনিময় সভার প্রথম দিনে এমনই ইঙ্গিত মিলেছে। তবে সেটার স্পষ্ট ঘোষণা আসতে পারে আগামীকাল নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের বৈঠকের পর। 

এদিন দুপুরে সার্কিট হাউজে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘সারাদেশে আওয়ামী লীগের কিছুটা হলেও সাংগঠনিক দুর্বলতা চোখে পড়েছে। টানা ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের অনেকের মাঝে আয়েশি মনোভাব চলে এসেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন আছে, ততদিন ক্ষমতায় আছি। ক্ষমতায় থেকে সংগঠন দুর্বল বা সবল বুঝা যাচ্ছে না। যার কারণে সংগঠনের দিকে সবার নজর একটু কম। যার ফলে অনেক জেলায় দেখেছি ১৫ ও ২০ বছর হয়ে গেছে, কমিটির কোনও পরিবর্তন নেই। সংগঠনের যে কার্যপদ্ধতি সেটাও কোন রকমে চলছে।’

সংগঠন গোছাতে চট্টগ্রাম সফরে থাকা এ নেতা আরও বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরে জেলা পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছি। সে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সম্মেলন করবো। আমরা মহানগরে প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন আগামি ডিসেম্বরের মধ্যে করতে চাই। সেটা করলে আপনাদের মধ্যে অনেক নেতা আছেন, যারা যথাযথ মূল্যায়ন বা পদোন্নতি  পাননি, তারা মূল্যায়ন পাবেন। সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনে গতিশীলতা আসবে। মূল্যায়ন হওয়ার সুযোগ আসবে। আমরা কাউকে চাপিয়ে দিতে চাই না। আমরা একজন অপরজনের সহকর্মী ও সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা দিতে এসেছি। সহায়তা নিয়ে কাজ করলে চট্টগ্রামে সংগঠনের লাভ হবে।’

‘সম্মেলন যদি না হয় তাহলে যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন হওয়ার সুযোগ থাকে না। চট্টগ্রামে বহু নেতা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো, কিন্তু আপনাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা বা নিষ্ক্রিয়তার কারণে মূল্যায়ন হচ্ছে না। প্রতি তিন বছর পর পর সম্মেলন হলে যোগ্য নেতৃত্ব চলে আসবে।’— যোগ করেন হানিফ। 
 
মাহতাব-নাছিরের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনে সবকটি আসনে ভূমিধ্বস জয়, চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপ নির্বাচনেও জয়, সম্প্রতি চসিক নির্বাচনেও কাউন্সিলর ও মেয়র পদে জয় ছিনিয়ে এনেছে নগর আওয়ামী লীগ। এরপরও সাংগঠনিক দুর্বলতা দেখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রয়াত মহিউদ্দীন চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘চট্টগ্রামে রাজনীতির একটি ইতিহাস আছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী আন্দোলন করে সারাদেশ অচল করে দিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী দেখিয়েছিলেন আন্দোলন কিভাবে করতে হয় ও ন্যায্য দাবি কিভাবে আদায় করতে হয়। চট্টগ্রামের আন্দোলন সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। যার কারণে চট্টগ্রামে সাংগঠনিক দুর্বলতা আসাটা দুঃখজনক। আমরা চাই, তৃণমূল থেকে সাংগঠনিক কোথায় কি দুর্বলতা আছে- সেটা দূর করে কিভাবে সম্মেলন করা যায়, কোন সমস্যা আছে, সেটা এখানে সমাধান করতে চাই। সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর জন্য সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করবেন।’

রোববার সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট সাংসদদের উপস্থিতিতে ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রাম-৪,৫,৮,৯, ১১ ও ১৩ সংসদীয় আসনের সাংগঠনিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয় সভায়। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রমুখ।  ....

যদিও গত ১৭ জুন থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে ২০ ও ২১ জুন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দুদিনব্যাপী কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, নগর আওয়ামী লীগ দলকে গতিশীল রেখেছে, ভয়কে জয় করেছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী মেয়াদোর্ত্তীণ তৃণমূল স্তরের কমিটিগুলো পুনর্গঠিত করে নগর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলেই নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের মধ্যে প্রথম শর্ত দলকে সুসংগঠিত করা। বৈরিতা বা আত্মঘাতী সমালোচনা প্রতিপক্ষকে ইন্ধন দেবে।  

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়